Education

পুজোর দিনে হাতেখড়ি, স্কুলে ফিরছে প্রিয়াঙ্কারা

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৫১
Share:

চলছে হাতেখড়ির অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার। ছবি: পাপন চৌধুরী

ওরা স্কুল ছেড়েছিল এক বছর বা তারও আগে। এমনই ৭ থেকে ১১ বছরের ৩৩ জনকে খুঁজে এনে বৃহস্পতিবার, সরস্বতী পুজোর দিন ফের হাতেখড়ি দেওয়ালেন আসানসোলের শীতলা গ্রামের সুনীল বাউড়ি। সঙ্গে থাকল আসানসোলের একটি সামাজিক সংগঠন।

Advertisement

সত্তোরর্ধ্ব, ইস্কোর প্রাক্তন ঠিকাকর্মী সুনীলবাবু বলেন, ‘‘স্কুলছুটদের খুঁজে শিক্ষার আঙিনায় তাদের ফেরানোটাই আমার অবসর-যাপন।’’ কিন্তু সে কাজ একা করা সম্ভব হচ্ছিল না বলে বছরখানেক আগে যোগাযোগ করেন ওই সংগঠনের কর্ণধার সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।

এর পরে গত এক বছরে শীতলা, মহিষামুড়া-সহ নানা এলাকায় শুরু হয় স্কুলছুটদের খোঁজ। খোঁজ মেলে শুকতারা বাউড়ি, অভিজিৎ রুইদাস, প্রিয়াঙ্কা বাউড়ির মতো খুদের। কিন্তু কেন এরা স্কুল ছেড়েছিল? সুনীলবাবুদের অভিজ্ঞতা, প্রথমত, শিশুদের বাবা-মায়েদের বেশির ভাগই দিনমজুরি, পরিচারিকার কাজ করেন। পরিবারও বড়। ফলে, সংসারে আর্থিক সাশ্রয়ের জন্য বাচ্চাকে রোজগারে পাঠানোর প্রবণতা থাকে। দ্বিতীয়ত, দিনভর অভিভাবকেরা ঘরে না থাকায় বাড়ির কাজ শিশুরাই মূলত করে। তারা আদৌ স্কুলে যাচ্ছে কি না, সে দিকেও নজর থাকে না কারও।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের কাছে গেলে তাঁরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর বিষয়ে নিমরাজি ছিলেন বলে অভিজ্ঞতা সুনীলবাবুর। গত এক বছর ধরে শিক্ষার গুরুত্ব, ছেলেমেয়েদের ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’-এর কথা বলে অভিভাবকদের বোঝানো হয়। সুমিতবাবু জানান, সংগঠনের সবাই মিলে এক বছর ধরে শিশুদের সপ্তাহে তিন দিন পড়ানো, আঁকা ও আবৃত্তি শেখান। পাশাপাশি, চলে অভিভাবকদের বোঝানোর কাজও। নতুন শিক্ষাবর্ষে ওই খুদেদের শিক্ষার সরঞ্জাম দেওয়া এবং স্কুলে ভর্তি করানো হবে বলে জানানো হয়েছে। ছেলেমেয়েদের নিয়মিত পড়াশোনা করতে দেখে অভিভাবকেরাও বুঝতে পারেন, ‘যা হচ্ছে তা ভালই’।

গ্রামের বিআর অম্বেডকরের মূর্তির কাছে ছেলেমেয়েদের হাতেখড়ি দিতে দেখে বিনোদ রুইদাসের মতো অভিভাবকেরা এ দিন বলেন, ‘‘ভালই তো, দাদা-দিদিরা দায়িত্ব নিয়েছেন। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা শিখে পরিবারের পাশে দাঁড়াবে। এখন না হয় রোজগার না-ই করল।’’ ফের ক্লাসে যেতে পারবে ভেবে খুশি প্রিয়াঙ্কা, অভিজিতেরাও।

এ দিন এমন উদ্যোগের পাশে থাকার কথা জানান প্রধান শিক্ষিকা তথা সাহিত্যিক নিবেদিতা আচার্য, আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস, আইনজীবী অমিতাভ মুখোপাধ্যায়েরাও। জেলা স্কুল পরিদর্শক (পশ্চিম বর্ধমান) অজয় পাল বলেন, ‘‘স্কুলছুটেরা পড়তে এলে স্কুলে ভর্তি নিতেই হয়। স্কুলছুট শিশু, কিশোরদের জন্য নানা সরকারি প্রকল্পও রয়েছে। এ দিনের কাজটি সত্যিই অভিনন্দন যোগ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন