মিড ডে মিলে আধার, তবু আশ্বাস রাজ্যের

সঙ্গতিহীন পরিবারের সন্তানদের বিদ্যালয়ের আঙিনায় টেনে আনার জন্য জনকল্যাণমূলক প্রকল্প হিসাবে চালু হয়েছিল মিড ডে মিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৪২
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রতিবাদ ছিল বিস্তর। কিন্তু শিক্ষার অধিকার আইনের শর্ত মেনে রাজ্যেও চালু হয়ে গেল মিড ডে মিলের সঙ্গে আধার সংযোগ।

Advertisement

সরকারি নির্দেশ মোতাবেক জেলাশাসকেরা নির্দেশিকা পাঠিয়ে বিডিও এবং পুরপ্রধানদের জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই মিড ডে মিলের জন্য প়়ড়ুয়াদের আধার নথিভুক্তির কাজ সেরে ফেলতে হবে। সর্বশিক্ষা অভিযানের আধিকারিকেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, ৩১ তারিখের মধ্যে আধার সংযোগের যাবতীয় কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। তাই তাঁরা আরও সময় চাইবেন।

সঙ্গতিহীন পরিবারের সন্তানদের বিদ্যালয়ের আঙিনায় টেনে আনার জন্য জনকল্যাণমূলক প্রকল্প হিসাবে চালু হয়েছিল মিড ডে মিল। বিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে দুপুরে দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থা থাকলে পেটের দায়ে বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের পড়াশোনা ছাড়িয়ে নিয়ে যাবেন না, এই ভাবনা ছিল পরিকল্পনাকারীদের মাথায়। এখন সেই মিড ডে মিলকেই আধার নম্বরের উপরে নির্ভরশীল করে তোলা নিয়ে বিতর্ক আছে যথেষ্ট। শিক্ষক সংগঠনগুলির নেতৃত্ব প্রশ্ন তুলছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এমন শর্ত রাজ্য সরকার মেনে নিল কেন?

Advertisement

নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির (এবিটিএ) সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘শিক্ষার অধিকার আইনে একটি শিশুর যে সব অধিকার রয়েছে, তা নিয়ে খুব একটা চিন্তা সরকারের দেখি না। কিন্তু মিড ডে মিলের জন্য কেন্দ্রের আধার যোগ করার নির্দেশ রাজ্য মেনে নিচ্ছে!’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার মানসিক ভাবে কেন্দ্রের সব নির্দেশ মেনে নিতে শিখেছে। লড়াই করার মানসিকতা নেই। তাই কেন্দ্রের এই নির্দেশও মেনে নিচ্ছে।’’

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘কার আধার যোগ হয়েছে, কার হয়নি, জানি না। তবে এখানে মিড ডে মিল কোথাও বন্ধ হবে না। আমরা এটা জানিয়ে দিয়েছি।’’

মিড ডে মিলের সঙ্গে আধার সংযুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতই রয়েছে। সরকারি আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, আদতে যত পড়ুয়া রয়েছে, তার চেয়ে বেশিই সংখ্যা সচরাচর দিয়ে থাকে বিদ্যালয়গুলি। আধার যোগ হলে পড়ুয়াদের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে এবং মিলের টাকায় কারচুপি কমবে। সরকারি সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, আগে ওই প্রকল্পের গোটা খরচ দিত কেন্দ্র। এখন রাজ্যকেও সেখানে অনুদান দিতে হয়। ফলে, কারচুপি কমানো গেলে রাজ্যেরও খরচ বাঁচবে।

যদিও সরকারি কর্তাদেরই কেউ কেউ পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, মিড ডে মিলে যাকে কারচুপি বলা হচ্ছে, তাকে আরও ‘মানবিক’ দৃষ্টিতে বিচার করা উচিত। মাথাপিছু যে কয়েক টাকা ওই মিলের জন্য বরাদ্দ, তাতে ভাতের সঙ্গে প্রায় কিছুই দেওয়া সম্ভব নয়! সেখানে কিছু বেশিসংখ্যক পড়ুয়া দেখিয়ে মোট যে বরাদ্দ পাওয়া যায়, তাতে বাচ্চাদের ভাতের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই ডিমটুকু দিতে পারে বিদ্যালয়গুলি। সংখ্যা ধরে কড়াকড়ি করলে সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। আর আধিকারিকদের কারও কারও আশঙ্কা, এর পরে আরও কঠোর শর্ত চাপিয়ে মি়ড ডে মিলের থালা হাতে নেওয়ার জন্য বাচ্চাদের আঙুলের বায়োমেট্রিক ছাপ চালু করা হলে গোটা বিষয়টি আরও ‘অমানবিক’ হয়ে দাঁড়াবে না কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন