আধার-সংযুক্তির সুরক্ষা আয়ত্তেই, আশ্বাস কর্তার

সঞ্জয়ের দাবি, আধার-সংযুক্তির নিরাপত্তায় খামতি নেই। এই সব ক্ষেত্রে সুরক্ষা বাড়িয়ে যাওয়া একটা নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। সেই কাজ চলছে সমন্বয়ের ভিত্তিতেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:০১
Share:

প্রতীকী ছবি।

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং মোবাইল ফোনের নম্বরের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযুক্তি নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। সাইবার-দস্যুদের লাগাতার হানার দাপটে নাগরিকদের তথ্য নিয়ে নিরাপত্তার প্রশ্নও উঠছে হামেশাই।

Advertisement

কেন্দ্রীয় সরকারের সাইবার নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান সঞ্জয় বহেল কিন্তু এই ধরনের প্রশ্ন বা বিতর্ককে আমল দিতে রাজি নন। শুক্রবার কলকাতায় সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে তিনি জানান, এই সব ক্ষেত্রে বিপদ এড়াতে উন্নত প্রযুক্তি এবং দক্ষতা প্রয়োজন। নিরাপত্তা কী ভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে নিয়মিত অনুশীলনও চলছে। তৈরি হচ্ছে সাইবার সমন্বয় কেন্দ্র। সঞ্জয়ের দাবি, আধার-সংযুক্তির নিরাপত্তায় খামতি নেই। এই সব ক্ষেত্রে সুরক্ষা বাড়িয়ে যাওয়া একটা নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। সেই কাজ চলছে সমন্বয়ের ভিত্তিতেই।

দেশের সাইবার নিরাপত্তার সর্বোচ্চ সংস্থা ‘কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম-ইন্ডিয়া’ (সার্ট-ইন)। সেই সংস্থা বা প্রযুক্তি-বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জয় পুরোদস্তুর সরকারি আমলা নন। দীর্ঘদিন এ দেশে মাইক্রোসফটের তথ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভাগের শীর্ষ কর্তা ছিলেন তিনি। এ-হেন প্রযুক্তিবিদকেই শীর্ষ পদে বসিয়েছে কেন্দ্র। ফলে আধারের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও মোবাইলের সংযুক্তির পরে বিপদ ঘটলে তার দায়ভারও বর্তাবে তাঁর উপরেই।

Advertisement

সেই প্রসঙ্গেই সঞ্জয় এ দিন জানান, সাইবার হানা প্রতিরোধ ও মোকাবিলা করার জন্য নিয়মিত মহ়ড়া দেওয়া হয়। তাতে সঙ্গে নেওয়া হয় ব্যাঙ্ক, ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকেও। এই ধরনের মহড়ার ফলে নিরাপত্তার ফাঁকফোকর ধরা পড়ে, একই ভাবে হামলার দ্রুত মোকাবিলা করার ক্ষমতাও বাড়ছে। সাইবার-দস্যুদের মোকাবিলায় ভারত কতটা সক্ষম, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সাম্প্রতিক ‘ওয়ানাক্রাই র‌্যানসমঅয়্যার’-এর প্রসঙ্গও টেনে আনেন সঞ্জয়। জানান, ওই ভাইরাসের ‘প্রতিষেধক’ তৈরি ছিল না। হামলার পরে অতি দ্রুত তা তৈরি করা হয়। ‘‘সাইবার নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় সরকারের নিজস্ব পরিকাঠামো রয়েছে। দিন দিন তা উন্নতও হচ্ছে,’’ দাবি সঞ্জয়ের।

শুধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও যে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী, এ দিন তা স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছেন রাজ্যের তথ্যপ্রযু্ক্তি সচিব দেবাশিস সেন। তিনি জানান, সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে সাইবার নিরাপত্তা গবেষণা কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। এ রাজ্যে তথ্যের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ‘ব্লকচেন’ প্রযুক্তি ব্যবহার করার কথা ভাবা হচ্ছে। দেবাশিসবাবু জানান, এই প্রযুক্তিতে একটি কম্পিউটারের বদলে তথ্য থাকে বহু কম্পিউটারে। ফলে কোনও তথ্য বদলানোর চেষ্টা হলে এক জন নয়, ওই সব কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত সকলেই তা জেনে যাবেন এবং তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। সরকারি তথ্যে কেউ কারসাজি করতে পারবে না। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি নিরাপদ।

অনেকে অবশ্য মনে করেন, শুধু সরকারি পরিকাঠামো দিলেই হবে না। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থা ও সরকারকে যৌথ ভাবে উদ্যোগী হতে হবে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরোর প্রাক্তন প্রধান শ্যামল দত্তের মতে, তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থায় অনেক বেশি প্রতিভাধর কর্মীরা রয়েছেন। তাঁদের কাজে লাগানোর জন্যই সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগ জরুরি। সঞ্জয় ও দেবাশিসবাবুর মতো সরকারি কর্তারা অবশ্য এ ব্যাপারে ভিন্নমত। সঞ্জয়ের দাবি, সরকারি ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার সাইবার নিরাপত্তা অনেক বেশি। বেসরকারি সংস্থাগুলি নিরাপত্তার ব্যাপারে ততটা ওয়াকিবহাল নয়। দেবাশিসবাবুর মতে, সরকারি কাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে এবং তার গোপনীয়তার প্রশ্ন থাকে। সেই জন্যই এই ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাজে লাগানো সম্ভব নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন