রেডি রাখুন ৫০ লক্ষ, হয়ে যাবে মেডিক্যালে ভর্তি

‘স্বামী বিবেকানন্দ এডুকেশনাল সার্ভিস’ নামে একটি সংস্থার বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করা হলে সৌরভ রায় বলে নিজের পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি জানান, তাঁদের অফিস ক্যামাক স্ট্রিটে বরদান মার্কেটের পাশে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ০৩:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

মেডিক্যালে ভর্তির নামে ঢালাও আর্থিক লেনদেন ঠেকাতে সর্বভারতীয় অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে কঠোর নজরদারির আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে মাঝেমধ্যেই। তা সত্ত্বেও মেডিক্যালে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে বিভিন্ন সংস্থা ব্যবসা চালাচ্ছে কী ভাবে? রহস্যের হদিস পেতে যোগাযোগ করা হয়েছিল বিজ্ঞাপন দিয়ে এই ধরনের কিছু সংস্থার সঙ্গে।

Advertisement

‘স্বামী বিবেকানন্দ এডুকেশনাল সার্ভিস’ নামে একটি সংস্থার বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করা হলে সৌরভ রায় বলে নিজের পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি জানান, তাঁদের অফিস ক্যামাক স্ট্রিটে বরদান মার্কেটের পাশে। তিনি বললেন, ‘‘টাকা নিয়ে রেডি থাকুন। নিটের রেজাল্ট বেরোনোর আগেই দুর্গাপুর, কেপিসি, হলদিয়া কোথাও একটা সিট বুকিং করে দেবো।’’

কত টাকা রেডি রাখতে হবে?

Advertisement

উত্তর এল: ‘‘গৌরীদেবী বা আইকেয়ার হলে প্রতি বছর টিউশন ফি ন’লাখ। তার সঙ্গে ক্যাপিটেশন ফি ৩০ লাখ লাগবে। কেপিসি হলে কিন্তু তিরিশে হবে না। মিনিমাম ৫০ লাখ রেডি রাখবেন। একটু বেশিও পড়তে পারে।’’ সেই সঙ্গে সৌরভ জানিয়ে দিলেন, তাঁদের সংস্থার সার্ভিস চার্জ দু’লক্ষ টাকা। এর মধ্যে এক লক্ষ টাকা তাঁদের অ্যাকাউন্টে অগ্রিম হিসেবে জমা দিতে হবে।

প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের নাম ও নম্বরের তালিকা টাঙানো হলেই তো জুয়োচুরি ধরা পড়ে যাবে। তখন কী হবে?

তাচ্ছিল্যের সঙ্গে সৌরভ বললেন, ‘‘ও-সব আপনাদের লুক-আউট নয়। কেপিসি গত বার যে-ভুল করেছিল, এ বার কেউ আর সেটা করবে না। তালিকায় কারও নম্বর থাকবে না।’’

আরও পড়ুন:নাম যে রেজাউল, ঘর পাননি ভাড়ায়

যাদবপুর কোপিসি মেডিক্যাল কলেজের তরফে জয়দীপ মিত্র জানান, ১৯ জুন ওই সংস্থার অপপ্রচার ও বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে তাঁরা থানায় এফআইআর করেছেন। গৌরীদেবী মেডিক্যাল কলেজের তরফে দেবেন্দ্রকুমার সিংহ, দুর্গাপুর আইকিউ সিটি মেডিক্যাল কলেজের তরফে ফ্রান্সিস অ্যান্টনি এবং হলদিয়া আইকেয়ারের তরফে সরোজকৃষ্ণ ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, এগুলো সব জালিয়াত সংস্থা। কেউ যেন এদের কথা শুনে প্রতারিত না-হন।

‘এডুকেটর’ নামে পার্ক স্ট্রিটের একটি সংস্থার তরফে তন্ময় মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি দাবি করলেন, তাঁরাও মোটামুটি ৩০ লাখ নিয়ে হলদিয়া বা দুর্গাপুরে এমবিবিএসে ভর্তি করিয়ে দেবেন। তার জন্য কাজ হওয়ার আগেই তাঁদের অগ্রিম ১০ হাজার নগদ দিতে হবে। আবার থিয়েটার রোডের ‘কেরিয়ার টপার্স’ সংস্থার তরফে কোয়েনা নামে এক মহিলা বললেন, ‘‘মিনিমাম ৩০ লাখ লাগবে। আগাম দু’লক্ষ টাকা আমাদের অ্যাকাউন্টে ফেলে আগে সিট ‘বুক’ করতে হবে।’’ ইউএসএইম এডুকেয়ার নামে হুগলির নালিকুলের একটি সংস্থা আয়ুর্বেদ এবং হোমিওপ্যাথিতেও টাকা নিয়ে ভর্তির বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। সংস্থার তরফে শর্মিলা নাগ বললেন, ‘‘প্রথমে ১০ হাজার আমাদের অ্যাকাউন্টে দেবেন। তার পরে লাগবে পাঁচ লাখ।’’

সব শুনে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘এমনটা যে হতে পারে, সেটা আমরাও আন্দাজ করেছি এবং তৈরি আছি। কাউন্সেলিং তো সরকারই করবে। বেআইনি কাজকর্ম কী ভাবে আটকাতে হয়, তার কায়দা আমাদেরও জানা আছে।’’

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন