আইন, পুলিশি তর্জন সত্ত্বেও সময়সীমার তোয়াক্কা না-করে গভীর রাতে শব্দ-তাণ্ডবে পাড়া কাঁপিয়ে দেওয়ার ‘সংস্কৃতি’ বহাল আছে। এই নিয়ে মাঝেমধ্যেই অভিযোগ করে আমজনতা। এ বার সেই অভিযোগ করলেন রাজ্যের এক সাংসদ!
সাংসদ এবং প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, শনিবার গভীর রাতে রাজারহাটের বেদিক ভিলেজে শব্দদানবের উপদ্রব বাধানো পার্টিতে ছিলেন রাজ্যের এক শীর্ষ আমলা, পদস্থ পুলিশকর্তাদের অনেকে। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে এই নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন অধীরবাবু।
ওই সাংসদের অভিযোগ, শনিবার রাতে দিল্লি থেকে ফিরে তিনি বেদিক ভিলেজের বা়ড়িতে গিয়েছিলেন। প্রচণ্ড ক্লান্ত থাকায় বিশ্রাম নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাত সা়ড়ে ১১টা নাগাদ পাশের একটি বাংলো থেকে প্রচণ্ড জোরে গানবাজনার জগঝম্প ভেসে আসতে থাকে। শব্দ কমানোর জন্য তিনি প্রথমে ব্যক্তিগত রক্ষীকে পাঠান। তাতে কাজ হয়নি। শেষে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তিনি নিজে ওই বাংলোয় হাজির হন। তাঁকে শব্দ বন্ধ করার আশ্বাস দেওয়া হলেও কাজের কাজ হয়নি। সাংসদের অভিযোগ, গভীর রাতে ওই বাংলোয় ডিজে বক্স (পেল্লায় মাপের সাউন্ড বক্স) বাজানো হচ্ছিল। তবে এই বিষয়ে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
পরিবেশকর্মীরা জানান, ডিজে বক্স খোলা জায়গায় বাজানো বেআইনি। তা বাজানো যায় একমাত্র সাউন্ডপ্রুফ ঘরে বা ডিস্কোয়। তা সত্ত্বেও রাজ্যের কিছু পুলিশকর্তা কী ভাবে এই বেআইনি বাজনাকে অনুমোদন দিলেন, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। ‘‘প্রশাসনিক কর্তা বা তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ যদি শব্দ আইন, দূষণ সম্পর্কে সচেতন না-হন, তা হলে আইন ভঙ্গকারীদের আটকাবে কারা,’’ প্রশ্ন এক পরিবেশকর্মীর। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে বলা হচ্ছে, নিষিদ্ধ ডিজে বক্স বাজানোর অভিযোগ পেলে পুলিশ সেই বক্স বাজেয়াপ্ত করে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীদের গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু বিধাননগর পুলিশ সূত্রের দাবি, এ ক্ষেত্রে তাঁদের কাছে কোনও অভিযোগই জমা প়ড়েনি। শনিবার রাতে বেদিক ভিলেজে কী হয়েছিল, সেটাও বলা সম্ভব নয়।
তবে অধীরবাবুর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘এমন অভিযোগ পেলে নিশ্চয়ই তদন্ত করে দেখা হবে।’’
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, আইনে নিষিদ্ধ হলেও ডিজে যে রমরমিয়ে চলছে, রোজই তার প্রমাণ মিলছে। দুর্গাপুজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো, এমনকী সরস্বতী পুজোর বিসর্জনেও বিকট শব্দে এই পেল্লায় মাপের সাউন্ড বক্স বাজানো হচ্ছে। খাস কলকাতায় কিছুটা রাশ থাকলেও বর্ষবরণের উৎসবের সময়ে শহরতলি এবং জেলায় ডিজে-দাপট দেখা গিয়েছে। রাজারহাটের মতো এলাকাও সেই তালিকার বাইরে নেই। সাউন্ড বক্সের কানে তালা ধরানো শব্দের উপদ্রবে নাজেহাল রাজ্যের প্রায় সব প্রান্তের বাসিন্দারাই। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় যুবক এবং রাজনৈতিক কর্মীদের ভয়ে সাধারণ মানুষ সেই বিষয়ে অভিযোগ জানানোর সাহস দেখান না। কিছু ক্ষেত্রে নালিশ জানালেও পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করে বলে অভিযোগ।