SIR in West Bengal

সব মায়া! বাংলার ৪৪ জায়গায় ভোটার তালিকায় রয়েছেন এক মহিলা, এনুমারেশনের কিউআর কোড স্ক্যান করে তাজ্জব বিএলও

বিধবা মায়ারানি গোস্বামীর বাড়ি পশ্চিম বর্ধমান জেলার পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভার ডিভিসি পাড়ায়। ৪৭ নম্বর বুথের ভোটার তিনি। তাঁর এনুমারেশন ফর্মে কোড স্ক্যান করতে গিয়ে রাজ্যের ৪৪ জায়গায় ভোটার হিসাবে তাঁর নাম পেয়েছেন বিএলও।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:৪২
Share:

একই মায়ারানি বাংলার নানা জায়গার ভোটার! গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

হাওড়ায় তিনি মায়ারানি রায়। তিনিই বাঁকুড়ায় মায়ারানি মুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারে মায়ারানি প্রামাণিক, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপিতে মায়ারানি নাইয়া! আবার উত্তর ২৪ পরগনায় তিনিই মায়ারানি মণ্ডল, বর্ধমানে মায়ারানি কোঙার, দক্ষিণ দিনাজপুরে মায়ারানি রায়! এই ভাবে রাজ্যের ৪৪টি জায়গায় ভোটার তালিকায় রয়েছেন একই ‘মায়া’, তবে স্থান ভেদে পদবি আলাদা। স্বামী গৌরেরও পদবি সঙ্গতি রেখে রাখা। পেশায় রাঁধুনি মধ্যবয়স্কা মায়ারানিকে নিয়ে শোরগোল পশ্চিম বর্ধমানে। বিজেপির অভিযোগ, এই ভাবে রাজ্য জুড়ে ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম ঢুকিয়েছে তৃণমূল। পাল্টা একই অভিযোগে বিজেপিকে নিশানা করেছে তৃণমূল। তদন্ত শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।

Advertisement

বিধবা মায়ারানি গোস্বামীর বাড়ি পশ্চিম বর্ধমান জেলার পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভার ডিভিসি পাড়ায়। ৪৭ নম্বর বুথের ভোটার তিনি। তাঁর এনুমারেশন ফর্মে কোড স্ক্যান করতে গিয়ে রাজ্যের ৪৪ জায়গায় ভোটার হিসাবে তাঁর নাম পেয়েছেন বিএলও। এমন অভাবনীয় ঘটনায় মায়ারানি অবশ্য বিস্মিত নন। বস্তুত, তিনি এর গুরুত্ব কী তা-ই জানেন না। বাড়ি বাড়ি রান্নার কাজ করে কোনও ক্রমে দিন চলে ওই মহিলার। থাকেন সরকারি প্রকল্পে পাওয়া বাড়িতে। তাঁর কথায়, ‘‘বাবারা, আমি তো কিছুই জানি না। শুরু থেকে আমি বৈদ্যনাথপুর স্কুলে ভোট দিই। এসআইআরের ফর্ম পাড়ার সবাই পূরণ করেছে। আমিও করেছি। তার পর জনে জনে আমাকে এসে প্রশ্ন করছেন। তবে অনেকেই বলেছেন, আমার কোনও ভয় নেই।’’

অন্য দিকে জানা যাচ্ছে, পশ্চিম বর্ধমানের এই মায়ারানির নামে ৪৪টি ভুয়ো এপিক কার্ড রয়েছে। কোথাও তাঁর পদবি ‘মণ্ডল’, কোথাও ‘রায়’, কোথাও ‘ঘোষ’ তো কোথাও ‘নাইয়া।’ ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর বয়সও কম দেখানোর অভিযোগ। নিছক ভুল না কি পাকা মাথার কাজ, তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুরু হয়েছে বিতর্ক। পাণ্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি যেমন মানতেই নারাজ যে, এটা ছোটখাটো ভুল। তাঁর কথায়, “এসআইআর হচ্ছে বলে তো এটা বেরোল। না-হলে তো কোনও দিন জানাই যেত না যে এমন ভোটারও বাংলায় আছেন।’’ তিনি অবশ্য প্রৌঢ়াকে দোষ দিতে রাজি নন। তাঁর দাবি, মায়ারানির মতো এমন অনেক ‘অসহায় মানুষের’ নাম ব্যবহার করা হয়েছে ভোটের রাজনীতির স্বার্থে। এসআইআর হচ্ছে সেগুলো প্রকাশ্যে আনার জন্যই। বিজেপি নেতার আবেদন, নির্বাচন কমিশন এর সত্বর তদন্ত করুক। তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি রবিন পালও মানছেন অভিযোগ গুরুতর। তিনি বলেন, ‘‘কমিশন দ্রুত তদন্ত করুক। কে বা কারা এমন চক্র চালাচ্ছে, তা খুঁজে বার করা হোক। তবে ভুক্তভোগী মহিলার যেন কোনও ক্ষতি না হয়, সেটাও দেখা প্রয়োজন।’’

Advertisement

মায়ারানির খবর গিয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুরের তৃণমূল সাংসদ কীর্তি আজাদের কানেও। তিনি বলেন, ‘‘এটা তো নির্বাচন কমিশনের দেখা উচিত! শুধু এই রাজ্য নয়, অন্যান্য রাজ্যের এমন ঘটনা ঘটেছে।’’ তার পরেই সব কিছুর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেছেন তিনি। পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক পোন্নাম্লম এসের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement