CBI

Partha Chatterjee: ইডির পর এ বার সিবিআই, পার্থ-অর্পিতাকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার প্রস্তুতি শুরু

সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের দাবি, এই কাণ্ডে শুধু পার্থ-অর্পিতাই জড়িত নন, দুর্নীতির শিকড় অনেক গভীরে। তারই নাগাল পেতে চান তাঁরা।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২২ ০৬:০৬
Share:

ফাইল চিত্র।

তাঁর বিরুদ্ধে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) ও প্রাথমিক টেট দুর্নীতির মূল মামলা সিবিআইয়ের। ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কয়েক দিনের তুমুল তৎপরতার পরে জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এ বার নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করার প্রস্তুতি শুরু করে দিল সিবিআই। একই ভাবে তারা জেরা করতে চায় পার্থের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কেও।

Advertisement

সিবিআই সূত্রের দাবি, আদালতের নির্দেশে স্কুলে নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত মূল মামলার তদন্ত করছে তারা এবং সেই মামলার যোগসূত্রেই বিশেষ আদালতে আবেদন করে পার্থ ও অর্পিতাকে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার হেফাজতে নেওয়া হবে। সিবিআইয়ের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ইডি-র মামলা এখন আছে প্রাথমিক পর্যায়ে। দু’জনকে হেফাজতে নেওয়া হবে দু’টি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আলোচনার ভিত্তিতেই।’’

২০১৫ সালে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থ রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুকে আমানতকারীদের টাকা লুট এবং সেই টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে প্রথমে গ্রেফতার করেছিল ইডি। পরে তাঁকে হেফাজতে নেয় সিবিআই। গৌতম এবং তাঁর স্ত্রী শুভ্রা বর্তমানে ইডি ও সিবিআইয়ের মামলায় জেল হেফাজতে আছেন।

Advertisement

এক সিবিআই-কর্তা বলেন, ‘‘সরকারি চাকরি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা লুটের সঙ্গে সঙ্গে টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিকাঠামোকেই পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট দফায় দফায় কোর্টে পেশ করা হচ্ছে।’’

সিবিআই-কর্তারা জানাচ্ছেন, কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে এসএসসি, প্রাথমিক টেট, স্কুলের ‘গ্রুপ সি’ ও ‘গ্রুপ ডি’ অর্থাৎ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর পদে বেআইনি ভাবে চাকরি বিক্রি করে টাকা লুটের ঘটনায় এ-পর্যন্ত ন’টি মামলা করেছে সিবিআই। সেই সব মামলার ভিত্তিতে গত এপ্রিল থেকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে সমান্তরাল তদন্ত চালাচ্ছে ইডি। প্রধানত নিয়োগ দুর্নীতিতে যে-টাকা লেনদেন হয়েছে, তার উৎস কী এবং সেই অর্থ কোথায় গিয়েছে, সেগুলিই ইডি-র তদন্তের বিষয়। অর্পিতার বিভিন্ন ফ্ল্যাট থেকে নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা, ১১ কেজি সোনার গয়না এবং বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পার্থ ও অর্পিতার যৌথ সংস্থার নামে বিপুল সম্পত্তির হদিস মিলেছে। টাকা পাচার, বিদেশি মুদ্রার লেনদেন, অর্পিতার বাড়িতে পাওয়া সোনার গয়নায় বিদেশি যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে।

এক সিবিআই-কর্তা বলেন, ‘‘দুর্নীতির শিকড় খুঁজে বার করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। হাই কোর্টের সেই নির্দেশ এবং প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিত বাগের রিপোর্টের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে পার্থ এবং এসএসসি-র উপদেষ্টা কমিটির পাঁচ সদস্য, মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ অফিসার, প্রাথমিক ও উচ্চশিক্ষা দফতরের বিভিন্ন আধিকারিককে।’’

সিবিআইয়ের দাবি, গত ১০ বছরে রাজ্যের শিক্ষা দফতরের বিভিন্ন গোষ্ঠী, উপগোষ্ঠীর মাধ্যমে দুর্নীতি চক্র চালিয়ে সরকারি চাকরি বিক্রি করা হয়েছে বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। বেআইনি নিয়োগের সমস্ত নথিপত্র উদ্ধার এবং সেগুলি যাচাইয়ের আইনি প্রক্রিয়া চলছে। যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁদের আইনজীবীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে চাকরি বিক্রির প্রচুর তথ্যপ্রমাণ ইতিমধ্যে সিবিআইয়ের হাতে এসেছে।

সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের দাবি, এই কাণ্ডে শুধু পার্থ-অর্পিতাই জড়িত নন, দুর্নীতির শিকড় অনেক গভীরে। পার্থের মতো বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি যে এতে জড়িত, তার বহু গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র হাতে এসেছে। মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ আধিকারিক-সহ শিক্ষা দফতরের বেশ কিছু মহিলা অফিসার দুর্নীতি চক্রে জড়িত। পার্থ-ঘনিষ্ঠ আরও কয়েক জন মহিলাও জড়িত বলে জানান তদন্তকারীরা।

করোনা আবহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালেও বেআইনি ভাবে নিয়োগ পদ্ধতি চালানো হয়েছে বলে সিবিআইয়ের দাবি। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘২০১২ সাল থেকে যে বেপরোয়া ভাবে সরকারি চাকরি বিক্রি করা হয়েছে, তার বহু তথ্যপ্রমাণ ইতিমধ্যে হাতে এসেছে। বাগ কমিটির রিপোর্টে শিক্ষা দফতরের প্রধান সচিব তাঁর বয়ানে পার্থকে বেআইনি নিয়োগের মূল নিয়ন্ত্রক বলে উল্লেখ করেছেন। তার পরেই পার্থ-অর্পিতাকে গ্রেফতার করেছে ইডি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন