এ বার সোহম, প্রার্থী তালিকায় চমক একটাই

কলকাতার তৃণমূল ভবন থেকে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের হাতে যে প্রার্থী তালিকা তুলে দেওয়া হল, তাতে পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার জন্য চমক নেই বললেই চলে। ব্যতিক্রম শুধু বাঁকুড়ার বড়জোড়া।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০২:২৬
Share:

কলকাতার তৃণমূল ভবন থেকে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের হাতে যে প্রার্থী তালিকা তুলে দেওয়া হল, তাতে পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার জন্য চমক নেই বললেই চলে। ব্যতিক্রম শুধু বাঁকুড়ার বড়জোড়া।

Advertisement

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে আশাপ্রদ ফল হয়নি। লোকসভা ভোটেও বিরোধী দলের সঙ্গে ব্যবধান খুব বেশি ছিল না। তার উপর মাথা চাড়া দিচ্ছিল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। সব মিলিয়ে টিকিট প্রশ্নে মোটেও স্বস্তিতে ছিলেন না বড়জোড়ার বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। শেষ পর্যন্ত শিকে ছিঁড়ল না তাঁর কপালে। বড়জোড়ায় এ বার তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সোহম চক্রবর্তী। যিনি ভোটে জিতলে সাংসদ মুনমুনের সেনের পরে এ বার এক তারকা বিধায়কও পাবেন বাঁকুড়া! জেলার ১২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে ছিল ৯টি। বড়জোড়া বাদে বাকি ৮টিতেই বর্তমান বিধায়কেরা টিকিট পাচ্ছেন। সিপিএমের দখলে থাকা রানিবাঁধ, রাইপুর ও তালড্যাংরা আসনে এ বার প্রার্থী বদল করেছে শাসকদল। তালড্যাংরায় অবশ্য গত বার জোটের তরফে কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন। এ বার সিপিএমের হাত থেকে তালড্যাংরা ছিনিয়ে নিতে শাসক দলের ভরসা সমীর চক্রবর্তী।

এ দিন প্রার্থী তালিকা নিয়ে কলকাতায় তৃণমূল নেত্রীর সাংবাদিক বৈঠক শুরু হওয়ার মিনিট দশেক আগেই ফোনে আশুতোষবাবুর গলাটা বেশ মিনমিনে শুনিয়েছে। টিকিট নিশ্চিত কিনা, সে প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোনও জবাব তো দিতে পারলেনই না, বরং সংবাদমাধ্যমের কাছেই কোনও খবর আছে কিনা তা নিয়েই পাল্টা জিজ্ঞাসা করলেন। আর সাংবাদিক বৈঠক শেষ হওয়ার পরে ফোনটাই বন্ধ করে দিলেন! বড়জোড়ার অলিগলিতে ততক্ষণে চাউর হয়ে গিয়েছে, প্রার্থী হয়েছেন সোহম। তবে তৃণমূলের হাতে থাকা জেলার ন’টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে শুধু বড়জোড়াতেই কেন প্রার্থী বদল হল, তা নিয়ে দলের নিচুতলা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে জল্পনা দানা বেঁধেছে।

Advertisement

বস্তুত, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বড়জোড়া ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে পাঁচটিতে হারে তৃণমূল। আশুতোষবাবুর নিজের এলাকা খাঁড়ারি গ্রাম পঞ্চায়েতও বামেদের দখলে যায়। পঞ্চায়েত সমিতির ৩১টি আসনের মধ্যে ১৩টি এবং জেলা পরিষদের তিনটির মধ্যে একটি আসনে হারে তৃণমূল। গত লোকসভা ভোটেও সিপিএমের থেকে মাত্র তিন শতাংশ বেশি ভোটে এগিয়েছিল তৃণমূল। এই সব ভোটে আশানরূপ ফল না হওয়ায় বিধায়ককেই একাধিকবার কাঠগড়ায় তুলেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে, এই সব বিষয় ছাপিয়ে আরও একটি জল্পনা চলছে। সোহম নিজে যুব তৃণমূলের পদাধিকারী এবং সংগঠনের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ ‘ঘনিষ্ঠ’। অভিষেক আবার দলের তরফে পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার পর্যবেক্ষকও। সোহমকে এ বার টিকিট দেওয়ার কথা অনেক আগেই চাউর হয়েছিল। দলের অনেকে মনে করছেন, অভিষেকের জন্যই বড়জোড়ায় প্রার্থী করা হয়েছে টলি-পাড়ার ওই নায়ককে।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুণ

তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, হাতির উপদ্রবও বড়জোড়া অঞ্চলে একটি জ্বলন্ত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া বড়জোড়ায় একের পর এক নির্বাচনে ভাল ফল না হওয়ায় শীর্ষ নেতৃত্ব ঝুঁকি না নিয়ে তারকা প্রার্থীর উপরই ভরসা রাখলেন। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা বড়জোড়ারই বাসিন্দা সুজয় চৌধুরীর অবশ্য দাবি, “তারকা প্রার্থীর উপরে মানুষ ভরসা করবে না। ভোটে জিতে তারকা আর বড়জোড়ায় ফিরে আসবেন না, এটা মানুষ জানেন। কাজেই আমরা এগিয়ে।’’ যা শুনে জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, ‘‘সুজয়বাবু বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন, দু’বছর আগে এই বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রেই ন’বারের সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়াকে হারিয়েছিলেন রাজনীতিতে একেবারে আনকোরা মুনমুন সেন।’’ দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-র দাবি, “জেলার সব কেন্দ্রেই এ বার ঘাসফুল ফুটবে।’’

বাঁকুড়ায় সোহমকে এনে যা-ও একটু চমক দিয়েছে তৃণমূল, পড়শি জেলা পুরুলিয়ায় অবশ্য সেটুকুও নেই।

যদিও ঘটনা হল, পুরুলিয়ায় শাসকদলের প্রার্থী তালিকা নিয়ে জোর জল্পনা চলয়েছিল দলেরই অন্দরে। জয়পুর, বাঘমুণ্ডি, বান্দোয়ানের মতো বিরোধীদের দখলে থাকা আসনগুলিতে সর্বসম্মতভাবে এক জন প্রার্থীর নাম জেলা নেতৃত্ব রাজ্যকে জানাতে পারেনি। একাধিক প্রার্থীর নাম ছিল তালিকায়। পাশাপাশি দখলে থাকা রঘুনাথপুরে ফের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি প্রার্থী হচ্ছেন কিনা, তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল প্রার্থী তালিকায় তাঁর নাম জেলা সভাপতি না রাখায়। তবে, এ দিন প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে দেখা যাচ্ছে বড় কোনও চমক নেই তাতে।

বলরামপুর, পাড়া, মানবাজার, রঘুনাথপুর, কাশীপুর—জেলার ৯টি বিধানসভা আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে থাকা এই পাঁচটি কেন্দ্রে ফের প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান বিধায়কেরাই। একমাত্র পুরুলিয়ার ক্ষেত্রে বর্ষীয়ান নেতা কে পি সিংহদেওয়েরর বদলে দলনেত্রী প্রার্থী করেছেন কেপি-র ছেলে দিব্যজ্যোতি প্রসাদ সিংহদেওকে। দল সূত্রের খবর, কে পি সিংহদেও কয়েক মাস ধরেই অসুস্থ। এ দিন কে পি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করে আমার শারীরিক অবস্থা জানতে চেয়ে এ বার ভোটে লড়তে পারব কিনা, জানতে চেয়েছিলেন। আমি অসুস্থতার কথা জানানোর পরে উনি আমার ছেলের সম্পর্কে জানতে চান। এবং পরে ছেলেকে নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতেও বলেন। এ দিন শুনলাম দলনেত্রী ছেলেকে পুরুলিয়া কেন্দ্রে প্রার্থী করেছেন।” দিব্যজ্যোতি বর্তমানে দিল্লিতে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে কর্মরত। রাজনীতির সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ না থাকলেও আদ্যোপান্ত রাজনৈতিক পরিবেশে বড় হওয়া দিব্যজ্যোতিকে প্রার্থী বেছে মমতা খুব ভুল করেননি বলেই দাবি কে পি-র অনুগামীদের।

বান্দোয়ানে জেলা তৃণমূলের সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর ঘনিষ্ঠ নবেন্দু মাহালি এ বার টিকিট না পাওয়ায় কিছুটা হলেও অবাক হয়েছেন দলের কর্মীদের একাংশ। বান্দোয়ানের জন্য শান্তিরামবাবু যে তালিকা রাজ্যে পাঠিয়েছিলেন, তাতে তিন জনের মধ্যে প্রথম নামটাই ছিল নবেন্দুবাবুর। সিপিএমের দখলে থাকা এই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে এলাকার তৃণমূলের শিক্ষক নেতা রাজীব সোরেনকে। তাঁর স্ত্রী প্রতিমা সোরেন ওই এলাকায় জেলা পরিষদের তৃণমূলের সদস্য। অন্যদিকে কংগ্রেসের খাসতালুক বাঘমুণ্ডিতে তৃণমূল ভরসা রাখছে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা বাঘমুণ্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতোর একদা ঘনিষ্ঠ সমীর মাহাতোর উপরে। পাশাপাশি ফরওয়ার্ড ব্লকের দখলে থাকা জয়পুর আসনে তৃণমূল প্রার্থী করেছে কংগ্রেস থেকে আসা শক্তিপদ মাহাতোকে। জেলাপরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শক্তিপদবাবু গতবার নির্দল প্রার্থী হয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন