লক্ষ্য মন্দির গ্রাম মলুটির পর্যটন

তথ্যকেন্দ্র খুলে তারাপীঠে বাস দিল ঝাড়খণ্ড সরকার

একটি পর্যটন তথ্য কেন্দ্র। সঙ্গে আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস। তারাপীঠে মা তারার দর্শনে আসা পর্যটকদের ভিড় টানতে দু’টি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করল ঝাড়খণ্ড সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৫৯
Share:

তথ্যকেন্দ্রের উদ্বোধনে ঝাড়খণ্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাজির রামপুরহাটের মহকুমাশাসক।

একটি পর্যটন তথ্য কেন্দ্র। সঙ্গে আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস।

Advertisement

তারাপীঠে মা তারার দর্শনে আসা পর্যটকদের ভিড় টানতে দু’টি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করল ঝাড়খণ্ড সরকার। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল বীরভূমের সীমানা ঘেঁষা ঝাড়খণ্ডের টেরাকোটার মন্দিরময় গ্রাম মলুটি থেকে তারাপীঠ বাস সার্ভিস। পাশাপাশি তারাপীঠের কবিচন্দ্রপুর মৌজায় একটি বেসরকারি হোটেলে ঝাড়খণ্ড সরকারের পর্যটন দফতরের একটি অস্থায়ী তথ্য কেন্দ্র। এই উপলক্ষে বুধবার তারাপীঠে হাজির হয়েছিলেন ঝাড়খণ্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের ম্যানেজার প্রদীপকুমার। উদ্বোধনে ছিলেন রামপুরহাটের মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস, মলুটির ইতিহাস লেখক গোপাল দাস মুখোপাধ্যায় এবং মলুটির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শিবদুর্গা গ্রামীণ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি বাবলু চট্টোপাধ্যায়।

বৃহস্পতিবার থেকে ২৫ আসনের ওই বাস চালু হয় যাবে। প্রদীপবাবু জানান, বাস এবং তথ্যকেন্দ্র, দু’টির দেখভালের দায়িত্ব ওই স্বেচ্ছাসবী সংস্থার উপর দেওয়া হয়েছে। বাবলুবাবু বলেন, ‘‘জনশ্রুতি বলে তারাপীঠের তারা মা এবং মলুটির মৌলীক্ষা মা সম্পর্কে দুই বোন। সেই সূত্রে দু’টি স্থানের মধ্যে একটা আত্মিক সম্পর্ক আছে। তাই ওই দুই তীর্থস্থানের মেলবন্ধন ঘটানোর জন্য দীর্ঘ দিন থেকে চেষ্টা চলছে। গত ২৩ জুন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস মলুটিতে রাত্রিবাস করেন। পরের দিন সকালে তারাপীঠে এসে পুজো দেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে মলুটিকে তুলে ধরতে তারাপীঠকে যোগ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। সেই উদ্যোগের ফল হিসেবেই এই তথ্যকেন্দ্র এবং বাস সার্ভিস চালু হল।’’

Advertisement


এই সেই বাস।

ঘটনা হল, বীরভূম সীমানা ঘেঁষা শিকারিপাড়া থানার মন্দিরময় মলুটি গ্রামকে আগেই রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছিল তৎকালীন বিহার সরকার। ১৯৯৫ সালে মলুটি গ্রামের প্রাচীন টেরাকোটার মন্দিরগুলি সংরক্ষণের কাজও শুরু হয়। বর্তমানে মলুটি গ্রামে ৬৭৫টি পরিবারের বাস। আগে ১০৮টি থাকলেও বর্তমানে ৭২টি মন্দিরই টিকে আছে। সেখানে রামায়ণের কাহিনির বিভিন্ন মুহূর্তের পাশাপাশি রয়েছে দেবী দুর্গা মহিষাসুরমর্দিনী ও ছিন্নমস্তার মূর্তির চিত্রও। মলুটির অধিকাংশ পরিবারই আবার বাংলাভাষী। জনশ্রুতি অনুযায়ী, মলুটিতে মা মৌলীক্ষা মা আর তারাপীঠের মা তারা দুই বোন। দুর্গাপুজোর পরে শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে মা তারার আবির্ভাব তিথিতে মা তারাকে এক দিনের জন্য মন্দির চত্বরে বিরাম মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। সে দিন মা তারাকে পশ্চিমে শ্মশানের দিকে মুখ করে রাখা হয়। আবার পশ্চিম প্রান্তে মলুটি গ্রাম। সেখানে গ্রামের শেষ প্রান্তে মৌলীক্ষা মায়ের মূর্তি। অনেকের ধারণা, মা তারাকে ওই দিন বোনের সঙ্গে দেখা করার জন্যই দিনভর বাইরে রাখা হয়।

বাঙালি অধ্যুষিত এই পর্যটন কেন্দ্রের উন্নতির জন্য ঝাড়খণ্ড সরকার অনেক দিন আগেই শিকারিপাড়া থেকে মলুটি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার শুরু করেছিল। সম্প্রতি সেই কাজ শেষ হয়েছে। আগামী দিনে মন্দিরগুলির আরও একদফা পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হবে বলেও রাজ্য সরকার জানিয়েছে। এ দিনই সন্ধ্যায় ফোনে ঝাড়খণ্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের মুখ্য ম্যানেজার সুনীল কুমার জানান, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর কৌশিকী অমাবস্যার সময় ঝাড়খণ্ডের পর্যটন মন্ত্রী অমর বাউড়ি তারাপীঠে এসে পর্যটনের উন্নয়নের ব্যাপারে দেখভাল করতে আসবেন।

এ দিকে, তারাপীঠে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মলুটি গ্রামে পাঠানোর ব্যাপারে এ দিনের উদ্বোধনে সামিল ‘তারাপীঠ মা তারা সেবাইত সমিতি’র সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায়, সম্পাদক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায়, সাহাপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, লজ ম্যানেজার সুনীল গিরিদের কাছে বিশেষ ভাবে আবেদন রাখেন ঝাড়খণ্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা। তারাময়বাবু পরে বলেন, ‘‘প্রথম দিকে যদি তেমন যাত্রী না-ও হয়, তার পরেও বাস সার্ভিস যাতে বন্ধ না থাকে, সে বিষয়টি দেখতে হবে। মুলুটির পর্যটনের ব্যাপারে সমিতির পক্ষ থেকে যথা সম্ভব সাহায্য করা হবে।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন