সুখবর! রাজ্য সরকারি কর্মীদের ২০১৯ থেকেই বেতন বৃদ্ধির ইঙ্গিত

প্রথম বছরে তা বাড়তে পারে ২২%। যদিও বেতন ও পেনশন একসঙ্গে ধরে রাজ্যের অর্থ দফতর প্রথম বছরে ১৬.৬% বাড়ানোর পরিসংখ্যান অর্থ কমিশনে জমা দিয়েছে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৮ ১১:৫৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য সুখবর!

Advertisement

২০১৯ থেকেই তাঁদের জন্য চালু হতে পারে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ। সদ্য রাজ্যে আসা পঞ্চদশ অর্থ কমিশনে জমা দেওয়া দাবিপত্রে তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছে রাজ্য সরকার। সেই দাবিপত্রের ৮০-৮১ পাতায় ৩.৪(৬) নম্বর অনুচ্ছেদে ২০১৯-’২০ থেকেই সরকারি কর্মীদের বর্ধিত বেতনের হিসেব পেশ করা হয়েছে। প্রথম বছরে তা বাড়তে পারে ২২%। যদিও বেতন ও পেনশন একসঙ্গে ধরে রাজ্যের অর্থ দফতর প্রথম বছরে ১৬.৬% বাড়ানোর পরিসংখ্যান অর্থ কমিশনে জমা দিয়েছে।

পেশ করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী আশার আলোটা আসছে একটু ঘুরপথে। নবান্নের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘আগামী ছ’বছরে রাজস্ব-ঘাটতির হিসেব পেশ করতে গিয়ে বেতন বাড়ানোর যে-চাপ রাজকোষে পড়বে, তা পঞ্চদশ অর্থ কমিশনকে জানানো হয়েছে মাত্র। বেতন বৃদ্ধি ঘোষণার দায়িত্ব ষষ্ঠ বেতন কমিশনের। সরকার তাতে নাক গলাবে না। কমিশনই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’’ রাজ্য বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার জানিয়ে দেন, তিনি এই বিষয়ে একটি কথাও বলবেন না।

Advertisement

অর্থ দফতর সূত্রের খবর, ২০১৫-র ২৭ নভেম্বর রাজ্যে ষষ্ঠ বেতন কমিশন গঠিত হয়েছিল। তার মেয়াদ চলতি বছরের ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রয়োজনে সেই মেয়াদ ফের বাড়ানো হতে পারে। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের কাছে বর্ধিত বেতন-পেনশনের হিসেব পেশের আগে তা বেতন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হয়েছে বলেই নবান্নের খবর।

রাজ্য সরকার এ বার অর্থ কমিশনকে জানিয়েছে, রাজস্ব-ঘাটতি কমাতে তারা বদ্ধপরিকর। কিন্তু ২০১৯-’২০ সালে রাজস্ব-ব্যয়ের ২০% শুধু ঋণের সুদ মেটাতেই চলে যাবে। এর উপরে চাপবে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ রূপায়ণের চাপ। যা রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতিকে আরও দুর্বল করে দেবে। ২০১৯-’২০ থেকে ২০২০-’২৫ পর্যন্ত বেতন-পেনশন খাতেই অতিরিক্ত ৮৫ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকার বাড়তি বোঝা চাপবে রাজ্যের ঘাড়ে। এ কথা জানিয়ে নবান্ন অর্থ কমিশনকে বলেছে, ‘রাজস্ব-ঘাটতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কমিশন যেন ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ রূপায়ণের চাপের বিষয়টি খেয়াল রাখে।’

পঞ্চদশ অর্থ কমিশনে পেশ করা তথ্যে নবান্ন জানিয়েছে, যদি বেতন কমিশনের সুপারিশ রূপায়ণ করা না-হয়, তা হলে ২০১৯-’২০ থেকে ২০২৪-’২৫ পর্যন্ত বেতন বাবদ খরচ হবে দু’লক্ষ ৫৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। আর সুপারিশ কার্যকর হলে ছ’বছরে সেই খরচ বেড়ে হবে তিন লক্ষ ৩৯ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। একই ভাবে পেনশন খাতেও খরচের ফারাক হবে। সব মিলিয়ে ছ’বছরে অতিরিক্ত ৮৫ হাজার ৪৫৭ কোটির বোঝার হিসেব করা হয়েছে। অর্থ দফতরের কর্তারা অবশ্য জানান, পেনশন খাতে খরচ কমানোর জন্যও বিশেষ কিছু ভাবনাচিন্তা রয়েছে। তবে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে ষষ্ঠ বেতন কমিশনে বেতন ও পেনশন একই হারে না-ও বাড়তে পারে বলে অর্থ দফতর থেকে ইঙ্গিত মিলেছে। অর্থ কমিশনে পেশ করা হিসেবে একই কথা জানিয়েছে নবান্ন।

এর আগে চতুর্দশ অর্থ কমিশনের কাছেও ষষ্ঠ বেতন কমিশনের বর্ধিত টাকা অনুদান হিসেবে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল রাজ্য। অর্থ কমিশন তা মানেনি। তাই এ বার সরাসরি কমিশনের কাছে রাজ্যের বেতন খাতের টাকা চাওয়া হয়নি। উল্টে ঘাটতির অঙ্ক কষার সময় অর্থ কমিশন যদি বেতনের কথা মাথায় রাখে, তা হলে রাজস্ব-ঘাটতি অনুদান বা অন্য কোনও বিশেষ অনুদান মিলতে পারে বলে আশা করছেন অর্থ দফতরের কর্তারা। যদিও প্রাক্তন অর্থসচিবদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, রাজ্যের বেতন নবান্নকেই জোগাড় করতে হবে। অর্থ কমিশনের কাছে সুরাহা আশা করার মানেই হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন