৫৫৪তম বৈঠক জুড়ে ‘মায়ের ঘর’! 

আক্ষরিক সংজ্ঞাটা আগে ঠিক করতে হবে। সেই সংজ্ঞা অনুযায়ী তৈরি হবে ‘বিল্ডিং রুলস’! এত দিন অগ্নি-নিরাপত্তা, আইনসিদ্ধ নির্মাণ-সহ একাধিক বিষয় বিল্ডিং আইনে পরিবর্তন বা সংযোজন হয়েছে। কিন্তু এ তো একদম নতুন পরিস্থিতি! এর সঙ্গে যে একটা সামাজিক ঘটনা জড়িত!

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০১:৫১
Share:

স্নেহ: শহরের একটি শপিং মলে। ছবি: সুমন বল্লভ

আক্ষরিক সংজ্ঞাটা আগে ঠিক করতে হবে। সেই সংজ্ঞা অনুযায়ী তৈরি হবে ‘বিল্ডিং রুলস’! এত দিন অগ্নি-নিরাপত্তা, আইনসিদ্ধ নির্মাণ-সহ একাধিক বিষয় বিল্ডিং আইনে পরিবর্তন বা সংযোজন হয়েছে। কিন্তু এ তো একদম নতুন পরিস্থিতি! এর সঙ্গে যে একটা সামাজিক ঘটনা জড়িত!

Advertisement

কিছু দিন আগের একটি ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল শহর। সাউথ সিটি মলে কেনাকাটার সময়ে সন্তানকে স্তন্যপান করাতে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের আপত্তির সামনে পড়েছিলেন এক মা। পরে তিনি মলের ওয়েবসাইটে প্রশ্ন তোলেন, কেন স্তন্যপান করানো যাবে না? এ নিয়ে বহু তর্ক-বিতর্কও হয়। এর পরে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ঘোষণা করেন, প্রতিটি শপিং মলে ‘বেবি কেয়ার রুম’ রাখতে হবে।

কিন্তু সেই ‘পার্সোনাল বেবি কেয়ার রুম’-এর সংজ্ঞাটা কী হবে, তা নিয়ে ধাঁধায় পড়ে গিয়েছিলেন মিউনিসিপ্যাল বিল্ডিং কমিটির সদস্যেরা (এমবিসি)। সত্যি বলতে কী, এ রকম পরিস্থিতির সামনে আগে তো তাঁরা পড়েননি। তবে তাঁরা বুঝতে পারছিলেন, কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং রুলস, ২০০৯-কে শুধুমাত্রই নিছক কয়েকটি আইনি শব্দবন্ধে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না, এমন একটি বিষয় যাতে স্বীকৃতি পায়, তারও জায়গা রাখতে হবে।

Advertisement

সেই মতোই বেশ কিছু দিন আগে কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং আইনে ‘পার্সোনাল বেবি কেয়ার রুম’-এর সংজ্ঞা সংযোজনের জন্য বৈঠকে বসেছিলেন এমবিসি সদস্যেরা।

শেষ পর্যন্ত ৫৫৪তম এমবিসি-র বৈঠকে সাব্যস্ত হয় ‘পার্সোনাল বেবি কেয়ার রুম’-এর সংজ্ঞা। সেখানে বলা হচ্ছে—‘দ্য রুম ইজ এক্সক্লুসিভলি মেন্ট ফর নার্সিং মাদার টু ব্রেস্ট ফিড হার বেবি’। বাণিজ্যিক হোক বা যে কোনও ভবনই হোক, সব জায়গাতেই এই ঘরের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এর ন্যূনতম মাপ হতে হবে ১.৮০ মিটার বাই ২.৪০ মিটার।

তবে এমবিসি-র সদস্যেরা এ-ও বুঝতে পারছিলেন, ঘরের নিজস্ব আবহের পাশাপাশি নিরাপত্তাও প্রয়োজন। তাই বিল্ডিং আইনের প্রস্তাবিত সংযোজনে বলা হয়, ঘরটি এমন জায়গায় তৈরি করতে হবে যেখানে যথেষ্ট ‘প্রাইভেসি’ রয়েছে এবং যেখানে মায়েরা সহজেই যেতে পারেন। ভবনের কোথায় এই ঘর রয়েছে, তা নিয়ে মায়েরা যাতে বিভ্রান্ত না হন, তাই প্রতিটি ভবন কর্তৃপক্ষকে স্পষ্ট দিক নির্দেশিকা দিতে হবে।

এতগুলো নির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ করে দাঁড়ি পড়ে ৫৫৪তম এমবিসি বৈঠকের ১৯২/১৮-১৯ ‘আইটেম নম্বরে’! যে ‘আইটেম নম্বর’কে এক দিক থেকে ঐতিহাসিক মনে করছেন সদস্যেরা। এমবিসি-র এক সদস্যের কথায়, ‘‘কলকাতা শহরে এই বিষয় নিয়ে বিল্ডিং রুলসের প্রস্তাব এই প্রথম। ৫৫৪তম বৈঠক জুড়ে এটাই ছিল আলোচ্য বিষয়। ফলে এটা গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি।’’ আর এমবিসি-র চেয়ারম্যান তথা পুর কমিশনার খলিল আহমেদ বলছেন, ‘‘মা এবং তাঁর সন্তানের জন্য এটা উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।’’

পুরসভার তথ্য বলছে, সম্প্রতি মেয়র পরিষদের বৈঠকে ‘পার্সোনাল বেবি কেয়ার রুম’ নিয়ে এমবিসি-র এই প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে। এর পরে মাসিক অধিবেশনে পাশ-সহ রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে যা দেরি। এখনও পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ যা, তাতে অদূর ভবিষ্যতেই স্তন্যপানের দাবির কাছে মাথা ঝোঁকাতে চলেছে কলকাতা পুরসভার আভিধানিক বিল্ডিং রুলস! নারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মী তথা অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষ বলেন, ‘‘সন্তানকে স্তন্যপান করানো এক জন মায়ের সামাজিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কারণ, তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বড় করে তুলছেন।’’

বেসরকারি মলের একটি ঘটনা ও তার পরবর্তী সময়ে সামাজিক-প্রশাসনিক মহলে সাড়া, যার ফলস্বরূপ বিল্ডিং রুলসে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের প্রস্তাব—এ সব কিছুর মধ্যে দিয়েই শহর আস্তে আস্তে সাবালক হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন অনেকে।

না হলে স্তন্যপানের দাবিতে শহরের বিল্ডিং রুলস পাল্টে যায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন