প্রতীকী ছবি।
কাপড়ের ফাঁক থেকে দু’টি কচি পা ছটফট করছে, নজর পড়েছিল প্রৌঢ়ের। ঘাট থেকে ভাগীরথীতে নেমে প্লাস্টিকে বাঁধা কাপড়ের পুঁটুলি টেনে আনেন তিনি। দেখা যায়, পুঁটুলিতে রয়েছে এক সদ্যোজাত শিশুকন্যা। শনিবার সকালে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় শিশুটিকে জলে ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে পরিবারের পাঁচ জনকে আটক করেন আশপাশের লোকজন।
পুলিশের দাবি, জেরায় শিশুটির বাবা, মা, দাদু, দিদিমা ও পিসি তাদের জানিয়েছেন, ঘরে অথার্ভাব। তাই নানা শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্মানো ছ’দিনের শিশুটিকে জলে ভাসিয়ে দেন তাঁরা। জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার ধারায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা করেছে পুলিশ।
কাটোয়া হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রবিবার বিকেলে শিশুটির জন্ম দেন কাটোয়ার সুদপুর পঞ্চায়েতের মোস্তাফাপুরের বাসিন্দা পারমিতা হালদার। সদ্যোজাতের ঠোঁটে সমস্যা রয়েছে। দৃষ্টি আসেনি চোখেও। ছ’দিন হাসপাতালে রাখার পরে তাকে এ দিন সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, শিশুটির পরিবারকে জানানো হয়, ঠোঁটজনিত সমস্যাটি বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে গেলে বিনামূল্যে ঠিক করে দেওয়া হবে। তবে চোখের জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার দরকার রয়েছে।
সকাল ১০টা নাগাদ কাটোয়ার হরিসভাপাড়ার ঘাটে মাছ ধরছিলেন বছর পঞ্চাশের রতন শেখ। তাঁর দাবি, আচমকা নজরে পড়ে, কয়েক জন কাপড়ে মোড়া কিছু একটি নদীতে ছুড়ে দিলেন। ভাল ভাবে খেয়াল করতেই কাপড়ের ভিতর থেকে কচি পা দেখতে পান। তাঁর কথায়, ‘‘সঙ্গে-সঙ্গে ঘাটের নীচের সিঁড়িতে নেমে কাপড়ে মোড়া শিশুটিকে তুলে আনি।’’ চিৎকার-চেঁচামেচিতে লোক জড়ো হয়। ঘাট থেকেই তিন মহিলা ও দু’জন পুরুষকে আটক করেন এলাকাবাসী। পুলিশ শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করায়।
পারমিতাদেবী ও রংমিস্ত্রি শান্ত হালদারের দ্বিতীয় সন্তান এই শিশু। দম্পতির একটি মেয়ে রয়েছে। পারমিতাদেবীর বক্তব্য, ‘‘মেয়ের এত খুঁত। ওকে রেখে কী করব?’’ তাঁর শাশুড়ি সরস্বতীদেবী বলেন, ‘‘ওর চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই জলে ফেলেছি।’’ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় জানান, শিশুটির বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত প্রশাসন নেবে। ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি’কে জানানো হয়েছে।