এক দল বুক বাজিয়ে বলছে, রাজ্যের কোনও ব্লকেই বিরোধী বলে কিছু থাকবে না! লাগাতার ধাক্কায় বিপর্যস্ত অন্য পক্ষ বিধানসভা চত্বরে ধর্না দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দল ভাঙানোর খেলা নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে।
বিরোধী কংগ্রেসের হাত থেকে মালদহ এবং বামেদের কাছ থেকে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ সদ্য ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। জেলায় জেলায় একের পর এক পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত বা পুরসভা ভাঙানো চলছেই। প্রশ্ন উঠেছে, বিধানসভা-সহ সাম্প্রতিক সব নির্বাচনে বিপুল সাফল্য পাওয়ার পরেও বিরোধীদের হাত থেকে এ ভাবে নির্বাচিত সংস্থা ভাঙিয়ে নেওয়া কতটা নৈতিক? কিন্তু শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যে নৈতিকতার দায় নিয়ে বিশেষ ভাবিত নন, তার প্রমাণ মিলেছে শুক্রবার।
তৃণমূলের হয়ে দল ভাঙানোর খেলায় এখন প্রধান দুই কারিগর যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এ দিন মেয়ো রোডের সমাবেশ থেকে অভিষেক সরাসরি বলেছেন, ‘‘জোটের এমনই দুর্ভাগ্য, প্রকৃত কংগ্রেস-সিপিএম কর্মীরা জোটকে মেনে নিতে পারেননি। দেখলেন তো, মালদহ জেলা পরিষদ আমরা দখল করে নিয়েছি! মুর্শিদাবাদও কয়েক দিনের মধ্যে হয়ে যাবে। আর দু-তিনমাসের মধ্যে দূরবীন দিয়েও কোনও ব্লকে কংগ্রেস-সিপিএমকে দেখা যাবে না!’’ তাঁর আরও ঘোষণা, ‘‘আগামী দিনে ৪২টির মধ্যে ৪২টি লোকসভা আসনই আমরা পাব। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ, ছাত্র সংসদ সব দখল করে দেখাব!’’ আর শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেস ফুটো নৌকা! জল ঢুকছে। আর সিপিএম ডায়নোসর হয়ে গিয়েছে!’’
শাসক দলের নেতারা যখন এমন কটাক্ষ করছেন, বিরোধী দল কংগ্রেসের বিধায়কেরা তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সোমবার অধিবেশন শুরুর আগে বিধানসভা চত্বরে তাঁরা ধর্নায় বসবেন। বাম বিধায়কেরাও গণতান্ত্রিক পরিবেশের উপরে আঘাত নিয়ে মুলতবি প্রস্তাব বা অন্য ভাবে আলোচনা চান। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান এ দিন বলেন, ‘‘যাঁরা বিরোধী দল থেকে লোক নিয়ে যাচ্ছেন, সৎসাহস থাকলে তাঁদের ইস্তফা দিয়ে ফের মানুষের রায় নিতে আসতে বলুন।’’ আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘রাজ্যের প্লাবন-ভাঙন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কোনও মাথাব্যথা নেই। উনি অগণতান্ত্রিক ভাবে শুধু দল ভাঙার সর্বগ্রাসী মানসিকতা নিয়ে চলছেন! দল ভাঙতে গিয়ে তফসিলি, দলিত মহিলারাও তৃণমূলের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না!’’ জোর করে দখল নিলেও মালদহ, মুর্শিদাবাদের মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে নেই বলেও দাবি করেছেন অধীর।