Jhargram

কালীপুজোর রাতে মশা খেদানো উৎসব

স্থানীয় গবেষকদের মতে, এই প্রথার পিছনে লৌকিক বিশ্বাস ও বিনোদন যেমন আছে, তেমনই মশা সর্ম্পকে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াসও আছে।

Advertisement

রঞ্জন পাল

 ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২২ ০৭:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি।

কালীপুজোর রাতে জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামের গ্রামীণ এলাকায় ফিরল পুরনো দিন। টিন, ঢাক-ঢোল, খোল, করতাল, ক্যানেস্তারা বাজিয়ে, মশাল জ্বালিয়ে ধোঁয়া দিতে দিতে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি ঘুরে পালিত হল ‘মশা খেদানো’ উৎসব।

Advertisement

সাঁকরাইল ব্লকের দিগারবাঁধ, কুঁকড়াখুপি, বাবলা, গাইঘাঁটা, কোপ্তিডাঙা, বেলিয়াবেড়া ব্লকের জুনশোলা, ভোল, বামনদঁড়ি, হাতিপাদা, আশকোলা, মালঞ্চ, টিকায়েতপুর ও গোপীবল্লভপুর-১ ও নয়াগ্রাম ব্লকের একাধিক গ্রামে এই উৎসব পালিত হয়। এর পিছনে ‘ভূত তাড়ানো’র বিশ্বাসও রয়েছে। কারণ, ভূত চতুর্দশীর পরদিনই কালীপুজো। এই রাতে স্থানীয় যুবকেরা টিন, ঢাক-ঢোল, খোল, করতাল, ক্যানেস্তারা বাজিয়ে মশাল ও ধোঁয়া তৈরির নানা উপকরণ নিয়ে সারা গ্রাম ঘোরেন। গানও করেন। রীতি অনুযায়ী, সারা রাত গ্রাম প্রদক্ষিণ করে আজ, মঙ্গলবার ভোরে গায়ে হলুদ মেখে স্নান করে বাড়িতে ঢুকবেন ওই যুবকেরা।

গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের জানাঘাটি গ্রামে এ বার ‘মশা খেদানো’র দলে ছিলেন দীনেশ পাত্র, ঋক পাত্র, রাজু বাড়ি, দীপেশ ঘোষেরা। তাঁরা জানালেন, মশা তাড়ানোর ধোঁয়া তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয় সরষে বা কড়চার তেল, সঙ্গে থাকে ধুনো। দীনেশরা বললেন, ‘‘ছোট থেকে দেখেছি কালীপুজোর রাতে এই মশা খেদানো উৎসব হয়। গ্রামের রীতি মেনে আমরাও তাই জড়ো হয়েছি।

Advertisement

স্থানীয় গবেষকদের মতে, এই প্রথার পিছনে লৌকিক বিশ্বাস ও বিনোদন যেমন আছে, তেমনই মশা সর্ম্পকে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াসও আছে। শীতের প্রাক্কালে এই সময়টায় মশার উৎপাত বাড়ে। এ বছর তো ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছে। তাই এই প্রথা যেন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। লোকসংস্কৃতি গবেষক লক্ষীন্দর পালৌই বলছিলেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম জেলার মধ্য সুবর্ণরেখা অববাহিকা অঞ্চলের (বেলিয়াবেড়া, গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম ও সাঁকরাইল) একটি লৌকিক সংস্কার হল মশা খেদানো। কালীপুজোর রাত থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত আখের ডাঁটি দিয়ে ভাঙা টিন বাজিয়ে মশা তাড়ানো হয়। এই সময় অশুভ শক্তি বাসা বাঁধে বলে অনেকের ধারণা। আসলে মশার মতো কীটপতঙ্গ তো মানুষের অশুভই করে।’’

স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য মনে করিয়ে দিলেন, প্রচলিত এই রীতি অনুযায়ী মশা ও কীটপতঙ্গ সাময়িক ভাবে তাড়ানো গেলেও মশার বংশ বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়। সে জন্য চাই ধারাবাহিক সচেতনতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন