বাংলাদেশ ভবনে চলছে বিশ্বসভা। সোমবার। ছবি: দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়
বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের আয়োজনে রবিবার থেকে বাংলাদেশ ভবনে শুরু হয়েছে ‘বিশ্বসভা’। সোমবার বাংলাদেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, দুটি সম্মেলন কক্ষে চলছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা, প্রেক্ষাগৃহে গৌড়ীয় নৃত্যের অনুষ্ঠানের আগে নৃত্য নিয়ে বক্তব্য রাখছেন মহুয়া মুখোপাধ্যায়, সেখানেও চলছে সাহিত্যের আলোচনা, পাশে কবিতা চত্বরে চলছে কবিতা পাঠ ও আবৃত্তি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ভবনে উৎসবের আমেজ।
তথাকথিত আলোচনা সভা কিংবা সম্মেলনের থেকে এই ‘বিশ্বসভা’ অনেকটাই আলাদা বলে জানালেন যোগদানকারীরা। বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের শান্তিনিকেতন শাখার সাধারণ সম্পাদক কিশোর ভট্টাচার্য জানান, ভারত ও বাংলাদেশ সহ আরও কয়েকটি দেশের প্রায় ৩৫০ জন প্রতিনিধি বিশ্বসভায় যোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকেই এসেছেন প্রায় ১৫০ জন। শান্তিনিকেতনের বুকে এমন ‘বিশ্বসভা’ আয়োজনে শুধু বিশ্বভারতী কিংবা শান্তিনিকেতনের স্থানীয়েরা নন, মেতেছেন বোলপুর সহ জেলার মানুষ।
রবিবার বাংলাদেশ ভবনে বিশ্বসভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। উদ্বোধক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন অর রশীদ, কলকাতা বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান সহ দু’দেশের কবি, সাহিত্যিক, পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেরা। সভাপতিত্ব করেন কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন। কিশোরবাবু বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী হ্যানয় গিয়েছিলেন বলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি। সাময়িক বিশ্রাম নেওয়ার পরেই সোমবার বিকেলে বিশ্বসভায় বক্তব্য রাখেন।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বাংলাদেশ ভবন ছাড়াও সঙ্গীতভবনে সঙ্গীতের আলোচনা, আম্রকুঞ্জে সাহিত্যসভা ছিল এই বিশ্বসভার অঙ্গ। নিজেদের মাঝে সঙ্গীতভবন প্রাক্তনী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে পেয়ে খুশি পড়ুয়ারা। তিনি ‘আমার সঙ্গীতভবন’ শীর্ষক একটি স্মৃতিমূলক বক্তব্য রাখেন। পড়ুয়াদের জন্য ছিল প্রবন্ধ পাঠ এবং স্মৃতিমূলক আলোচনা। আজ, মঙ্গলবারও রয়েছে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, গান, উন্মুক্ত আলোচনা, সাঁওতালি নাচ, নাটকের আয়োজন। উপস্থিত থাকার কথা জাতীয় কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাসুদ আহমেদের।
বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, শান্তিনিকেতন শাখার সভাপতি অতনু শাসমল এবং কিশোর ভট্টাচার্য জানান, বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির প্রচার প্রসারে উদ্যোগ গ্রহণ, বিশ্বভারতীকে ‘বিশ্বজাতিক মহামিলন’ কেন্দ্র হিসেবে প্রচার করা, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং সব ভাষার সাহিত্য সংস্কৃতির সঙ্গে অনুবাদ ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন ছিল এই সভার উদ্দেশ্য। এর জন্য বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই আলোচনায় বসতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। কিশোরবাবুর কথায়, ‘‘বিশ্বভারতীর উপাচার্যের সঙ্গে আমাদের মনোভাব মিলে যাওয়ায় আমরা খুশি। নাট্যঘরে এই বিশ্বসভা হওয়ার কথা ছিল। তিনি বাংলাদেশ ভবনে সভা করার উপদেশ দিয়েছিলেন। এতে অনেক সুবিধা হয়েছে।’’
বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষার লেখক শিল্পীদের পারস্পরিক মৈত্রী, সম্প্রীতি, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির সেতুবন্ধন গড়ে তোলার জন্য ২০১৬ সালের ২৬ এপ্রিল ঢাকায় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ। এই সংসদেরই প্রথম বিশ্বসভা হচ্ছে শান্তিনিকেতনে। বাংলাদেশ ভবনের মুখ্য সমন্বয়ক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় জানালেন, ভবনে অ্যাকাডেমিক এবং কালচারাল বিষয়ে চর্চা হোক সেটাই চাইছেন কর্তৃপক্ষ। সুযোগ মতো দুটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ভবনকে চর্চাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছে রয়েছে তাঁদের। এই অবস্থায় ভবনে এমন বিশ্বসভা হওয়ায় খুশি তাঁরা।
বিশ্বভারতীতে পাঠরত বাংলাদেশি পড়ুয়ারাও উচ্ছ্বসিত। তাঁদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘তিন দিনের বিশ্বসভা যেন তিন দিনের উৎসব।’’