আশ্বাস সত্ত্বেও কর্মবিরতির পথে কৌঁসুলিরা

বস্তুত, কর্মবিরতি শুরু হয়ে গিয়েছে বৃহস্পতিবারেই। হাওড়া, ব্যাঙ্কশাল, শিয়ালদহ, আলিপুর-সহ রাজ্যের অধিকাংশ আদালতে এ দিন কাজ করেননি আইনজীবীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৩৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

তাঁর উপরে আস্থা রাখার জন্য আইনজীবীদের অনুরোধ করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করন নায়ার রাধাকৃষ্ণন স্বয়ং। তা সত্ত্বেও হাওড়া আদালতের আইনজীবীদের উপরে হামলার প্রতিবাদ জানাতে এবং দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে রাজ্য বার কাউন্সিল আগামী সোমবার পর্যন্ত হাইকোর্ট-সহ রাজ্যের সব আদালতে কাজকর্ম বন্ধ রাখার রাস্তা নিয়েছে।

Advertisement

বস্তুত, কর্মবিরতি শুরু হয়ে গিয়েছে বৃহস্পতিবারেই। হাওড়া, ব্যাঙ্কশাল, শিয়ালদহ, আলিপুর-সহ রাজ্যের অধিকাংশ আদালতে এ দিন কাজ করেননি আইনজীবীরা। অর্থাৎ আপাতত বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার, টানা পাঁচ দিন কর্মবিরতির ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে চলেছেন বিচারপ্রার্থীরা। রাজ্য বার কাউন্সিলের ডিসিপ্লিনারি কমিটির চেয়ারম্যান প্রসূন দত্ত এ দিন জানান, হামলায় অভিযুক্তেরা গ্রেফতার না-হলে ২৯ এপ্রিল পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক হবে।

বার কাউন্সিলেরই কয়েক জন সদস্যের বক্তব্য, রাজ্য জুড়ে আদালতে কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে বিচারপ্রার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আইনজীবীদের উপরে হামলার অভিযোগ নিয়ে সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে বিচার বিভাগীয় ও প্রশাসনিক রিপোর্ট তলব করেছেন প্রধান বিচারপতি। বলেছেন, রিপোর্ট সন্তোষজনক না-হলে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ব্যবস্থা নেবেন তিনি। প্রধান বিচারপতির অনুরোধ, আইনজীবীরা যেন তাঁর উপরে আস্থা রাখেন।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বার কাউন্সিলের কিছু সদস্যের প্রশ্ন, বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে তো আইনজীবীদের সংঘর্ষ হয়নি। তা হলে বিচারপ্রার্থীদের আইনি সাহায্য পেতে আইনজীবীরা বাধা দেবেন কেন? প্রধান বিচারপতি তো তাঁর উপরে আস্থা রাখতে অনুরোধ করেছেন এবং রিপোর্ট সন্তোষজনক না-হলে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি কী ব্যবস্থা নেন, তা আগে দেখা উচিত ছিল। তার আগে আদালতের কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিচারপ্রার্থীদের হয়রান করা হচ্ছে কেন?

সেই সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠছে, হাওড়া পুরসভার সামনে আইনজীবীরা তাঁদের গাড়ি রাখতে যাবেনই বা কেন? বুধবার পুরকর্মী ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়ে এবং পুরকর্মীদের মারধর করে আইনজীবীদের একাংশ নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। হাওড়া আদালতের ক্রিমিনাল বার লাইব্রেরির সভাপতি সমীর বসু রায়চৌধুরীর দাবি, ‘‘পুরকর্মীরাই টাকা নিয়ে বরাবর আইনজীবীদের গাড়ি রেখে এসেছেন। আইনজীবীরা বেআইনি কাজ করেননি।’’ সংগঠনের অন্য এক কর্তা বলেন, ‘‘পুরসভার ভিতরে তো গাড়ি রাখা হয়নি। যেখানে গাড়ি রাখা হয়, সেখানে নো-পার্কিং বোর্ড ছিল না।’’

বুধবার হাওড়া পুরসভার গেটের সামনে এক আইনজীবী গাড়ি রাখায় পুরকর্মীদের সঙ্গে হাওড়া আদালতের আইনজীবীদের একাংশের সংঘর্ষ বাধে। তাতে দু’পক্ষের বেশ কয়েক জন আহত হন। পুরসভার গেট অবরোধ করেন আইনজীবীরা। পুলিশ গেট খুলতে গিয়ে বাধা পেয়ে আইনজীবীদের উপরে বেধড়ক লাঠি চালায় এবং ও আদালতে ঢুকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়।

হামলার প্রতিবাদে এ দিন হাওড়া, ব্যাঙ্কশাল, শিয়ালদহ, আলিপুর-সহ রাজ্যের অধিকাংশ আদালতে কোনও কাজ করেননি আইনজীবীরা। তবে আলিপুর জজ কোর্টে বিবাহ-বিচ্ছেদের কয়েকটি মামলার ফয়সালা হয়েছে বলে জানান সরকারি আইনজীবীরা। কারণ বাদী ও বিবাদীরা হাজির ছিলেন। হাওড়া আদালতের ‘গভর্নমেন্ট রেকর্ড সেকশন’ বন্ধ করিয়ে দেন আইনজীবীরা। দফায় দফায় প্রতিবাদ মিছিল বেরোয়।

রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী তথা হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অরূপ রায় এ দিন অভিযোগ করেন, ‘‘আইনজীবীদের কোট-গাউন পরে বিজেপি এবং সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা গুন্ডামি করেছে।’’ তিনি দাবি করেন, হাওড়া আদালতের আইনজীবীরা গুন্ডামি করতে পারেন না। তিনি আইনজীবীদের পাশে আছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন