হাই মাদ্রাসা

মামলায় ৩৯ নম্বর বেড়ে সেরা নাজরিন

প্রায় প্রতিদিনই শিরোনামে থাকে কালিয়াচক। কোনও দিন খুন-জখম, গুলি বোমার লড়াই, কোনও দিন বেআইনি আফিমের কারবার বা উদ্ধার হওয়া জালনোট।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৩
Share:

শেখ নাজরিন

প্রায় প্রতিদিনই শিরোনামে থাকে কালিয়াচক। কোনও দিন খুন-জখম, গুলি বোমার লড়াই, কোনও দিন বেআইনি আফিমের কারবার বা উদ্ধার হওয়া জালনোট। কিন্ত সেই ছবিই রাতারাতি বদলে দিল শেখ নাজরিন। কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে ৩৯ নম্বর বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের হাই মাদ্রাসা পরীক্ষার মেধা তালিকায় প্রথম স্থানে চলে এসেছে কালিয়াচকের সুজাপুরের এই মেয়ে।

Advertisement

২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের হাই মাদ্রাসা পরীক্ষার ফলাফলের ১০০ জনের যে মেধাতালিকা প্রকাশিত হয়েছিল তাতে ৭৩৮ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলার আমিরাবাদ হাই মাদ্রাসার ছাত্র মোবারক হোসেন। আর শেখ নাজরিন ৭০৯ নম্বর পেয়ে দ্বাদশ স্থান পেয়েছিল। মার্কশিট হাতে পাওয়ার পরে বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, ভৌত বিজ্ঞান, ইতিহাস ও ইসলাম পরিচয় বিষয়ে আশানুরূপ নম্বর না মেলায় বোর্ডের কাছে খাতা পুনর্মূল্যায়নের আর্জি জানায় নাজরিন ও তার পরিবার । কিন্তু সেখানেও নম্বর না বাড়ায় তথ্য জানার অধিকার আইনে খাতা দেখতে চেয়ে চিঠি পাঠায়। তখন জানতে পারেন, খাতা ‘রি-চেক’ করতে গিয়ে ৩৯ নম্বর বাদ দেওয়া হয়েছে। এরপরেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে নাজরিনের পরিবার।

নাজরিনের আইনজীবী ওলি আহমেদ মণ্ডল বলেন,‘‘গত ২৮ নভেম্বর বিচারপতি শাহিদুল্লা মুন্সি নির্দেশ দেন, রি-চেক করার নামে নম্বর কাটা যাবে না। আর তাতেই তাঁর ৩৯ নম্বর বেড়ে প্রাপ্ত নম্বর হয়েছে ৭৪৮, যা ২০১৫ সালের মাদ্রাসা বোর্ডের প্রথম স্থানাধিকারীর চেয়েও ১০ নম্বর বেশি।’’

Advertisement

নাজরিনের বাবা জামিরঘাটা গন্ধর্ব মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষক শেখ আহমাদুল্লা বলেন, ‘‘স্ক্রুটিনিতে নম্বর না বাড়ায় বাধ্য হয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে মেয়ের পরীক্ষার খাতা দেখতে চাই, আর তাতেই পরিষ্কার চিত্র উঠে আসে। এরপরেই আমরা পর্ষদের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করি।’’

এই খবর জানার পরেই এখন খুশির হাওয়া বইছে সুজাপুরের প্রত্যন্ত চাষাপাড়া গ্রামে। বাসিন্দাদের কথায়, নাজরিনের অভাবনীয় সাফল্য কিছুটা হলেও কালিয়াচকের বদনামের ক্ষতে প্রলেপ দিল। নাজরিনের মা-বাবার দাবি, মেধা তালিকার শীর্ষস্থানে থাকা প্রথম ১০ জনকে মুখ্যমন্ত্রী যেমন সম্মানিত করেছেন, ঠিক একইভাবে যেন তাঁদের মেয়েকেও সম্মান জানানো হয়। আর সুজাপুর নয়মৌজা হাই মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্রী নাজরিন বলেন, “সুবিচার পাওয়ার জন্য মামলা করেছিলাম। এখন দ্রুত মার্কশিট হাতে পেতে চাই।”

মাদ্রাসা পর্ষদ সভাপতি ফজলে রাব্বি জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ এখনও হাতে পাননি। নির্দেশ পেলেই নাজরিনকে অতিরিক্ত নম্বর যোগ করে নতুন মার্কশিট দেবেন। তাঁর কথায়, ‘‘নাজরিনের ১৮ নম্বর বেড়েছে ‘ইসলামের পরিচয়’ বিষয়ে। ওই খাতা দেখার দায়িত্বে থাকা মালদহের প্রধান পরীক্ষককে খাতা দেখার তালিকা থেকে বাতিল করা হয়েছে। মালদহের ১৫ জন পরীক্ষককে বাতিল করা হয়েছে।’’ হাইকোর্টের রায়ের পর মালদহের প্রধান পরীক্ষকদেরও সতর্ক করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন