Sandeshkhali Incident

সন্দেশখালি: উদ্বেগ সাম্প্রদায়িক প্রচারে

গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি, আমরা এক সচেতন প্রয়াস, শ্রমজীবী মহিলা সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ খেত মজুর সমিতির মতো কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন সম্প্রতি ৪০ পাতার তথ্যানুসন্ধান রিপোর্টটি প্রকাশ করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪ ০৬:০৮
Share:

সন্দেশখালিতে প্রতিবাদে মহিলারা। — ফাইল চিত্র।

নারী নির্যাতন বা জমির মালিকানা পেতে জুলুম সন্দেশখালিতে দুটোই সত্যি বলে ওই তল্লাটের পরিস্থিতি নিয়ে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু সেই সব অপকীর্তির মধ্যে আর যাই হোক, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বা পক্ষপাত ছিল না বলেই তথ্যানুসন্ধানকারীরা দাবি করেছেন। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি, আমরা এক সচেতন প্রয়াস, শ্রমজীবী মহিলা সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ খেত মজুর সমিতির মতো কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন সম্প্রতি ৪০ পাতার তথ্যানুসন্ধান রিপোর্টটি প্রকাশ করে।
ইতিমধ্যে সন্দেশখালির অন্যতম প্রতিবাদী ‘মুখ’ বলে পরিচিত এক মহিলাই সন্দেশখালিতে বিজেপি-র হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। তথ্যানুসন্ধানকারীদের মতে, নানা ধরনের জুলুম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের পুঞ্জীভুত ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতির ঘুঁটি সাজাতে বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিজেপিই তুলনায় সফল বলে মনে হচ্ছে। সম্মিলিত রিপোর্টটি সংগ্রাহকদের এক জন শুভপ্রতিম রায়চৌধুরী বলছেন, “সন্দেশখালির জুলুম ও দুর্নীতির প্রবণতা উদ্বেগজনক। এবং শুধু সন্দেশখালি নয়, গোটা রাজ্যে অন্যত্রও এই ধরনের দুর্নীতি চলছে বলে সন্দেহ করা যায়। কিন্তু সেই সঙ্গে আর একটি বিষয়, এই সব দুর্নীতিকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে অপব্যাখ্যার একটা তৎপরতাও রাজ্যে দেখা যাচ্ছে। সেটাও কম উদ্বেগের নয়।নির্যাতিত এবং নির্যাতনকারীদের মধ্যে দুই ধর্মের লোকজনই রয়েছে। কিন্তু বিজেপি এবং আরএসএস বিষয়টির বিকৃত, একপেশে ব্যাখ্যাই করে চলেছে।”
প্রধানত গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মার্চের মধ্যে তথ্যানুসন্ধানের কাজটি করা হয়। তবে ওই তল্লাটে তথ্যানুসন্ধানকারীরা আরও আগে থেকে যাতায়াত করছিলেন। মহিলা, কৃষক, দোকানদার, বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মী থেকে পরিযায়ী শ্রমিক নানা বর্গের মানুষজনের সঙ্গেই রিপোর্টটির জন্য কথা বলা হয়েছে। মূল কয়েকটি বিষয় যা উঠে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে জমি দখল করে ভেড়ি বা পোলট্রি খামারে রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় কয়েকটি সরকারি দফতরের সক্রিয় যোগসাজশ। রিপোর্টটিতে বলা হচ্ছে, জমি দখলকারীরা অনেকেই শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত। আবার শাসক দলেরই ছোটখাট লোকজন নির্যাতিত হয়েছেন এমন উদাহরণও রিপোর্টে আছে। রিপোর্টে অভিযোগ, রাজ্য ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের ভূমিকাও এ ক্ষেত্রে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত থাকলে পুলিশ বা ভূমি রাজস্ব দফতরের থানে মাথা খুঁড়ে ফল মেলে না বলে বেড়মজুর গ্রামের অনেকে আক্ষেপ করেছেন। বেআইনি ভাবে দখল করা জমিতে ভেড়ি, পোলট্রির জন্য নানা প্রকল্পে ঋণ কী করে মিলল, তা নিয়েও রিপোর্টে প্রশ্ন উঠছে। ভেড়ির বাড়বাড়ন্তের সঙ্গে সঙ্গে ঠিকঠাক মজুরির অভাবে গরিবিও বেড়েছে রিপোর্টে প্রকাশ। নারী নির্যাতনের প্রচলিত ধারণাকেও সাহসের সঙ্গে সন্দেশখালি প্রশ্ন করছে বলে মনে করেছেন তথ্যানুসন্ধানকারীরা। জমিদখলকারীদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদে গেলেই সেই পরিবারের মেয়েদের দাম দিতে হয়েছে। গোটা এলাকাতেই মেয়েদের রাতে ডেকে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রাখার অভিযোগ রয়েছে। এবং সেটাই নির্যাতন বলে মেয়েরা মনে করছেন। সংবাদমাধ্যমে ধর্ষণ বা অশালীন ব্যবহার নিয়ে কাটাছেঁড়ার চেষ্টাতেও অনেক মহিলা অপমানিত বলে রিপোর্টে জানা যাচ্ছে।
তথ্যানুসন্ধানকারীরা মনে করেন, দখল হওয়া জমি ফেরানো উচিত। যদিও জমি রূপান্তরের পরে কোথায় কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। সেই সঙ্গে তাঁরা চান সন্দেশখালির প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে সরকারের মিথ্যে মামলা দেওয়াও বন্ধ হোক। সন্দেশখালি নিয়ে সরকার দেরিতে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নামলেও সরকার প্রস্তাবিত প্যাকেজ নিয়ে জনসাধারণের তত উৎসাহ নেই বলেই তথ্যানুসন্ধানকারীদের অভিমত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন