যুগল: বৃষ্টিভেজা শহরে। সোমবার ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী
সাত দিন আগে ওড়িশা-বাংলা সীমানা দিয়ে দক্ষিণবঙ্গে ঢুকেছিল ‘অতিথি’। কিন্তু তার পর থেকেই সে কার্যত উধাও! দোকানে-বাজারে কান পাতলে ‘অতিথি’ বর্ষার অন্তর্ধান নিয়ে দেদার হাহুতাশও শোনা যাচ্ছে।
সেই ‘অতিথি’ কবে স্বমূর্তিতে হাজির হবে, আবহবিদেরা তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। কিন্তু সোমবার বিকেলে তার পারিষদ হাজির হল কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে। এ দিন রীতিমতো ঝোড়ো বৃষ্টি হয়েছে বীরভূম, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতায়!
আলিপুর হাওয়া অফিসের খবর, ৩৭.২ ডিগ্রি তাপমাত্রা এবং মাত্রাছা়ড়া আর্দ্রতায় এ দিন মহানগরে অস্বস্তি ছিল চরমে। বৃষ্টিতে সে-সবও ধুয়েমুছে গিয়েছে। রাত ৯টায় কলকাতার তাপমাত্রা নেমে যায় ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। জ্বালা জুড়োনোয় রাতে নিশ্চিন্তির ঘুমও হয়েছে। কেউ কেউ হেসে বলেছেন, ‘‘যাক, বর্ষা বোধ হয় ছন্দে ফিরল!’’
আবহবিদেরা কিন্তু বলছেন, এই স্বস্তি সাময়িক। বর্ষার পরিচিত টানা বৃষ্টি কিন্তু এখনও বহু দূরের ব্যাপার! আজ, মঙ্গলবার সকাল থেকেই ফের ভোগাতে পারে ভ্যাপসা গরম। রেডারের পর্যবেক্ষণ, পশ্চিমাঞ্চলের জেলা থেকে এ দিন পরপর ভারী চেহারার বজ্রগর্ভ মেঘ কলকাতার দিকে বয়ে এসেছে। পথে ঝো়ড়ো বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দিয়েছে বিভিন্ন জেলাকে। খাস কলকাতার আকাশে মেঘের উচ্চতা ছিল ১৫ কিলোমিটারেরও বেশি।
বর্ষাকে নিজস্ব ছন্দে হাজির উত্তরবঙ্গে। জলপাইগু়ড়ি, দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে কয়েক দিন ধরে ঝেঁপে বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী কয়েক দিন সেখানে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসও আছে। আর দক্ষিণবঙ্গে? আবহবিদেরা জানান, বঙ্গোপসাগর থেকে জোলো মৌসুমি হাওয়া ঢুকছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। তাই আর্দ্রতা বাড়ছে। মেঘমুক্ত আকাশে চড়া রোদ থাকায় আবহাওয়া অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এখনই সুখের খবর দিতে পারছেন না। বলছেন, ‘‘জুনে দক্ষিণবঙ্গে তেমন টানা বৃষ্টি হয় না। আপাতত বিভিন্ন জেলায় এ ভাবেই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হবে। আগামী কয়েক দিনে নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনায় একটু বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’
আবহবিদেরা বলছেন, জুনে টানা বৃষ্টি দিতে পারে বঙ্গোপসাগরের উপরে তৈরি হওয়া কোনও জোরালো ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, রবিবার বঙ্গোপসাগরের উপরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছিলেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এ দিন সেই আশা মিলিয়ে গিয়েছে। উপগ্রহ-চিত্র ঘেঁটে এক আবহবিজ্ঞানীর আক্ষেপ, ‘‘না, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় ঘূর্ণাবর্ত দানা বাঁধল না।’’
অর্থাৎ স্বস্তির সন্ধ্যাতেও অস্বস্তির কাঁটা রয়েই গেল।