বাঁকুড়ায় বিপন্ন শিশু, ব্যান্ডেজ বাঁধায় বাদ গেল পা-ই

ডান পায়ের পাতা বাঁকা ছিল বলে চিকিৎসকেরা ১২ দিনের সদ্যোজাতের পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছিলেন। সেই ব্যান্ডেজ যখন খোলা হল, তখন শিশুটির পা পচে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পা-ই কেটে বাদ দিতে হল ওই শিশুর!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০৪:০১
Share:

অসহায়: মায়ের কোলে সেই শিশু। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

ডান পায়ের পাতা বাঁকা ছিল বলে চিকিৎসকেরা ১২ দিনের সদ্যোজাতের পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছিলেন। সেই ব্যান্ডেজ যখন খোলা হল, তখন শিশুটির পা পচে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পা-ই কেটে বাদ দিতে হল ওই শিশুর!

Advertisement

এই ঘটনায় বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন শিশুটির বাবা-মা শান্তিময় ও কৌশল্যা মণ্ডল। একই সঙ্গে তা উস্কে দিয়েছে রানিগঞ্জের অঙ্কুশ শীটের হাত বাদ যাওয়ার ঘটনাও। রানিগঞ্জের অঙ্কুশের ক্ষেত্রে অভিযোগের কাঠগড়ায় ছিল আসানসোল জেলা হাসপাতাল। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে নিউমোনিয়া আক্রান্ত একরত্তি অঙ্কুশের রক্ত পরীক্ষার জন্য ডান কনুইয়ের উপরে 'টুর্নিকেট' (রবারের ব্যান্ড) বেঁধেছিলেন আসানসোল হাসপাতালের নার্স। খুলতে ভুলে যান। বন্ধ হয়ে যায় রক্ত চলাচল। ৭২ ঘণ্টা পরে ব্যান্ড যখন খোলা হয়, তখন রক্ত জমাট বেঁধেছে। এসএসকেএম হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে বাদই দিতে হয় নীল হয়ে যাওয়া ডান হাত।

ছাতনার কেন্দ্রসায়র এলাকার মণ্ডল দম্পতি তাঁদের শিশুপুত্রের ডান পা বাদ যাওয়ার জন্য এমনই গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন। ৬ জানুয়ারি বাঁকুড়া মেডিক্যালে ছেলে হয় কৌশল্যার। জন্ম থেকেই সদ্যোজাতের ডান পায়ের পাতা বাঁকা ছিল। ওই মাসের ১০ তারিখ হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন কৌশল্যা। ১৮ জানুয়ারি তাঁরা শিশুটিকে নিয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালের আউটডোরে যান। এক চিকিৎসক পায়ে ব্যান্ডেজ করে দেন। সাত দিন পরে ওই ব্যান্ডেজ খোলার কথা ছিল। কিন্তু ব্যান্ডেজ বাঁধার পর থেকেই শিশুটি কান্নাকাটি শুরু করায় তাকে ফের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ২২ তারিখ। শান্তিময় বলেন, ‘‘আউটডোর বন্ধ থাকায় জরুরি বিভাগে দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাই।’’ ২৫ জানুয়ারি আউটডোরে ব্যান্ডেজ খুললে দেখা যায়, পায়ের চামড়ার সঙ্গে তা জুড়ে গিয়েছে। পর দিন হাসপাতাল জানায়, শিশুটিকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনও রাস্তা নেই। হাসপাতাল থেকেই গাড়ির ব্যবস্থা করে শিশুটিকে পাঠানো হয় এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে।

Advertisement

সেখানে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, অস্ত্রোপচার করে শিশুটির পা বাদ দিতে হবে। সেই মতো ৩১ জানুয়ারি শিশুটির ডান পা হাঁটু থেকে কেটে বাদ দেওয়া হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি শিশু নিয়ে বাড়ি ফেরেন দম্পতি। মঙ্গলবার বাঁকুড়া সদর থানায় চিকিৎসায় গাফিলতির লিখিত অভিযোগ জানান তাঁরা। বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান বলেন, ‘‘গোটা ঘটনা না জেনে, চিকিৎসায় গাফিলতি রয়েছে কিনা বলা যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন