লালুর পর বিজেপির নিশানায় এ বার মমতা

সম্বিত-প্রকাশে়র এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন কলকাতায় বলেন, ‘‘অর্বাচীনের দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে কী বলছে, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নই। মমতা দাঁড়িয়ে আছেন সরল জীবনযাপনের উপর, সত্যনিষ্ঠার উপরে।’’

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৭ ০৪:০০
Share:

নেত্রী: উত্তরকন্যায় একটি প্রেক্ষাগৃহের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

লালুপ্রসাদ যাদবের পর এ বার মমতা। পরের লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির রণকৌশল হল— দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মমতা-বিরোধী প্রচারকে তুঙ্গে নিয়ে যাওয়া। জাতীয় স্তরে মোদী-বিরোধী জোট বাঁধতে মমতা সব চেয়ে সক্রিয়, তাই এই প্রচারকে কলকাতায় সীমাবদ্ধ না-রেখে রাজধানীতেও নিয়ে আসার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিজেপি। মমতাকে সরাসরি কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি, তাই সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমের একাংশের তোলা অভিযোগকে আজ বিজেপি সরাসরি এই প্রচারের হাতিয়ার করল। ইতিমধ্যে অভিষেক সংশ্লিষ্ট সংবাদের সত্যতাকে চ্যালেঞ্জ করে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন।

Advertisement

দলের সদর কার্যালয়ে বসে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর আজ অভিযোগ করলেন, পশ্চিমবঙ্গে পর পর দুর্নীতির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। প্রকাশ বলেন, এটাই বিরোধীদের মহাগঠবন্ধন— মমতা, তেজস্বী, রবার্ট বঢরা, এ সব একই ধরনের মডেল। একটি প্রকল্প সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমের তোলা অভিযোগ উত্থাপন করে তিনি বলেন, জ্যোতিবাবুর জমানায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় বিরোধী নেত্রী হিসেবে মমতা কৃষিজমি দখল করে প্রকল্পের বিরোধিতা করেন। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তিনি সেটি খারিজ করেননি, উল্টে তাঁর ভাইপো এই প্রকল্পের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ১.১৫ কোটি টাকা কমিশন পেয়েছেন। বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্রও এ দিন বলেন, ‘‘মমতা বলেন তাঁর সরকার মা-মাটি-মানুষের, কিন্তু আসলে তাঁর মন্ত্র হল— আমি, আমার এবং আমার পরিবার।’’

আরও পড়ুন: বৈঠকে ডাকের অপেক্ষা পাহাড়ে

Advertisement

সম্বিত-প্রকাশে়র এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন কলকাতায় বলেন, ‘‘অর্বাচীনের দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে কী বলছে, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নই। মমতা দাঁড়িয়ে আছেন সরল জীবনযাপনের উপর, সত্যনিষ্ঠার উপরে।’’

বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বলছেন, অতীতে অন্য নেতাদের নাম সারদা থেকে নারদায় জড়িয়েছে। কিন্তু অভিষেককে নিশানা করা হলে মুখ্যমন্ত্রীকে টানা অনেক সহজ হবে। বিজেপি নেতারা বলছেন, জ্যোতি বসুর সময় চন্দন বসুকে আক্রমণ করে ওঁর সাদা ধুতিতে কাদা লাগানো সম্ভব হয়েছিল। এ বার অভিষেকের মাধ্যমে মমতার সাদা শাড়িতে কাদা লাগানোর চেষ্টাই হল রণকৌশল।

দ্বিতীয়ত, অভিষেক নবীন প্রজন্মের প্রতিনিধি। জেলায় জেলায় তাঁর জনসভায় ভিড় হচ্ছে ভাল। মমতা থেকে অভিষেক— এই রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের পর্বটিকেও এর ফলে বাধা দেওয়া যাবে। তৃতীয়ত, অভিষেকের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে তৃণমূলের অন্দরে নানা নেতার মধ্যে সংশয় এবং কলহকে বাড়ানো যাবে।

তবে সংসদে বিজেপির কিরীট সোমাইয়া বিষয়টি কাল উত্থাপন করলেও কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দল মমতার পাশেই দাঁড়িয়েছে। আর বিজেপিও এখনও এই প্রচারকে চরম জায়গায় নিয়ে যায়নি। জল মাপছে।

কাল দিল্লিতে বা রাজ্যে তৃণমূলের কেউ এই বিষয়ে মন্তব্য করেননি। আজ ডেরেক ও’ব্রায়েন দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপির দুর্নীতির একটি তালিকা প্রকাশ করেন। এর মধ্যে নিতিন গডকড়ীর ২০১০ সালের আদর্শ আবাসন কেলেঙ্কারি আছে। বল্লারীর খনি দুর্নীতি থেকে গুজরাত সমবায় ব্যাংকের দুর্নীতিও আছে। কিন্তু মমতা নিজে নীরব। দলের নেতৃত্ব মনে করছেন, আইনের পথেই যখন এর জবাব দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে তখন রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত আপাতত না-করাই সঠিক কৌশল। মমতা নিশ্চিত, আদালতে এ সব অভিযোগ ধোপে টিকবে না। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ওই সময় অভিষেক সাংসদও ছিলেন না। ব্যবসার ক্ষেত্রে তিনি যদি কমিশন নেন এবং ব্যবসায়িক সংস্থার কাছ থেকে সহজ কিস্তিতে ঋণ নেন, তাতে তৃতীয় পক্ষের বক্তব্য থাকতে পারে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন