সরকারি উদ্যোগে খামতি নেই। কিন্তু ডাক্তারদের সাড়া কই!
রাজ্যের সুপার-স্পেশ্যালিটি হাসপাতালগুলি ডাক্তারের অভাবে ধুঁকছে। একই কারণে এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের স্বাস্থ্য-জেলা গড়ার প্রয়াসও ধাক্কা খেল।
ডায়মন্ড হাবরার এবং কাকদ্বীপ মহকুমার ১৩টি ব্লক নিয়ে গড়ে ওঠা স্বাস্থ্য-জেলায় ১৭ জন চিকিৎসক নিয়োগের জন্য অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল রাজ্য। সোমবার সেই ইন্টারভিউতে এলেন মাত্র ৯ জন। তা-ও তাঁদের বেশির ভাগই চান, কলকাতার কাছে নিয়োগ! ফলে, আতান্তরে স্বাস্থ্য-জেলার কর্তারা। কী করবেন, ভেবেই পাচ্ছেন না তাঁরা।
স্বাস্থ্য-জেলার এক কর্তা বলেন, ‘‘ডাক্তারের অভাবটাই বড় সমস্যা। চাকরিপ্রার্থীরা বেশির ভাগই ছিলেন কলকাতার বাসিন্দা। বেশির ভাগই কলকাতার কাছাকাছি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করতে চান। তা হলে গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো কী ভাবে গড়ে উঠবে? এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।’’ এ বিষয়ে রাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধিকর্তা সঙ্ঘমিত্রা ঘোষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।
২০১১ সালে প্রথম বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুন্দরবনের চিকিৎসা পরিকাঠামো ঢেলে সাজার পরিকল্পনা করেছিলেন। তার অঙ্গ হিসেবেই ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালকে কেন্দ্রে রেখে স্বাস্থ্য-জেলার ঘোষণা করা হয়। পরিকল্পনা হয় ওই হাসপাতালকে সুপার-স্পেশ্যালিটি স্তরে উন্নীত করা হবে এবং একটি মেডিক্যাল কলেজও হবে। যার নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নতুন করে পরিকাঠামো গড়া হয়েছে ওই হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য-জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। কিন্তু চিকিৎসকের অভাব সর্বত্র। ধুঁকছে হাসপাতালটিও। জটিল অসুখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে রোগীকে কলকাতায় ‘রেফার’ ছাড়া কিছু করার থাকে না। ফলে, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে চিকিৎসার যে সুবিধা দিতে মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগী হন, তা সফল হয়নি।
সম্প্রতি পুরুলিয়া সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, নতুন করে এই মুহূর্তে অন্তত আর কোনও সুপার-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়তে চায় না রাজ্য। তিনি চিকিৎসকের অভাবের কথাও মেনে নেন। যেগুলো হয়েছে, সেগুলো দাঁড় করানোই যে এখন সরকারের কাজ, তা-ও স্পষ্ট করে দেন মমতা। ফলে, ডায়মন্ড হারবার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন জেলা প্রশাসনের কর্তাদের মধ্যে জল্পনা তুঙ্গে, তখন ‘স্বাস্থ্য-জেলা’র জন্যেও ডাক্তার না-মেলায় মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প কবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্য-জেলায় কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা-সহ সুন্দরবন এলাকায় বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। মাসিক ৪০ হাজার টাকা চুক্তিতে সেখানে চিকিৎসক নিয়োগের জন্যই চেষ্টা করা হয় সোমবার। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন (ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশন) প্রকল্পের অধীনে এক জন থ্যালাসেমিয়া বিশেষজ্ঞ-সহ ১৭ জন চিকিৎসককে নিয়োগ করা হতো। কিন্তু তা ধাক্কা খেল। কোনও চিকিৎসক যে গ্রামাঞ্চলে কাজ করতে চাইছেন না তা মেনে নিয়েছেন জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তরুণ রায়ও।
সুপার-স্পেশ্যালিটিগুলিতে ডাক্তারের ব্যবস্থা করা যাবে কী করে, ভেবে বার করতে পারেননি স্বাস্থ্যকর্তারা। স্বাস্থ্য-জেলাতেও সমস্যা কী ভাবে মিটবে, প্রশ্ন উঠে গেল।