খুদে বিপ্লব। —নিজস্ব চিত্র।
দেশ জুড়ে যখন মাথা চাড়া দিচ্ছে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, তখন ২.০৫ মিলিমিটার আয়তনে এক সঙ্গে তিন ধর্মকে বাঁধার দৃষ্টান্ত গড়তে চলেছেন তিনি।
শুধু তাই নয়। মাত্র ০.৩ মিলিমিটার আয়তনের জিনিসও রয়েছে তাঁর তালিকায়। কয়েকটি পড়ে পকেটের কোণে! কয়েকটি একেবারে সর্ষের ভিতরে! তবে ভূত নয়, ডায়েরি। ‘মাইক্রো ডায়েরি’।
গত কয়েক বছর ধরে এমনই মাইক্রো ডায়েরি উপহার দিয়ে চলেছেন উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরের কণ্ঠাধারের বাসিন্দা মুকুল দে। ডায়েরিগুলি হাতে তোলার উপায় নেই। টুপ করে পড়ে গেলে খালি চোখে তন্নতন্ন করে খুঁজে পাওয়া কার্যত অসম্ভব। এমন আকারে কয়েকটি বইও করে ফেলেছেন মুকুলবাবু।
কয়েক বছর ধরে ছোট্ট ডায়েরি তৈরি করে পিতৃদত্ত নামটাই চাপা পড়ে গেছে ‘মাইক্রোম্যান’-এর। ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরিতে কর্মরত মুকুলবাবু এই কাজের নেশায় পাশে পেয়েছেন সহকর্মী লক্ষ্মণ ঘোষকে। দু’জনে মিলে এ বার ২.০৫ মিলিমিটারের এক একটি বইয়ে তুলে ধরবেন বেদ, কোরান এবং বাইবেল।
কী ভাবে এ কাজের শুরু?
মুকুলবাবু জানান, কয়েক বছর আগে মেয়ের বায়নায় ফের কাগজ ও বোর্ড দিয়ে ছোট্ট খাতা তৈরি করেন তিনি। যা দেখে প্রশংসা করেন শিক্ষকেরা। আরও ছোট খাতা তৈরির নেশায় যোগ হয় ডায়েরি। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিস তৈরির নেশায় এমন পাঁচটি ডায়েরি তৈরি করে ফেলেছেন তিনি, যা একটি সর্ষের দানায় ঢুকে গিয়েছে। আতস কাচে চোখ রাখলে বোঝা যায় বাঁধানো ডায়েরির পাতা।
ডায়েরিগুলি ইটের মতো ব্যবহার করে একটি গ্রাম তৈরি করে ফেলছেন তিনি। কখনও কামান, কখনও তিন-চার তলা বাড়িও হচ্ছে ডায়েরি দিয়ে।
কী ভাবে সম্ভব? কাগজ, ছুরি, আঠা দিয়েই তৈরি হচ্ছে সে সব। তবে বিশেষ ধরনের। দেখতে গেলে এক টাকাও খরচ নেই। তবে মস্তিষ্ক আর ধৈর্য অনেকটাই খরচ করতে হয়। জানাচ্ছেন ‘মাইক্রোম্যান’। ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে প্রদর্শনী আয়োজনও করেছেন তিনি। ভাল লাগলে উপহারও দেন। তবে বিক্রি কখনও নয়। মুকুলবাবুর কথায়, ‘‘এ বার তিন ধর্মগ্রন্থকে একটি বইয়ে তুলে ধরব। শেষ না করে ছাড়ব না।’’
অবসরে এই নেশায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখার পণ নিয়েছেন মুকুলবাবু। নিজের বাড়ির ছোট্ট ঘরে তাঁর মাইক্রো সাম্রাজ্যের অধীশ্বর মগ্ন নিজের মতো করে ধর্মের আগল সরাতে।