ভুয়ো তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা খুলে বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে প্রতারণার মামলায় এ বার সিআইডিকে সাহায্য করতে কলকাতায় আসছেন জার্মান সরকারের কৌঁসুলি যুরগেন লেওয়ানড্রস্কি। তাঁর সঙ্গে আসছেন প্রতারিত এক জার্মান মহিলাও। তিনিই এই মামলার প্রধান অভিযোগকারিণী।
সিআইডি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে তাদের তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে লেওয়ানড্রস্কির বেশ কয়েক বার কথা হয়েছে। ওই কৌঁসুলির মাধ্যমেই জার্মান সরকার এই জালিয়াতির কথা সিআইডিকে জানিয়েছিল। ওই খবরের ভিত্তিতে জুন মাসে নিউ টাউনের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় হানা দেন সিআইডির সাইবার অপরাধ দমন শাখার অফিসারেরা। গ্রেফতার করা হয় রিচা পিপলবা, বিক্রমজিৎ পান্ধার, আকাশ সিংহ, নীলেশ রাস্তোগি ও শুভ্রজিৎ পাল নামে পাঁচ অভিযুক্তকে। তদন্তকারীদের দাবি, রিচাই ওই চক্রের মূল চাঁই। ২০১৪ সাল থেকে একাধিক নামে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা খুলে বিদেশি নাগরিকদের পরিষেবা দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করতেন তাঁরা।
সিআইডির এক কর্তা বলেন, ‘‘পরিষেবা দেওয়ার নাম করে সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে বিদেশিদের কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হতো। তার পর সেখান থেকে বিদেশি মুদ্রা হাতিয়ে নেওয়া হতো।’’ সিআইডি সূত্রের খবর, এর আগে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে এমন একটি জালিয়াতি চক্রের হদিস মিলেছিল। সেই মামলায় রিচাকেই সাক্ষী করেছিলেন সিআইডির তৎকালীন তদন্তকারী অফিসার। কিন্তু তিনি নিজেই যে এমন একটি জালিয়াতি সংস্থার মাথা, সেটা তখন আঁচই করতে পারেনি সিআইডি। সিআইডি সূত্রে বলা হয়, এই শহরের নানা প্রান্তে বসে সাইবার জালিয়াতির একাধিক চক্র সক্রিয় রয়েছে। এই চক্রগুলি টাকা পাচারের কাজও করে। তাই এই মামলায় বিদেশি নাগরিকদের টাকা কী ভাবে পাচার করা হয়েছে সেই তথ্য খতিয়ে দেখা হবে।
গোয়েন্দারা জানান, বিদেশি নাগরিকদের অর্থ ব্রিটেনের একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জমা নেওয়া হতো। সেই অ্যাকাউন্ট অনলাইনে রিচারাই নিয়ন্ত্রণ করতেন। লন্ডন থেকে সেই টাকা আসত বাংলাদেশ ঘুরে মধ্যমগ্রামের একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। সেটি বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা এক দম্পতির। ওই দম্পতির মেয়ে রিচার সংস্থাতেই কাজ করতেন। ওই দম্পতির অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চলে আসত রিচাদের অ্যাকাউন্টে। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, বাংলাদেশি ওই অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি রিচার হাতেই ছিল।
সিআইডির দাবি, ওই জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে জার্মানিতে একাধিক মামলাও দায়ের করা হয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা ৭টি সার্ভার জার্মান কৌঁসুলিকে তদন্তের প্রয়োজনে দেওয়া যায় কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের সাইবার কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জালিয়াতির শিকার হয়েছেন এমন কাউকে পেলে মামলা জোরালো হবে। সে ক্ষেত্রে জার্মান অভিযোগকারিণী ভারতীয় কোর্টে সাক্ষ্য দিতে পারবেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’