গুজরাত যদি প্রাণবন্ত (‘ভাইব্র্যান্ট’) হয়, বাংলা তবে বাণিজ্য বোঝে (‘বেঙ্গল মিনস বিজনেস’)। পর্দার আড়ালে এটাই ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি, দু’দিনের রাজ্য শিল্প সম্মেলনে সরকারি প্রতিনিধিদের শরীরী ভাষা।
মিলনমেলা প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে এ বার শিল্প সম্মেলন উঠে গিয়েছে পেল্লায় সাইজের কনভেনশন সেন্টারে। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘এ বারের শিল্প সম্মেলনই আড়েবহরে সব চেয়ে বড় ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’। আমাদের সামনে এখন গুজরাত ছাড়া কেউ নেই।’’
দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার প্রতিনিধিকে আপ্যায়নের জন্য তাই এলাহি ব্যবস্থা হচ্ছে কনভেনশন সেন্টার জুড়ে। তার সঙ্গে চলছে বাংলাকে শিল্পের গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরার মরিয়া চেষ্টা। ‘‘অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে বাংলাকে ব্র্যান্ড হিসেবে তুলে ধরতে সফল হয়েছে রাজ্য সরকার। ওই পথেই এ বার শিল্পের ব্র্যান্ডিং করা হবে সম্মেলন জুড়ে,’’ বলছেন নবান্নের ওই শীর্ষ কর্তা। তিনি জানান, বিমানবন্দর থেকে কনভেনশন সেন্টার পর্যন্ত রাস্তা ‘বেঙ্গল মিনস বিজনেস’ ব্র্যান্ডিংয়ে মুড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রতিনিধিদের যাতায়াতে যাতে কোনও অসুবিধা না-হয়, সেই জন্য রাস্তায় কড়া নজরদারি এবং নিশ্ছিদ্র ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকছে। কনভেনশন সেন্টার থেকে এ-দিক, ও-দিকে প্রতিনিধিদের নিয়ে যাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রত ছোট ছোট ঝাঁ-চকচকে বাস। পশ্চিমবঙ্গ যে শিল্প-বন্ধু, তা বোঝাতে প্রতিনিধিদের জন্য থাকছে নানান ঘোষণা। থাকছে একাধিক শিল্পবান্ধব নীতিও।
কলকাতা সম্পর্কে বিদেশি প্রতিনিধিদের সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে তাঁদের কলকাতার বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী এলাকা ঘুরিয়ে দেখানো হবে। দ্রষ্টব্য স্থানের সেই তালিকায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ইকো পার্ক, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি— সবই রয়েছে। আবার গঙ্গাবক্ষে প্রমোদ ভ্রমণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে তাঁদের জন্য। বিদেশি প্রতিনিধিদের অনেকেই ইংরেজিতে বিশেষ সড়গড় নন। সেই জন্য পেশাদার দোভাষীও দু’দিনের জন্য ভাড়া করছে সরকার। কলকাতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে ১৬ তারিখ রাতে থাকছে বিক্রম ঘোষ-সহ নানা শিল্পীকে নিয়ে বাংলার লোকগীতি এবং ধ্রপদী গানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
রাজ্যের শিল্প দফতরের কর্তাদের ব্যাখ্যা, ২০১৫ সালে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে কোনও সহযোগী দেশ ছিল না। ২০১৬ সালে ছিল শুধু জাপান। গত বছরে সহযোগী দেশের সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল চার। এ বার এক লাফে তা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। এ বারের শিল্প সম্মেলনে সহযোগী দেশ হিসেবে জাপান, গণতান্ত্রিক কোরিয়া ছাড়াও রয়েছে ইতালি, জার্মানি, পোল্যান্ড, ব্রিটেন, চেক প্রজাতন্ত্র এবং ফ্রান্স। শিল্প দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর আমস্টারডাম এবং স্কটল্যান্ড সফরের ইতিবাচক ফল মিলেছে। ব্রিটেন এই শিল্প সম্মেলনের সহযোগী দেশ হওয়ায় তা অন্য মাত্রা পেয়েছে।’’ ওই কর্তার দাবি, সহযোগী দেশগুলির প্রতিনিধিরা তো আছেনই। আরও অন্তত ৩০টি দেশের প্রতিনিধিরা আসছেন সম্মেলনে।’’