Mamata-Abhishek

কুড়মি হামলার পর তিন কিমি হাঁটলেন অভিষেক, ফোন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাকেও, কী বললেন?

ঝাড়গ্রাম শহরে ‘রোড শো’ শেষ করে লোধাশুলি হয়ে অভিষেকের কনভয় শালবনির দিকে যাচ্ছিল। সেই যাত্রাপথেই কুড়মিদের হামলা। ৫ নম্বর রাজ্য সড়কের দু’ধারে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন আন্দোলনকারীরা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শালবনি শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৩ ২১:৫৭
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

ঝাড়গ্রামে তাঁর কনভয়ের একাধিক গাড়িতে হামলা চালিয়েছেন কুড়মি আন্দোলনকারীরা। ইট মেরে রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার গাড়ির ‘উইন্ড স্ক্রিন’ ভেঙে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। শুক্রবার রাতে ঝাড়গ্রামের গড়শালবনির এই ঘটনার পর প্রায় ৩ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে লোধাশুলিতে পৌঁছলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর গাড়িতে ওঠার সময় জানালেন, কুড়মি হামলার বিষয়টি তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে জানিয়েছেন।

Advertisement

শুক্রবার ঝাড়গ্রাম শহরে ‘নবজোয়ার কর্মসূচি’র ‘রোড শো’ শেষ করে লোধাশুলি হয়ে অভিষেকের কনভয় শালবনির দিকে যাচ্ছিল। সেই যাত্রাপথেই ঘটনাটি ঘটে। ৫ নম্বর রাজ্য সড়কের দু’ধারে তখন বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কুড়মি আন্দোলনকারীরা। অভিযোগ, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে ‘চোর চোর’ বলে স্লোগানও দেওয়া হয়। এর পর তৃণমূলের শীর্ষ নেতার কনভয়ের শেষে থাকা মন্ত্রী বিরবাহার গাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ইটও। তাতে মন্ত্রীর গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে গিয়েছে। তৃণমূলের আরও অভিযোগ, দলীয় কর্মীদের বাঁশ, লাঠি দিয়ে মারা হয়। ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন।

এই ঘটনার পর আরও কিছু দূর গাড়ি করে গিয়ে নেমে পড়েন অভিষেক। তার পর প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ হেঁটে লোধাশুলিতে ঢোকেন তিনি। সেখানে গিয়ে আবার গাড়িতে উঠে গজাশিমুল এলাকায় দলীয় কর্মসূচির উদ্দেশে রওনা দেন তৃণমূল নেতা। গাড়িতে ওঠার সময় অভিষেক বলেন, ‘‘পুরো ঘটনা মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে জানানো হয়েছে। উনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পুলিশ-প্রশাসনকে পুরো ঘটনার তদন্ত করে কড়া ব্যবসা নিতে বলেছেন তিনি।’’

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিষেকের কনভয়ের ১২-১৫টি গাড়ির পরে মন্ত্রী বিরবাহার গাড়ি ছিল। সেটির পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। শাসকদলের দাবি, তাদের অন্তত ১২-১৩ জন কর্মী জখম হয়েছেন। বিরবাহার দাবি, তিনি নিজেও জখম হয়েছেন। হামলার ঘটনার পর বিরবাহা বলেন, ‘‘আমিও নিজে আদিবাসী সমাজের মানুষ। কিন্তু এ ভাবে আন্দোলন হয় নাকি! আমরাও আন্দোলন করেছি। কিন্তু এটা অসভ্যতা। এর শেষ দেখে ছাড়ব।’’ এই ঘটনার জন্য সিপিএম এবং বিজেপিকেও দুষেছেন তিনি। বিরবাহা বলেছেন, ‘‘কুড়মিরা যে আন্দোলন করছেন, তৃণমূল তো কোনও দিন তার বিরোধিতা করেনি। তা হলে কেন তৃণমূলের কর্মসূচিতে হামলা চালানো হবে? এটা কোনও জাতিগত আন্দোলন হতে পারে না। এটার সঙ্গে বিজেপি আর সিপিএমও জড়িত। নোংরামি ছাড়া কিছুই নয়।’’

বর্তমানে ওবিসি শ্রেণিভুক্ত কুড়মি সম্প্রদায় দীর্ঘ দিন ধরে তফসিলি জাতির স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তফসিলি জাতি তালিকাভুক্ত করার দাবিতে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে কুড়মিদের কয়েকটি সংগঠন রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি লালগড়ের ধরমপুরে দলীয় কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ কুড়মিদের একটি সংগঠনের বিক্ষোভের মুখে পড়েন।

বাঁকুড়ায় অভিষেকের ‘নবজোয়ার কর্মসূচি’ শুরুর আগেই আন্দোলনকারীরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের যাত্রাপথে নিজেদের দাবির সমর্থনে স্লোগান দেবেন। কিন্তু সিবিআইয়ের তলব পেয়ে গত সপ্তাহে শুক্রবার দলীয় কর্মসূচি কাটছাঁট করে বাঁকুড়া ছেড়ে কলকাতায় ফিরতে হয় অভিষেককে। শনিতে কেন্দ্রীয় সংস্থার দফতরে হাজিরা দেওয়ার পর সোমবার আবার জেলায় ফিরে নবজোয়ারে যোগ দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার সেই কর্মসূচিতে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে গিয়ে দফায় দফায় কুড়মিদের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে অভিষেকের কনভয়কে।

সিমলাপাল থেকে খাতড়া যাওয়ার পথে বনকাটা ও জামদা গ্রামে তৃণমূল সাংসদের কনভয়ের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। খাতড়া ঢোকার মুখে জামদা গ্রামের কাছে কনভয় আটকানো হলে, গাড়ি থেকে নেমে কুড়মি নেতাদের সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলেছিলেন অভিষেক। জামদায় অভিষেকের সঙ্গে কথা বলার পর কুড়মি নেতারা তাঁকে জানান, অবিলম্বে তাঁদের দাবি মেনে কেন্দ্রের কাছে সংশোধিত সিআরআই রিপোর্ট পাঠাতে হবে রাজ্য সরকারকে। নইলে আগামী নির্বাচনে কুড়মি সম্প্রদায়ের ভোট রাজ্যের শাসকদলের পক্ষে যাবে না। এই হুঁশিয়ারির মুখে অভিষেকও পাল্টা জানিয়েছিলেন, কুড়মি সম্প্রদায় এমনিতেই শাসক তৃণমূলকে ভোট দেয় না। তাঁর কথায়, ‘‘ভোট দিলে আমরা পুরুলিয়ায় ২ লক্ষের বেশি ভোটে হারতাম না। পুরুলিয়ার ৯টি আসনের মধ্যে ৬টি আমাদের হাতে নেই। আমি এখানে ভোটের রাজনীতি করতে আসিনি। যদি তাই হত, তা হলে গাড়ি থেকে নেমে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতাম না।’’ সেই সময় অভিষেকের কাছ থেকে সাহায্যের আশ্বাস পেয়ে অবরোধ তুলে নিয়েছিলেন কুড়মিরা। এ বার তৃণমূল নেতার কনভয়ে হামলার ঘটনা ঘটল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন