বাবার স্মরণেই গঙ্গাসাগর বারবার

সব তীর্থ বারবার যদি পরিক্রমা করা যায়, গঙ্গাসাগরও এক বারে শেষ করতে নারাজ প্রসাদকুমার রাওয়ত। বারবার আসতে চান সাগরমেলায়। বারবার আসতে চান বাবার মৃত্যুবার্ষিকী সারতে।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

সাগরদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৫
Share:

মৃত বাবার ছবি হাতে দুই ছেলে। গঙ্গাসাগরে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

সব তীর্থ বারবার যদি পরিক্রমা করা যায়, গঙ্গাসাগরও এক বারে শেষ করতে নারাজ প্রসাদকুমার রাওয়ত। বারবার আসতে চান সাগরমেলায়। বারবার আসতে চান বাবার মৃত্যুবার্ষিকী সারতে। যেমন বাবার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রসাদকে এ বারেই প্রথম গঙ্গাসাগরে টেনে এনেছে হ্যাম রেডিয়ো।

Advertisement

গত বছর ১৩ জানুয়ারি গঙ্গাসাগরের সমুদ্রতটে অসুস্থ হয়ে মারা যান বিহারের ভোজপুরের বাসিন্দা রামপ্রসাদ রাম (৭৫)। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে গঙ্গাসাগর ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ১২ জানুয়ারি ভিড়ের মধ্যে বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পরের দিন সকালে গঙ্গাসাগরের সমুদ্রতটে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। সাগরমেলায় কর্তব্যরত হ্যাম রেডিয়োর প্রতিনিধি তাঁকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী সাগর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। ময়না-তদন্তের পরে তাঁর দেহ মর্গেই পড়ে ছিল। কেননা দীর্ঘদিন ধরে তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় বৃদ্ধের খোঁজখবর চলতে থাকে হ্যাম রেডিয়োর নিজস্ব বেতারতরঙ্গে।

ফি-বছর গঙ্গাসাগরে নিখোঁজদের উদ্ধারের কাজ করে হ্যাম রেডিয়ো। তাদের ওয়েস্টবেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘অনেক খোঁজাখুঁজির পরে গত এপ্রিলে মৃতের পরিচয় জানতে পারি। এপ্রিলেই মৃতের ছেলে কলকাতায় আসেন।’’ তত দিনে রামপ্রসাদের দেহ কঙ্কালে পরিণত হয়েছে। বাবার সেই অস্থি নিয়েই সৎকার সারেন প্রসাদ। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর মেলা শেষ হওয়ার প্রায় এক মাস পরেও বাবা বাড়ি না-ফেরায় বিহারে বাড়ির কাছে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করি। এপ্রিলে হ্যাম রেডিয়োর এক প্রতিনিধি মারফত বাবার মৃতদেহের ছবি হোয়াটসঅ্যাপে এলে চিনতে পারি।’’

Advertisement

সে-বার বাবার দেহাবশেষ নিতে কলকাতায় এলেও গঙ্গাসাগর দেখা হয়নি প্রসাদের। হাড়গোড় নিয়ে অন্ত্যেষ্টি সেরে ফিরে গিয়েছিলেন বিহারে। এ বারেই প্রথম গঙ্গাসাগরে পা রাখলেন তিনি। বলছেন, ‘‘হ্যাম রেডিয়ো আমাকে গঙ্গাসাগর চেনাল। এ বার থেকে প্রতি বছর বাবার মৃত্যুবার্ষিকী সারতে সপরিবার গঙ্গাসাগর আসব।’’ রবিবার বাবাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দেন প্রসাদ। তাঁর খেদ, ‘‘শুনেছি, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, গঙ্গাসাগরে তীর্থ করতে আসা কোনও পুণ্যার্থীর মৃত্যু হলে সরকার তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেবে। বাবার মৃত্যুর পরে আমরা কিন্তু এখনও কোনও টাকা হাতে পাইনি।’’

প্রসাদের বক্তব্য শুনে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রেড্ডি বলেন, ‘‘খোঁজখবর নিচ্ছি। ওই পরিবারের পাশে থাকবো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন