জুহির আবদার ছিল রিসর্ট, দাবি সিআইডির, পাশে দাঁড়ালেন রূপা

শিশু পাচারের ঘটনায় তদন্তের জাল গোটাতে রাজ্য বিজেপি নেত্রী জুহি চৌধুরীকে এ বার হাতে পেতে মরিয়া সিআইডি। পাচারকারীদের মদত দেওয়ার অভিযোগে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালিতে জুহির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:১৩
Share:

রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুহি চৌধুরী।ফাইল চিত্র।

শিশু পাচারের ঘটনায় তদন্তের জাল গোটাতে রাজ্য বিজেপি নেত্রী জুহি চৌধুরীকে এ বার হাতে পেতে মরিয়া সিআইডি। পাচারকারীদের মদত দেওয়ার অভিযোগে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালিতে জুহির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। তবে তিনি এখনও অধরাই। সিআইডি সূত্রে সোমবার বলা হয়েছে, পাচার-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত চন্দনা চক্রবর্তীর সঙ্গে পুরনো যোগাযোগ ছিল জুহির। চন্দনাকে জেরা করে সিআইডি গোয়েন্দাদের দাবি, জলপাইগুড়ির সংশ্লিষ্ট হোমের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার বন্দোবস্ত করার বিনিময়ে জুহি ডুয়ার্সে একটি রিসর্ট দাবি করেছিলেন। জুহিকে তা দিতে রাজিও হয়েছিলেন চন্দনারা।

Advertisement

প্রসঙ্গত, দত্তক দেওয়ার নামে শিশু পাচারের অভিযোগে গত শনিবার সিআইডি-র হাতে গ্রেফতার হন নর্থ বেঙ্গল পিপলস ডেভলপমেন্ট সেন্টারের কর্ণধার চন্দনা চক্রবর্তী৷ তাঁর সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছে হোমের আর এক আধিকারিক সোনালি মণ্ডল৷ ওই ঘটনাতেই নাম জড়িয়েছে রাজ্য বিজেপি-র মহিলা মোর্চার সাধারণ সম্পাদক জুহি চৌধুরীর।

জুহির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খারিজ করতে এ দিন মাঠে নামেন খোদ রাজ্য বিজেপি-র মহিলা মোর্চার সভানেত্রী তথা রাজ্যসভা সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। রূপার কথায়, ‘‘জুহি এ ধরনের কোনও কাজ করতেই পারেন না।’’ তাঁর বক্তব্য, শিশু পাচারের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত চন্দনা চক্রবর্তী জুহিকে জানিয়েছিলেন, তাঁদের হোম বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। তাঁদের হোম থেকে শিশু পাচার হচ্ছে বলে কেউ বা কারা পুলিশের কাছে নালিশও জানিয়েছেন। তার ভিত্তিতেই জুহি ওঁদের সাহায্য করেছেন মাত্র। রূপার পাল্টা অভিযোগ, বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে রাজ্য সরকার। মিথ্যা মামলায় বিজেপি-র নেতানেত্রীদের জড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। যদিও রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন জানান, গোটা ঘটনা নিয়ে বিজেপি দলীয় স্তরে তদন্ত শুরু করেছে। জুহির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দল পাশে থাকবে না। এর আগে শিশু পাচার-কাণ্ডে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির আর এক প্রভাবশালী নেতা দিলীপ ঘোষ। দল ইতিমধ্যেই তাঁর থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন:
ভাঙচুর বন্ধ করবোই, চ্যালেঞ্জ মমতার

সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসারেরা অবশ্য এ সব কথা কানেই তুলছেন না। এ দিনও তাঁরা জানান, জলপাইগুড়ির ওই হোমের বিরুদ্ধে দিল্লিতে মহিলা ও শিশু কল্যাণ দফতরে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে জেনেই জুহির দ্বারস্থ হয়েছিলেন চন্দনারা। একই জায়গার বাসিন্দা হওয়ার কারণে চন্দনা ও জুহির মধ্যে আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল। ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, জুহি দাবি করেছিলেন তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের অনেকের যোগাযোগ রয়েছে। সেই যোগাযোগের সুবাদে ওই সব অভিযোগ ‘ম্যানেজ করা যাবে’ বলে চন্দনাকে আশ্বস্তও করেছিলেন এই বিজেপি নেত্রী।

সিআইডি সূত্রে বলা হচ্ছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন চন্দনারা।

দিল্লিতে তাঁদের নিয়ে যান জুহি। কিন্তু মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়নি বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। তদন্তকারীদের দাবি, সব ধামাচাপা দেওয়ার বিনিময়ে ডুয়ার্সে রিসর্ট পাওয়ার কথা ছিল জুহির। যা দিতে তৈরিও ছিলেন চন্দনারা। এ ছাড়াও তাঁদের সাহায্য নিয়ে জলপাইগুড়িতে একটি হোম খোলার কথা ছিল জুহির। এক অফিসারের দাবি, শিশু পাচারের অভিযোগ ওঠায় হোমের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ নিয়ে যে সমস্যায় পড়তে হবে, এটাও বুঝেছিলেন চন্দনারা। তাই জুহির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তা ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা।

রূপা এ দিন বলেন, জুহির বাবা বহু দিনের বিজেপি নেতা। সবাই তাঁকে ‘নাড়ুদা’ বলে চেনেন। সেই পরিবারের মেয়ে হিসেবেই কাউকে সাহায্য করার জন্য তিনি কোন দলের, তা দেখতেন না জুহি। রূপার প্রশ্ন, ‘‘এতে আপত্তি কোথায়?’’ একই মত জেলা বিজেপি সভাপতি দীপেন প্রামাণিকেরও।

কিন্তু, জুহি যদি নির্দোষই হন, তা হলে কেন তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? সোমবারও বারবার ফোন করে সাড়া মেলেনি। জবাবে দীপেনবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘যত দূর জানি, জুহি পলাতক নন৷ তদন্তের জন্য রবিবার আমরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম৷ আমরা যদি তাঁর নাগাল পাই, তা হলে সিআইডি পাবে না কেন?’’ তবে বিজেপি সূত্রে খবর, আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করেই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন জুহি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন