৩৫ বছর পর পালাবদল

মধ্যরাতে রওনা দিল তিনটে সুমো

ধুলিয়ানে আঁধার ছিল না।বাম-বিজেপি-র ছয় কাউন্সিলরকে দলে টেনে বোর্ড দখলের সেই পালা হয়েছিল দিনের আলোতেই। লুকোচুরি নয়, বরং ঘোর দুপুরে হা রেরেরে করেই বাম-কংগ্রেসের পুরসভার হিসেব বদলে দিয়েছিল তৃণমূল।গত সেপ্টেম্বরে, কান্দি দখলের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল সাত সকালেই।

Advertisement

বিমান হাজরা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৬ ০১:৫৪
Share:

নিজস্ব চিত্র

ধুলিয়ানে আঁধার ছিল না।

Advertisement

বাম-বিজেপি-র ছয় কাউন্সিলরকে দলে টেনে বোর্ড দখলের সেই পালা হয়েছিল দিনের আলোতেই। লুকোচুরি নয়, বরং ঘোর দুপুরে হা রেরেরে করেই বাম-কংগ্রেসের পুরসভার হিসেব বদলে দিয়েছিল তৃণমূল।

গত সেপ্টেম্বরে, কান্দি দখলের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল সাত সকালেই। বাম সমর্থিত নির্দল কাউন্সিলর দেবজ্যোতি রায়কে ছুটন্ত গাড়িতে ‘দুষ্কৃতীরা’ ছোঁ মেরে তুলে নিয়েছিল তাঁর স্কুলে যাওয়ার পথে, সাত সকালেই।

Advertisement

ছবিটা বদলে দিল জঙ্গিপুর। টানা ৩৫ বছর ধরে বামেদের দখলে থাকা, ২১ ওয়ার্ডের এই বাম গাঁটিতে শাসক দলের হানাটা আছড়ে পড়ল মধ্য যামে। সিঁধ কাটল তৃণমূল।

যে পুরসভায় তৃণমূল একটিও আসন পায়নি, সেই জঙ্গিপুর পুরসভার সিপিএমের প্রধান মোজাহারুল ইসলামের হাত ধরে পুরসভার এগারো কাউন্সিলর তিনটি টাটা সুমোয় বুধবার রাতেই রওনা হয়ে গিয়েছিলেন একুশের সভায় যোগ দিতে। সময়ে পৌঁছতে না পারায় তাঁরা মঞ্চে উঠতে পারেননি ঠিকই তবে তাঁরা ‘লেখাপড়া’টা সেরে নিয়েছেন তৃণমূল ভবনে। মোজাহারুলের সঙ্গে ওই তালিকায় রয়েছেন সিপিএমের টিকিটে জয়ী পাঁচ কাউন্সিলর, তিন কংগ্রেস কাউন্সিলর, আরএসপি এবং বিজেপি-র এক জন করে পুর প্রতিনিধি।

কানাঘুষোটা শোনা যাচ্ছিল— শহিদ দিবসে ‘দিদি’কে তাঁর ‘ছোট্ট’ শ্রদ্ধার্ঘ্যটা তুলে দিতে জঙ্গিপুর পুরসভাটাই ‘কিনে’ নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছিলেন জাকির হোসেন।

কোটিপতি বিড়ি মালিককে শাসক ঘনিষ্ঠ হতে দেখে বিরোধীরা প্রমাদ গুনেছিলেন, টিকিটটা এ বার জাকিরের বাঁধা। আর টিকিট পেলে, তাঁর যাবতীয় অর্থবল নিয়ে জাকির যে ঝাঁপাবেন তা নিয়ে সংশয় ছিল না স্থানীয় বাম-কংগ্রেস কারও। অতঃপর জয় এবং মন্ত্রী হওয়াও ছিল নিছক সময়ের অপেক্ষা।

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন।

জেলা সিপিএমের এক শীর্ষনেতা বলছেন, ‘‘নেত্রীকে সেই কৃতজ্ঞতাটুকই ফিরিয়ে দিলেন জাকির। এগারোটা কাউন্সিলরকে কেনার ক্ষমতা আর কার আছে বলুন!’’ যা শুনে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুচকি হেসেছেন, রা কাড়েননি। কিন্তু শুধু পুরপ্রধান নন, মোজাহারুল জোনাল সম্পাদকও। দলে তাত্ত্বিক হিসেবেও একটা কদর রয়েছে তাঁর। তিনিও? জেলা সিপিএমের এক নেতা ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘শুধু পুরপ্রধান কেন, দল বদল করেছেন যাঁরা তাঁদের মধ্যে এমন দু’জন রয়েছেন যাঁরা লোকাল কমিটির সম্পাদক।’’ কী বলছেন মোজাহারুল? দিনভর তিনি ‘নিখোঁজ’। বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ঝলক পাওয়া গিয়েছিল তাঁকে। বলছেন, ‘‘সব বলব, পরে।’’ তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি অশেষ ঘোষ রয়েছেন ওই এগারো জনের তত্ত্বাবধানে। তিনি বলছেন, ‘‘কলকাতার এক গোপন ডেরায় জঙ্গিপুরের ১১ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। শনিবার তৃণমূলে যোগ দেবেন।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য এ দিন মেনে নিয়েছেন, ‘‘গায়ের জোরে , ভয় দেখিয়ে পুরসভা দখলের চেষ্টা গণতন্ত্রের পক্ষে ভয়াবহ বার্তা দিচ্ছে।”

এখন প্রশ্ন, মোজাহারুলরা কি সত্যিই ভয় পেয়েছেন? দলত্যাগীদের এক জন স্পষ্টই জানিয়েছেন, ‘‘কোনও ভয়-ডর নয় দাদা, হাঁফিয়ে উঠেছিলাম। তাই দল ছেড়েছি।’’

জঙ্গিপুরের কংগ্রেসের সভাপতি মোহন মাহাতো বলেন, “মনে রাখবেন, জঙ্গিপুরে তৃণমূল একটিও আসনে জেতেনি। তা-ও দখল করে নিল টাকার জোরে!’’ কংগ্রেসের গড় মুর্শিদাবাদে ঘনঘন এসে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য আগেই শুনিয়ে গিয়েছিলেন— ‘‘কান্দির পরে বেলডাঙা তার পরে বহরমপুর!’’ তালিকায় জঙ্গিপুর তো ছিল না।

তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘এটা ফাউ, তালিকায় আরও আছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন