দিল্লির তুঘলক লেনের ডাক ছিল। কিন্তু কলকাতার লালমোহন ভট্টাচার্য লেন থেকে আমন্ত্রণ পৌঁছয়নি! গোলমাল হয়ে গিয়েছে বুঝে বৈঠকে বসে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ফোনে ধরলেন তাঁর পূর্বসূরিকে। দুঃখপ্রকাশও করলেন।
রাহুল গাঁধীর পরামর্শমাফিক সবাইকে নিয়ে চলার পথ হোঁচট খেয়েই শুরু করল বাংলার কংগ্রেস!
প্রদেশ কংগ্রেসের নবনিযুক্ত পদাধিকারীদের নিয়ে মঙ্গলবার বিধান ভবনে বৈঠক ডেকেছিলেন সোমেন মিত্র। কিন্তু সেখানে ছিলেন না প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, বৈঠকের খবর তাঁকে কেউ ফোন করে জানায়নি। ভুল বুঝতে পেরে এ দিন বৈঠক থেকেই বর্তমান প্রদেশ সভাপতি সোমেনবাবু ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন অধীরবাবুর সঙ্গে। লোকসভা ভোট মাথায় রেখে সোমেনবাবু যখন সংগঠনের দায়িত্ব ভাগ করে দিচ্ছেন রাজ্যের নেতাদের মধ্যে, তার আগে স্বয়ং কংগ্রেস সভাপতি রাহুলই অধীরবাবুকে বুঝিয়ে দিয়েছেন ভোটের আগে তাঁর কী করণীয়।
প্রদেশের বৈঠকের আগে সোমবার রাতেই দিল্লিতে আলোচনা হয়েছে রাহুল-অধীরের। বহরমপুরের সাংসদকে কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন সংগঠনকে চাঙ্গা করার দিকেই নজর দিতে। নিজের কেন্দ্র, জেলা এবং আশেপাশের এলাকায় লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে দলের সক্রিয়তা বাড়াতে, কর্মিসভা করে সংগঠনকে সচল রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন। রাহুলের মোদ্দা কথা, লোকসভা আসন ধরলে বাংলায় কংগ্রেসের অস্তিত্ব যেখানে আছে, তাকে আগে বাঁচাতে হবে।
দিল্লি থেকে এ দিন আর কলকাতা আসেননি অধীরবাবু। কেন? তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি সভাপতি থাকার সময়ে বলা হত, সভাপতি বা তাঁর দফতর থেকে কেন নেতাদের ফোন করে বৈঠকের খবর দেওয়া হয় না? এ বার আমি ওই বৈঠকের খবর জেনেছি কাগজ পড়ে। রোজ ই-মেল দেখি না। কই, ফোন করে কেউ তো খবর দেননি!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির রাজনৈতিক সচিব বাদল ভট্টাচার্যের ই-মেল গিয়েছিল অধীরবাবুর দফতরে। বৈঠক শুরুর পরে এ দিন সোমেনবাবু গোটা ঘটনার গোলমাল বুঝতে পেরে ফোনে যোগাযোগ করেন প্রাক্তন সভাপতির সঙ্গে। পরে সোমেনবাবু বলেন, ‘‘অধীরের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বার আসতে পারেনি, বলেছে।’’ নতুন কমিটির সন্তোষ পাঠকও বৈঠকে ছিলেন না। তবে দীর্ঘ কাল পরে বিধান ভবনে এসেছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান।
কলকাতার বৈঠক থেকে চার কার্যকরী সভাপতিকে জেলাওয়াড়ি দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। শঙ্কর মালাকারকে উত্তরবঙ্গের ৭ জেলা, আবু হাসেম (ডালু) চৌধুরীকে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও নদিয়া এবং নেপাল মাহাতোকে রাঢ়বঙ্গ ও জঙ্গলমহলের জেলাগুলির ভার দেওয়া হয়েছে। আর দীপা দাশমুন্সির দায়িত্বে দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি। জেলা সভাপতিদের আপাতত বহাল রেখে কো-অর্ডিনেটরদের সরানো হয়েছে। সেই সঙ্গেই ঠিক হয়েছে, লক্ষ্মীপুজোর পরে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশ হবে। সোমেনবাবুর কথায়, ‘‘কংগ্রেসকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে দলটাকে রাস্তায় নামাতে হবে।’’