Hingalganj

‘বোন-দিদি কি আর কখনও থাকবে না আমাদের সঙ্গে’

মা মলিন শাড়ির আঁচলে চোখ মোছেন। দুই মেয়েই কাছে থাকে না। এক জন অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ছেড়ে কাজের খোঁজে গিয়েছে ভিন্‌ রাজ্যে।

Advertisement

নবেন্দু ঘোষ 

হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৩ ০৮:০০
Share:

এই ভাঙাচোরা ঘরে মেয়েদের এনে রাখতে পারেন না সরলা। নিজস্ব চিত্র

সন্ধে নামলে ঘরে টিম টিম করে জ্বলে ছোট্ট একটা বাল্‌ব। বছর বারোর ছেলেটা ভাঙাচোরা ঘরে মায়ের গা ঘেঁষে বসে। বলে, ‘‘বোনেদের কথা বলো মা, ওদের তো অনেক দিন দেখি না! ওরা কি আর কখনও থাকবে না আমাদের সঙ্গে এসে?’’

Advertisement

মা মলিন শাড়ির আঁচলে চোখ মোছেন। দুই মেয়েই কাছে থাকে না। এক জন অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ছেড়ে কাজের খোঁজে গিয়েছে ভিন্‌ রাজ্যে। অন্য জনকে কয়েক বছর আগেই মা পাঠিয়েছেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। মেয়ে বড় হচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামে ভাঙাচোরা এই ঘরে মেয়েকে কাছে রাখতে মন সায় দেয়নি মায়ের।

আশা ছিল, এ বার অন্তত আবাস যোজনার তালিকায় নাম উঠবে উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের রূপমারি পঞ্চায়েতের টিনপাড়ার বাসিন্দা বিপ্লব সর্দারের পরিবারের। তেমন কিছু ঘটেনি। বিপ্লবের স্ত্রী সরলা বলেন, ‘‘ঘরদোরের এই অবস্থা, মেয়েদের কাছে এনে রাখতে পারি না।’’

Advertisement

আমপানে তাঁদের মাটির বাড়ির খড়ের ছাউনি উড়ে গিয়েছিল। ডাঁসা নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে বাড়ি ডুবে ছিল কয়েক মাস। গবাদি পশুরা মারা যায়। বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় কাটাতে হয়েছে বহু দিন। বড় মেয়ে রিয়া ও ছোট মেয়ে শম্পাকে হাবড়ায় নিজের কাছে নিয়ে যান তাদের এক কাকু। কিছু দিন পরে মামার সঙ্গে তামিলনাড়ুতে কাজে যায় রিয়া। লকডাউনের আগে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত সে। এখন পরিচয়, ‘স্কুলছুট পরিযায়ী শ্রমিক’।

ছোট মেয়ে শম্পা হাবড়ায় কাকার বাড়িতে থাকে। সেখানেই পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। তবে মেয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয় না মায়ের। সরলা বলেন, “আমার দুই মেয়ে দুই প্রান্তে চলে গিয়েছে। মনে হয় কখনও আর এক সঙ্গে থাকা হবে না।’’

বিপ্লবও ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। যা টাকা পাঠান, তা দিয়ে খাওয়া-পরাটুকু চলে। ভাঙা ঘর আর সারানো হয় না। ঘরের চালে দেখা গেল ডিশ অ্যান্টেনা। সরলা সে দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘‘স্বামী শখ করে কিনেছিলেন এক সময়ে। এখন আর সব মাসে রিচার্জই করা হয় না।’’

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মোহন্ত সিংহ বলেন, “ওঁদের অবস্থা খুবই খারাপ। ঘর পেলে ভাল হত। কিন্তু ২০১৮ সালের সমীক্ষায় কী ভাবে ওঁদের নাম বাদ গেল, বুঝতে পারছি না।”

হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী জানান, ওঁদের ঘর না পাওয়াটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এখন তো নতুন করে নাম তোলার সুযোগ নেই। তবুও বিষয়টি দেখা হবে।

সরলা বাড়িতে থাকেন ছেলে প্রসেনজিৎ আর ভাসুরকে নিয়ে। প্রসেনজিৎ পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। সে বলে, ‘‘বাড়িতে খুব একা লাগে। বিশেষ করে সন্ধের পরে। তখন দিদি, বোনের কথা খুব মনে পড়ে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন