অঙ্গীকার: জেলা পরিষদের নতুন বোর্ডের সদস্যদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। শুক্রবার সিউড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।
শপথ নিলেন ৪২ জন। প্রত্যেকেই তৃণমূলের। শুক্রবার বেশ সাড়ম্বরেই বিরোধী-শূন্য বীরভূম জেলা পরিষদের বোর্ড গঠন করে ফেলল শাসকদল। এ দিন বেলা সওয়া ২টো নাগাদ জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু শপথ পাঠ করালেন সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী-সহ জেলা পরিষদের ৪২ জন নব নির্বাচিত সদস্যকে। জেলা পরিষদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এই প্রথম এক জনও বিরোধী সদস্য নেই।
জেলা পরিষদে যে বিরোধী-শূন্য বোর্ড গঠিত হতে চলেছে, তা ঠিক হয়ে গিয়েছিল মনোনয়ন পর্বেই। রাজনগর আসনে বিজেপির এক প্রার্থী কেবল মনোনয়নপত্র জমা দিতে পেরেছিলেন। বাকি ৪১ আসনে বিরোধীদের একটিও মনোনয়ন জমা পড়েনি। ওই বিজেপি প্রার্থীও পরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে তৃণমূলে যোগ দেন। তখনই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, বীরভূমের রাজনৈতিক ইতিহাসে রেকর্ড গড়ে জেলা পরিষদ পুরোপুরি বিরোধীহীন রাখতে সমর্থ হয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, মনোনয়নে বাধা দিয়ে সন্ত্রাস করে ভোটই করতে দেয়নি শাসকদল। অনুব্রতের বক্তব্য ছিল, উন্নয়নের চোটে বিরোধীরা কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি।
বোর্ড গঠন উপলক্ষে ফুল, বেলুন, আলোয় সাজানো হয়েছিল জেলা পরিষদ ভবন। শুক্রবার বেলা ১২টার পর থেকেই নির্বাচিত প্রার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকা শোভাযাত্রা করে থেকে আসতে শুরু করেন তৃণমূল নেতারা। ছিল মহিলা ঢাকির দল নানা বাজনা। দ্বিতীয় বারের জন্য সভাধিপতি নির্বাচিত হলেন বিকাশবাবু। সঙ্গে অনেক নতুন মুখও। শপথ গ্রহণের পরে জেলা পরিষদের মাঠে বিশাল মঞ্চ বেঁধে উৎসবের আয়োজন। শপথগ্রহণে হাজির না থাকলেও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল, দুই মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রনাথ সিংহ, দলীয় বিধায়কেরা, প্রতিটি ব্লক সভপতি, অঞ্চল সভাপতি, পুরসভার প্রধান ও কাউন্সিলর-সহ সব স্তরের নেতা-কর্মী।
অনুব্রত মঞ্চ থেকে নাম না করে আক্রমণ শানালেন বিরোধীদের। বেঁধে দিলেন লোকসভা নির্বাচনে দলের জেতার লক্ষ্যও। বললেন, ‘‘সামনে লোকসভা নির্বাচন। আপনারা সবাই আমার সঙ্গে একমত হবেন তো। আড়াই থেকে তিন লক্ষ ভোটে জিততে হবে বোলপুর আসন। বীরভূম লোকসভা আসনে জিততে হবে দেড় থেকে দু’লক্ষ ভোটে। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে।’’ তাঁর সংযোজন, কিছু জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। সেই জমি লাঙল দিয়ে চষাতে মোটা মোটা পাচন দিয়ে গরু ডাকাতে হয়। পাচনের বারি দিয়ে জমিকে উর্বর করতে হয়। কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘রেডি হন। পুজোর পর থেকেই সেটা শুরু হবে। কোনও অনাবাদি জমি ফেলে রাখব না।’’
অনুব্রতর লক্ষ্য যে বিরোধীরা, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি। বিজেপি-র জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পাচনের জবাব আছে। এত অহঙ্কার কিসের! বিজেপিও তৈরি।’’ তাঁর আরও দাবি, মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনই হতে দেয়নি শাসকদল। তাই জেলা পরিষদ বিরোধী-শূন্য বলা অর্থহীন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলেন, ‘‘এমন বিরোধী-শূন্য বোর্ডের অর্থ কী? এখন আবার মানুষকে শাসাচ্ছেন। ভয় দেখাচ্ছেন। ওরা কি মানুষকে খুব বোকা ভাবছেন। লোকসভা নির্বাচনে এর সমুচিত জবাব পাবেন।’’