আসন খালি তো লেনদেন কেন কলেজে

তা হলে ভর্তিকে কেন্দ্র করে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে কী করে? তার জন্য ‘ইচ্ছাকৃত আতঙ্ক’ তৈরির অপচেষ্টাকে দায়ী করছেন বিভিন্ন কলেজের প্রধানে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০৪:২৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

হাজার চল্লিশ আসন ফাঁকা থাকায় কলেজগুলি আবার ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি আদৌ বদলাবে বলে মনে করছেন না শিক্ষা শিবিরের অনেকেই। অনেকের প্রশ্ন, প্রচুর আসন যদি খালিই পড়ে থাকে, তা হলে ভর্তিকে কেন্দ্র করে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে কী করে? তার জন্য ‘ইচ্ছাকৃত আতঙ্ক’ তৈরির অপচেষ্টাকে দায়ী করছেন বিভিন্ন কলেজের প্রধানেরা। এবং তা মেনেও নিচ্ছেন অনেক ‘ভর্তি-দাদাদিদি’!

Advertisement

বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি, কলেজের প্রধান এবং শিক্ষা শিবিরের লোকজন জানাচ্ছেন, আসন শূন্য থাকলেও ভর্তিকে কেন্দ্র করে গোলমাল বাধে প্রধানত তিনটি কারণে। প্রথমত, কলেজে আসন ফাঁকা থাকলেও ভর্তি-দাদাদের তরফে ইচ্ছাকৃত আতঙ্ক তৈরির সংগঠিত উদ্যোগ। দ্বিতীয়ত, বিশেষ কলেজ ছাড়া অন্যত্র ভর্তি না-হওয়ার মনোভাব। তৃতীয়ত, সংরক্ষণ।

ভর্তি-আতঙ্ক। শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি সূত্রের ব্যাখ্যা, ভর্তি-আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য এলাকা ধরে ধরে বিশেষ দল গড়ে তোলা হয়। অর্থাৎ কারা কোন কলেজে কী বিষয়ে ভর্তি হতে চান, নিজেদের নেটওয়ার্ক লাগিয়ে তার তালিকা তৈরি করেন দাদাদিদিরা। তার পরে ভর্তি হতে চাওয়া সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীদের জানিয়ে দেওয়া হয়, কলেজের আসন-সংখ্যা সীমিত। ‘ভিতর থেকে’ ভর্তি হতে হবে। বাইরে থেকে হতে গেলে সম্ভাবনা খুবই কম। আর ওই ‘ভিতর থেকে’ ভর্তির পাতা ফাঁদেই পা দেন অনেক পড়ুয়া। ভর্তি নিশ্চিত করতে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ টাকা দিতেও রাজি হয়ে যান। বাকিটা তোলা থাকে কাউন্সেলিং পর্বের জন্য।

Advertisement

কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে কাউন্সেলিংয়ে আসা পড়ুয়াদের সীমিত আসনের কথা বলে আতঙ্ক ছড়িয়ে টাকা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ। এক টিএমসিপি সদস্যের কথায়, ‘‘এর জন্য নেটওয়ার্কের প্রয়োজন নেই। দাপট থাকলেই হয়।’’ কিন্তু এখন তো ভর্তির আগে কলেজে কাউন্সেলিং বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। তা হলে কাউন্সেলিংয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর সুযোগ কোথায়? ওই ছাত্রনেতার কথায়, ‘‘ভর্তি হওয়ার অনিশ্চয়তা যত দিন থাকবে, তত দিন পড়ুয়ারা ভর্তি হতে আকুল হবেন। আর তত দিন কাজ করেই চলবে আমাদের নেটওয়ার্ক!’’ ফলে এত কিছু করেও আর্থিক দুর্নীতির চক্র যে সম্পূর্ণ ভাঙা যাবে না, বুক বাজিয়ে সেটা জানিয়ে দিচ্ছেন ওই দাদাদিদিরা।

পছন্দের কলেজ। শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, ভাল কলেজ আর খারাপ কলেজ নিয়ে অনেক ছাত্রছাত্রীর মধ্যেই একটা বদ্ধমূল ধারণা থাকে। কোনও বিশেষ কলেজে কোনও বিশেষ বিষয়ে ভাল ভাবে পঠনপাঠন হয় মনে করেই সেটাকে পছন্দের কলেজ হিসেবে আঁকড়ে ধরে সেখানে ভর্তি হতে ছোটেন পড়ুয়ারা। যেন সেখানে পড়তে না-পারলে জীবনটাই ব্যর্থ! অন্যত্র খালি থেকে যায় আসন।

সংরক্ষণ। আসন শূন্য থেকে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে সংরক্ষণের কথাও তুলছেন অনেক অধ্যক্ষ। পরিসংখ্যানও তা সমর্থন করছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলিতে এ বার ৪০ হাজার আসন খালি রয়েছে। তার মধ্যে ৩০ হাজারেরও বেশি আসন সংরক্ষিত! যে-সব সম্প্রদায়ের জন্য এই সংরক্ষণ, তাদের মধ্যে অত প্রার্থীই নেই। সমস্যা মেটাতে তাই ওই আসনগুলিকে অসংরক্ষিত ঘোষণা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিবেকানন্দ কলেজের অধ্যক্ষা সোমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কিছু বিষয়ে অসংরক্ষিত আসনও ফাঁকা রয়েছে। তবে সংরক্ষিত আসনের অধিকাংশই ফাঁকা। বিশেষ করে ২০১৫ সালে ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি তালিকার পড়ুয়াদেরও সংরক্ষণের আওতায় আনায় প্রায় ৪৮ শতাংশই সংরক্ষিত থাকছে। তাই এত আসন ফাঁকা।’’

অধ্যক্ষ-অধ্যক্ষা থেকে শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, স্নাতকে যে-পরিমাণ আসন রয়েছে, প্রার্থীদের সেখানে ভর্তি হতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এই সব কারণে, বিশেষত ‘ইচ্ছাকৃত আতঙ্ক’ তৈরির দরুন সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন