Abhishek Banerjee

বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা আছে জানিয়েও অভিষেক বললেন, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার রাস্তা খোলা আছে

বিচারব্যবস্থায় আস্থা থাকলেও সিঙ্গল বেঞ্চের রায় যে নিয়ে তাঁর যে বক্তব্য রয়েছে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অভিষেক। তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘উচ্চতর বেঞ্চে বা আদালতে যাওয়ার রাস্তা খোলা আছে।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৩ ১৮:৩২
Share:

অভিষেক তাঁর উপরে করা জরিমানার নির্দেশেরও কিছু পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

আদালত তাঁর আবেদন খারিজ করেছে। তবু বিচারব্যবস্থার উপর তাঁর আস্থা আছে বলে জানালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় তাঁকে এবং বহিষ্কৃত তৃণমূল যুবনেতা কুন্তল ঘোষকে ডেকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি বা সিবিআই জেরা করতে পারবে বলে নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন অভিষেক। যার প্রেক্ষিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে মামলাটি স্থানান্তরিত করেছিল দেশের শীর্ষ আদালত। কিন্তু সেই এজলাসেও স্বস্তি পেলেন না অভিষেক। উল্টে ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হল তাঁকে।

Advertisement

সেই রায়ের প্রেক্ষিতেই অভিষেক বলেছেন, ‘‘একক বেঞ্চ যা নির্দেশ দেওয়ার দিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে যদি আমাকে ডাকা হয়, তবে দরকার হলে আমি যাত্রা (আপাতত অভিষেক কলকাতার বাইরে তৃণমূলের নব জোয়ার যাত্রা কর্মসূচিতে রয়েছেন) থামিয়ে যাব। সহযোগিতা করব। এটা আমার কর্তব্য।’’

তবে পাশাপাশিই অভিষেক বলেছেন, তিনি ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে বা কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করবেন। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমার সামনে উচ্চতর বেঞ্চে বা আদালতে যাওয়ার রাস্তাও খোলা আছে।’’ বৃহস্পতিবার যখন অভিষেক এ কথা বলছেন, তখন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিন্‌হার একক বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছেন তাঁর আইনজীবী কিশোর দত্ত। প্রধান বিচারপতি মামলা করার অনুমতিও দিয়েছেন। শুক্রবার সেই শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা।

Advertisement

অভিষেক তাঁর উপরে করা জরিমানার নির্দেশেরও কিছু পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আদালত আমাকে সময় নষ্ট করার জন্য জরিমানা করেছে। কিন্তু যখন আদালতে কথায় কথায় জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়, তখন কেন সময় নষ্টের কথা বলে জরিমানা করা হয় না?’’ সম্প্রতি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কনভয়ের গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে এক জনের। সেই সূত্রেই অভিষেকের প্রশ্ন, ‘‘কনভয়ের গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হলে কেন জরিমানা করা হয় না?’’

কুন্তলের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় অভিষেককে ‘অকারণে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। কুন্তল প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তাঁকে অভিষেকের নাম বলার জন্য চাপ দিচ্ছে ইডি-সিবিআই। কুন্তল যে দিন ওই অভিযোগ করেন, তার আগের দিনই শহিদ মিনারের ছাত্র-যুব সম্মেলন থেকে অভিষেক বলেছিলেন, কুণাল ঘোষ এবং মদন মিত্র যখন কেন্দ্রীয় সংস্থার হেফাজতে ছিলেন, তখন তাঁদেরও অভিষেকের নাম বলার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি শুনেছিলেন। ওই দু’টি ঘটনাকে জুড়েই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ ছিল, কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় দরকারে অভিষেককে জেরা করতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। বৃহস্পতিবার অভিষেক সেই প্রসঙ্গও টেনে এনে বলেন, ‘‘আমি যে দিন মদন মিত্র, কুণাল ঘোষের কথা বলেছি, একই দিনে অমিত শাহ বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদীর নাম নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। অর্থাৎ, ইডি-সিবিআই যে সরকারের হয়ে কাজ করে, তা মেনে নিয়েছিলেন স্বয়ং দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমার কথাকে তো উনিই বৈধতা দিয়েছিলেন!’’

অভিষেকের আরও বক্তব্য, ‘‘দরকার হলে এক হাতে ইডি-সিবিআই লাগান। অন্য হাতে ফাঁসিকাঠ তৈরি করুন। আমি নিজে গিয়ে ফাঁসিকাঠে মৃত্যুবরণ করব। এই কথাটা সারা ভারতের আর কোনও রাজনীতিক বলতে পারবেন না!’’

বৃহস্পতিবার তাঁর মামলায় আদালতের নির্দেশ ছাড়াও আরও কয়েকটি বিষয়ে মন্তব্য করেছেন অভিষেক।

এগরা বিস্ফোরণ

অভিষেক বলেন, ‘‘মৃত্যুর মতো ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। কিন্তু ওই ঘটনায় দু’জন মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা ১০০ দিনের কাজের জবকার্ড হোল্ডার। টাকা না পেয়ে বাজি কারখানায় কাজ নিয়েছিলেন দুই মহিলা। ১০০ দিনের টাকা পাননি বলেই। তার দায় এড়াতে পারেন না প্রধানমন্ত্রী মোদী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ।’’

বিজেপির পাল্টা যাত্রা

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং অভিষেকের রাজনৈতিক লড়াই এখন তুঙ্গে। অভিষেকের ‘নব জোয়ার যাত্রা’ নিয়ে প্রায় রোজই কটাক্ষ করেন শুভেন্দু। অভিষেক তাঁর কর্মসূচি শুরু করার পর বিজেপিও একটি যাত্রা কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেটি হবে ২১ দিনের। যাত্রা অবশ্য শুরু হবে অভিষেকের বিপরীত মুখে। অভিষেক যাত্রা করছেন উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গে। বিজেপির যাত্রা করার কথা দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গে। সেই যাত্রায় অংশ নেওয়ার কথা শুভেন্দু এবং রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের। সেই প্রস্তাবিত কর্মসূচি নিয়ে অভিষেকের মন্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েত যাত্রার আগে দিল্লি যাত্রা করুক! ১০০ দিনের টাকা আটকে রাখা নিয়ে দিল্লির বিরুদ্ধে লড়াই করুক! রাজ্যের মানুষের প্রাপ্য ছিনিয়ে আনুক! তবে বুঝব। যাত্রা যে কেউ করতে পারে। তবে মোদী-শাহের তল্পিবাহকের কাজ না করে মানুষের স্বার্থকে সামনে রেখে এগোক।’’

নব জোয়ার যাত্রা

সংবাদমাধ্যম অভিষেককে প্রশ্ন করেছিল, তাঁর দেখাদেখি অনেকেই জনসংযোগ যাত্রা শুরু করছেন। জবাবে অভিষেক বলেন, ‘‘আমি কিছু শুরু করিনি। মানুষের সঙ্গে জোড়ার এই যাত্রা গান্ধীজি শুরু করেছিলেন। আমার যাত্রা গান্ধীজির থেকে অনুপ্রাণিত।’’

নওশাদ সিদ্দিকি এবং ডায়মন্ড হারবার

২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ জানিয়েছেন, দল অনুমতি দিলে তিনি পরের লোকসভা ভোটে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে অভিষেকের বিরুদ্ধে লড়তে চান। অভিষেককে তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক দেশ। ভোটে যে কেউ দাঁড়াতে পারে। আমার কোনও সমস্যা নেই। আমি স্বাগত জানাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন