ত্রিস্তরীয় সুরক্ষা বলয়ে ডেরা পাল্টে ঘুরছেন গুরুঙ্গ

পাহাড় অগ্নিগর্ভ হওয়ার পর থেকে এডিজি-র দেহরক্ষীকে খুনের চেষ্টা, ষড়যন্ত্র, দাঙ্গা, অস্ত্র আইন মিলিয়ে একাধিক মামলায় তাঁকে জড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৭ ০৩:৪১
Share:

ছবি: এএফপি

এক ঝাঁক দুঁদে আইপিএস অফিসার তো আছেনই। তার উপরে বাড়ির কাছে দিনরাত সেনা-আধা সেনার দল স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র উঁচিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাহাড় অগ্নিগর্ভ হওয়ার পর থেকে এডিজি-র দেহরক্ষীকে খুনের চেষ্টা, ষড়যন্ত্র, দাঙ্গা, অস্ত্র আইন মিলিয়ে একাধিক মামলায় তাঁকে জড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। বিমল গুরুঙ্গ এখন তাই জিএলপি বাহিনীর (গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেল) বাছাই করা প্রশিক্ষিতদের ঘেরাটোপে রয়েছেন বলে সন্দেহ পুলিশের। তাদের আরও ধারণা, সকাল থেকে বিকেলের মধ্যে অন্তত ৩ দফায় ডেরা পাল্টে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ৩০-৩২টি মোবাইল ব্যবহার করে নির্দেশ-পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

Advertisement

এক পুলিশকর্তা জানান, অতীতে পুলবাজার-জোড়থাং রোডের বনাঞ্চলে স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহারের কথা টের পান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাই এ বার যাতে কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী পাহাড়ের অস্থির পরিস্থিতির সুযোগ না নিতে পারে, সে দিকে বাড়তি নজর রাখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দার একটি সূত্রের দাবি, দার্জিলিঙের আন্তর্জাতিক গুরুত্বের কথা মাথায় রেখেই তাদেরও সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

আরও পড়ুন:

Advertisement

মোর্চা নেতা গ্রেফতারে রণক্ষেত্র পাহাড়, চলছে পাথর, লাঠি, গ্যাস

কড়া কোর্টও, দিশাহারা দশা মোর্চার

এ সব মাথায় রেখেই মেপে পা ফেলতে হচ্ছে গুরুঙ্গকে। মোর্চা সূত্রে খবর, খুচখাচ গন্ডগোল বাধানোর পথে হাঁটতে নিষেধ করেছেন তিনি। গত কাল রাতে হ্যাপি ভ্যালি চা বাগান এলাকা থেকে সরে জামুনির কাছাকাছি পৌঁছে ঘনিষ্ঠদের বার্তা পাঠান গুরুঙ্গ। ‘ডান্ডি অভিযান’-এর ধাঁচে সকালে গ্রাম থেকে মহকুমা-জেলা সদরে মিছিল নিয়ে জড়ো হওয়ার নির্দেশ দেন। এর পর আচমকা কোনও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসে টানা অবস্থান চালানোর ছকও ছিল। যাঁরা মোর্চার আন্দোলন কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁদের মতে, এমন জমায়েতে আচমকা আত্মপ্রকাশ করতেন গুরুঙ্গ। মোটরবাইকে ঘুরে আড্ডার ছলে এখন আন্দোলনের রূপরেখা চালাচালি হচ্ছে পাহাড়ে। সে ভাবেই জিএলপির শতাধিক সদস্যের কাছে শুক্রবার রাতে খবর পৌঁছে যায়। কিন্তু, পুলিশ মিছিল শহরে ঢুকতে না দেওয়ায় সেই কৌশল ভেস্তে যায়।

গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, গুরুঙ্গকে ঘিরে এখন ত্রিস্তরীয় সুরক্ষা বলয়। যেখানে তিনি থাকেন, তার থেকে গড়ে ২ কিমি দূরত্বে বাইকে ঘোরাফেরা করেন ১০-১২ জন জিএলপি। গোপন ডেরার সামনে-পিছনে থাকেন দু’জন। চলাফেরার সময়ে গুরুঙ্গের চারদিকে থাকেন ৩-৪ জন। এঁদের কাছে থাকা একাধিক ফোনেও বার্তা যেত। কিন্তু, ফোনে আড়ি পাতা হতে পারে সন্দেহে বাইক-বাহিনীর উপরে বেশি জোর দিয়েছেন গুরুঙ্গ।

পাহাড়ে যা পরিস্থিতি, তাতে সতর্ক থাকতে হচ্ছে গুরুঙ্গকে। আবার জিএনএলএফ, জন আন্দোলন পার্টি গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে মাঠে নামায় বেশি দিন আড়ালে থাকাও কঠিন তাঁর পক্ষে। তাই গুরুঙ্গ কখন, কী ভাবে সামনে আসেন, তা নিয়েই জোর চর্চা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন