আদিবাসী সংগঠনের ডাকা রেল অবরোধে বন্ধ ট্রেন চলাচল। —নিজস্ব চিত্র।
আদিবাসীদের রেল অবরোধের জেরে সোমবার সকাল থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বিভিন্ন শাখায় রেল চলাচল বিপর্যস্ত।
পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ডে রেল অবরোধে সামিল হয়েছে আদিবাসীদের সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহাল’। স্টেশনে স্টেশনে দাঁড়িয়ে দূরপাল্লার ট্রেন। বাতিল করা হয়েছে অনেকগুলি ট্রেন। কখন অবরোধ উঠবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তাই বেশ কিছু দূর পাল্লার ট্রেনের যাত্রার সময় পরিবর্তন করা হলেও, সেই পরিবর্তিত সময়ে আদৌ সেই ট্রেনগুলি ছাড়তে পারবে কী না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তা ছাড়া, এ দিন দুপুরে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে সূত্রে জানানো হয়েছে, হাওড়া-পুরী শতাব্দী এক্সপ্রেস এবং হাওড়া-ভুবনেশ্বর জনশতাব্দী এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে। তার ফলে ব্যপক ভোগান্তির শিকার যাত্রীরা। এরই মধ্যে ওই আদিবাসী সংগঠনের সদস্যদের দাবি, আগামিকালও এই অবরোধ চালিয়ে যাবেন তাঁরা।
এ দিন সকাল ৬টা থেকেই ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় বিভিন্ন জায়গায় রেল অবরোধ করেন এই আদিবাসী সংগঠনের সদস্যেরা। পাশাপাশি, বেশ কিছু জায়গায় জাতীয় সড়কও অবরোধ করা হয়। হাওড়া-খড়্গপুর শাখার বালিচক, খেমাশুলি, বাঁকুড়ার ছাতনা, পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে অবরোধ চলছে।
আন্দোলনকারীদের দাবি, সাঁওতাল ভাষাকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত স্বীকৃতি দিতে হবে। সেই সঙ্গে নিয়োগ করতে হবে সাঁওতাল ভাষার শিক্ষক। সংগঠনের প্রথম সারির নেতা রবিন টুডু বলেন,“সাঁওতাল ভাষা চালু হলেও অধিকাংশ স্কুলে অলচিকি হরফের পাঠ্য় বই নেই। শিক্ষক নেই। রাজ্য সরকারের কাছে বার বার বলেও কোনও লাভ হয়নি। তাই আমাদের এই আন্দোলনে নামতে হল।” যদিও সোমবার বিকেল পর্যন্ত আদিবাসী সংগঠনের নেতৃত্বর সঙ্গে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি বলে দাবি করেছেন রবিন টুডু। তিনি বলেন তাঁরা অনির্দিষ্টকালীন অবরোধের ডাক দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: পুলিশকে গাছে বেঁধে মারুন, হুমকি দিয়ে ধৃত বিজেপি নেতা
আরও পড়ুন: ‘মা পক্ষাঘাতগ্রস্ত, একটা চাকরি পেয়েছিলাম, কিন্তু আর ভাবতে পারছি না’
রেল অবরোধ কর্মসূচির জেরে বহু লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
এই অবরোধের ফলে জায়গায় জায়গায় আটকে পড়েন যাত্রীরা। হাওড়া স্টেশনে আটকে রয়েছেন কয়েক হাজার যাত্রী। তাঁদের মধ্য়ে অনেক রোগীও রয়েছেন। এখনও দক্ষিণ-পূর্ব রেল সুনির্দিষ্ট ভাবে ঘোষণা করতে পারেনি, কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। হাওড়া ছাড়াও অনেক ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকে রয়েছে। রেলের তরফ থেকে অবরোধকারীদের অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া তাঁরা অবরোধ তুলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
এই আদিবাসী সংগঠনের একটি অংশ বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঝাড়গ্রামের বাঁশপাহাড়ি, শিমুলপাল এবং ভুনাভেদা অঞ্চলে ‘আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চে’র নামে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। অন্তত দু’টি জায়গায় তারা বোর্ড গঠন করেছে। এবং সে সময়ই ওই মঞ্চের নেতৃত্ব আদিবাসীদের দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিল।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
(দুই বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, 'বাংলার' খবর পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)