West Bengal News

শাসকের অন্দরের রেষারেষিই কারণ, তদন্তে ইঙ্গিত তেমনই, জয়নগর কাণ্ডে ধৃত ১১

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার হামলায় নিহত হন বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের গাড়ির চালক সেলিম খান ওরফে বাবু, স্থানীয় তৃণমূল নেতা সারফুদ্দিন এবং তৃণমূল কর্মী আমিন আলি সর্দার। বৃহস্পতিবার রাতেই ঘটনাস্থলে জেলা পুলিশের পাশাপাশি যান সিআইডি আধিকারিকরা। সিআইডি সূত্রে খবর, তাঁরা এই তিন খুনের তদন্তভার নিতে চলেছেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ১০:১০
Share:

এখানেই চলে গুলি ও বোামাবাজি। ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র

জয়নগরে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়কের গাড়িতে গুলি বোমা নিয়ে হামলার ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে সাজামুল নস্কর, রাজা, মুন্না এবং হাম্পা। অন্যদিকে ঘটনার তদন্তভার নিতে চলেছে সিআইডি

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের বাড়ি জয়নগর, মথুরাপুর ও মন্দিরবাজার এলাকায়। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার পর থেকেই এলাকায় তল্লাশি অভিযান শুরু করে পুলিশ। পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে এদের পুলিশ গ্রেফতার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার নেপথ্যে কারা রয়েছে, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার হামলায় নিহত হন বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের গাড়ির চালক সেলিম খান ওরফে বাবু, স্থানীয় তৃণমূল নেতা সারফুদ্দিন এবং তৃণমূল কর্মী আমিন আলি সর্দার। বৃহস্পতিবার রাতেই ঘটনাস্থলে জেলা পুলিশের পাশাপাশি যান সিআইডি আধিকারিকরা। সিআইডি সূত্রে খবর, তাঁরা এই তিন খুনের তদন্তভার নিতে চলেছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: জয়নগরে তৃণমূল বিধায়কের গাড়িতে গুলি, বোমাবৃষ্টি, বিধায়ক বাঁচলেও নিহত ৩

পুলি‌শ সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তের পর তদন্তকারীরা দু’টি সম্ভাবনাকে মাথায় রেখেই এগোচ্ছেন। প্রথম সম্ভাবনা, বিধায়কই টার্গেট ছিলেন। কিন্তু অন্য দিনের মতো বৃহস্পতিবার রাতে পেট্রল পাম্পের উল্টো দিকের দোকানে চা খেতে না যাওয়ায় বরাত জোরে বেঁচে যান তিনি। বিধায়ক নিজেও দাবি করেছেন যে, তিনিই টার্গেট ছিলেন।

দ্বিতীয় সম্ভাবনা, বিধায়ক একা নন, টার্গেট ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্লক স্তরের নেতা সারফুদ্দিনও। আর এই দ্বিতীয় সম্ভাবনাকে সামনে রেখে তদন্ত এগোতেই সামনে চলে এসেছে অন্য তথ্য।

আরও পড়ুন: ‘রথযাত্রা’য় কোনও ধর্মীয় কর্মসূচি নেই, প্রশাসনকে আশ্বাস বিজেপির

পুলিশ সূত্রে খবর, সারফুদ্দিনের অপরাধের ইতিহাস আছে। গত বছর খোকন নামে এক তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনাতেও উঠে এসেছিল সারফুদ্দিনের নাম। অন্যতম মূল অভিযুক্ত ছিলেন তৃণমূলের জয়হিন্দ বাহিনীর ব্লক সভাপতি সারফুদ্দিন।

স্থানীয়দের দাবি, খোকন ছিলেন ওই এলাকার আরও এক দাপুটে তৃণমূল নেতা গৌর সরকার ঘনিষ্ঠ। জেলার তৃণমূল নেতা এবং পূর্ব ক্যানিংয়ের বিধায়ক শৌকত মোল্লা এই হামলার ঘটনায় বিরোধী রাজনৈতিক দল(সিপিএম, এসএউসি, বিজেপি)-কে দায়ী করলেও, এলাকার বাসিন্দারা ইঙ্গিত দিয়েছেন অন্য এক সমীকরণের।

স্থানীয় সূত্রে খবর, এক সময়ের কংগ্রেস নেতা গৌর সরকারের হাত ধরেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি বিশ্বনাথ দাসের। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে জয়নগরের ওই বিধানসভা সংরক্ষিত হওয়ায় টিকিট পান বিশ্বনাথ। বিধায়ক হওয়ার পর গৌর এবং বিশ্বনাথের হৃদ্যতায় ভাটা পড়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা শত্রুতার দিকেও এগোয়।

গৌরের ঘনিষ্ঠ খোকনের খুনের পেছনেও স্থানীয়রা দুই নেতার রেষারেষিকেই সন্দেহ করেছিলেন। বৃহস্পতিবারের ঘটনা তার পাল্টা জবাব, এমনটাই ধারণা স্থানীয়দের একাংশের। বিধায়ক নিজে যদিও গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে পুলিশ কোনও সম্ভাবনাকেই উড়িয়ে দিচ্ছে না। এক তদন্তকারী বলেন,“উল্লেখযোগ্য কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। স্থানীয় স্তরেই এই হামলার পরিকল্পনা হয়েছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি।” স্থানীয়রা সম্প্রতি দক্ষিণ বারাসত কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “গত কয়েকমাস ধরেই শাসক দলের মধ্যে চূড়ান্ত টানাপড়েন চলছে।”গৌর সরকারকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,“যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। কিন্ত কারও কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা কিছু ছিল কী না তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement