পড়তে চাই, পাকা দেখার দিনই থানায় সরস্বতী

বাবা-মা পাত্র ঠিক করতেই সে জানিয়েছিল, বিয়ে নয়, পড়াশোনা করতে চায়। তার কথা উড়িয়েই অবশ্য পাকা দেখার আয়োজন হয়েছিল। বিপদ বুঝে তাই সটান থানায় হাজির ঘাটালের উদয়গঞ্জের সরস্বতী মালিক।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৭
Share:

সাহসিনী: সরস্বতী মালিক। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

সাধ করে বাবা-মা মেয়ের নাম রেখেছিলেন সরস্বতী। তার বাড়ি আবার বিদ্যাসাগরের জন্মভিটের কাছেই। বীরসিংহ বিদ্যাসাগর বালিকা বিদ্যাপীঠের অষ্টম শ্রেণির সেই ছাত্রীর পড়াশোনার জেদও কম নয়। বাবা-মা পাত্র ঠিক করতেই সে জানিয়েছিল, বিয়ে নয়, পড়াশোনা করতে চায়। তার কথা উড়িয়েই অবশ্য পাকা দেখার আয়োজন হয়েছিল। বিপদ বুঝে তাই সটান থানায় হাজির ঘাটালের উদয়গঞ্জের সরস্বতী মালিক।

Advertisement

রবিবার সকালেই দুই বন্ধুকে নিয়ে ঘাটাল থানায় গিয়েছিল সরস্বতী। সেখানে হাজির পুলিশ কাকুদের কাছে তার আর্জি ছিল, ‘‘বাড়িতে বিয়ের তোড়জোড় চলছে। কিন্তু আমি পড়তে চাই।’’ এরপর থানা থেকে ঘটনা জেনে বিডিও অরিন্দম দাশগুপ্তের নির্দেশে ফাঁড়িতে যান প্রশাসনের আধিকারিকেরা। পৌঁছয় মহিলা পুলিশ, চাইল্ড লাইন। ডাকা হয় ছাত্রীর বাবা-মাকে। তাঁদের বুঝিয়ে বন্ধ হয় বিয়ে।

বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান বীরসিংহ ঘেঁষা জনপদ উদয়গঞ্জ। সেখানেই বাড়ি দিনমজুর জয়দেব মালিকের। তাঁর পাঁচ মেয়ে। আঠারো হওয়ার আগেই ব়ড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। এ বার ছিল মেজো মেয়ে সরস্বতীর পালা। কিন্তু সরস্বতী প্রথম থেকেই বিয়েতে আপত্তি করেছিল।
কিন্তু কোনও ওজর-আপত্তিই গ্রাহ্য হয়নি। পাত্র সোনার কারিগর। এমন ‘সোনার টুকরো’ ছেলে হাতছাড়া করতে চাননি বাবা।

Advertisement

এ দিন দলপতি গ্রামে পাত্রের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল জয়দেববাবুদের। তার আগেই বন্ধুদের নিয়ে খড়ার ফাঁড়িতে পৌঁছয় সরস্বতী। থানায় কথা মাথায় এল কী ভাবে? ছাত্রীর জবাব, ‘‘স্কুলে নাবালিকা বিয়ের ক্ষতি বোঝানো হচ্ছে। তাই থানায় গিয়ে সমস্যা জানিয়েছি।’’

বীরসিংহ বিদ্যাসাগর বালিকা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকা মীরা রায় জানালেন, চলতি বছরেই কন্যাশ্রীর প্রকল্পে নাম উঠবে সরস্বতীর। তাই প্রশ্ন উঠছে এত প্রকল্প, এত প্রচারেও নাবালিকা বিয়ের ধারণাটা বদলাচ্ছে না কেন! জয়দেববাবু ও সরস্বতীর মা প্রতিমা বলছেন, ‘‘সংসারে অনটন। পছন্দের পাত্র পাওয়ায় মেয়েটার বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।” কিন্তু এতে তো মেয়েরই ক্ষতি? বাবা-মা এ বার চুপ।

ক্ষতি অবশ্য বুঝেছে সরস্বতী। তাই তার আক্ষেপ, বিদ্যাসাগরের আদর্শ, লড়াইয়ের কথা বইয়ের পাতায় আটকে থাকছে। বিডিও অরিন্দমবাবু অবশ্য বলেন, “নাবালিকা বিয়ে বন্ধে প্রচার চলছেই। আরও সচেতনতা বাড়ানো হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন