AAP

AAP: তৃণমূলের সঙ্গেও লড়ার লক্ষ্যে বাংলায় ‘পদার্পণ’ আপের

কয়েক বছর আগেও বাংলায় তৎপরতা দেখিয়েছিল আপ। সে কথা মনে করিয়েই সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘আপ মাঝে শুরু হয়েছিল, তার পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে তারা এখন দু’রাজ্যে সরকারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২২ ০৬:২০
Share:

কলকাতায় আপের ' পদার্পণ যাত্রা '।

আগামী লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে বিজেপির মোকাবিলায় বিরোধী শিবিরে যখন নানা অঙ্ক কষা শুরু হয়েছে, সেই সময়েই বাংলায় পথে নেমে সক্রিয়তা দেখাতে শুরু করল অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি (আপ)। মিছিল শেষে আপের নেতারা বললেন, দিল্লিতে শীলা দীক্ষিতের ১৫ বছরের সরকারকে যদি পরাস্ত করা যায়, তা হলে বাংলায় তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লড়তেও তাঁরা ভয় পাবেন না। তাঁদের স্লোগান, দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি ও নাগরিকের জন্য স্বচ্ছ পরিষেবা। শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব অবশ্য মনে করছেন, বাংলায় আপ কোনও দাগ কাটতে পারবে না।

Advertisement

পঞ্জাবের বিধানসভা ভোটে সাফল্যের পরে কলকাতায় রবিবার গিরিশ পার্ক থেকে মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তি পর্যন্ত ‘পদার্পণ যাত্রা’ করে পথে নেমেছিল আপ। পঞ্জাবের মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে ব্যানার এবং কেজরীবালের প্রতীক ঝাড়ু হাতে মিছিলে ছিলেন আপের কর্মী-সমর্থকেরা। মূলত কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলির মতো জেলা থেকে মিছিলে কর্মী-সমর্থকেরা এসেছিলেন। তাঁদের স্লোগান ছিল, ‘দুর্নীতিকে করতে সাফ, বাংলায় এ বার আসছে আপ’। নেতৃত্বের গলায় ঝুলতে দেখা গিয়েছে পরিচিতি পত্র, যা সচরাচর রাজনৈতিক মিছিলে চোখে পড়ে না। মিছিল শেষে হাওড়ার অর্ণব মৈত্র, উত্তর ২৪ পরগনার তুলিকা অধিকারী-সহ নেতা-নেত্রীরা দাবি করেন, গোটা রাজ্যেই তাঁরা সংগঠন গড়ে তুলবেন।

বাংলায় আপের ভারপ্রাপ্ত নেতা সঞ্জয় বসুর দাবি, এ রাজ্যে লড়াই করার পরিকল্পনা তাঁরা নিয়েছেন আগেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেজরীবাল দ্বিতীয় বার যখন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়ে শপথ নেন, সেই সময়েই তাঁর বাড়িতে আমাদের বৈঠকে বাংলা-সহ অন্যান্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। আমরা এখানে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে লড়িনি। এখন পঞ্জাবে সাফল্যের পরে আমাদের কর্মসূচি সকলের চোখে পড়ছে!’’ বাংলায় তাঁদের মূল লড়াই কার সঙ্গে? সঞ্জয়বাবুর যুক্তি, ‘‘আমরা বিজেপি, তৃণমূল সকলের বিরুদ্ধেই লড়ব। আমরা দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতির কথা বলছি। এখানে দুর্নীতি ভয়াবহ, প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা নিয়েছে। আর এখানে শাসক দল তৃণমূলই। কথা বলতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে তো যাবেই।’’

Advertisement

তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ দিন বলেছেন, ‘‘যে কোনও রাজনৈতিক দল তাদের কথা বলতেই পারে। তবে বাংলার মানুষের হৃদয়ে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে বিজেপি এখানে অন্য রকম সংস্কৃতি নিয়ে আসার চেষ্টা করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। আপও কিছু করতে পারবে না।’’

ফিরহাদের আরও মত, ‘‘কংগ্রেসের যে লড়াই করার আর শক্তি নেই, তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। বিজেপিকে রুখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য শক্তি, বাংলার বিধানসভা ভোট তা দেখিয়ে দিয়েছে। সব আঞ্চলিক দলের এখন উচিত, তৃণমূল নেত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে শক্তি জোগানো।’’ তার প্রেক্ষিতে আপ নেতৃত্বের প্রশ্ন, তা হলে তৃণমূল অন্য রাজ্যে পা রাখতে যাচ্ছে কেন? গোয়ায় তৃণমূলের সাম্প্রতিক ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। সঞ্জয়বাবুর বক্তব্য, ‘‘আমরা ২০২৪ বা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মুখ ভেবে কিছু করছি না। লড়ছি আমাদের নিজস্ব লক্ষ্যে। কারও সঙ্গে জোটের অঙ্কেও আমরা নেই। কেজরীবাল বলে দিয়েছেন, জল, হাসপাতাল বা স্কুল চাইলে আপ-এ আসুন। জোট বা ঘোঁট চাইলে অন্য দল আছে!’’ পঞ্চায়েত ভোটে নিজেদের সাধ্যমতো প্রার্থী দিয়ে লড়াই করার কথা ঘোষণা করেছে আপ।

কয়েক বছর আগেও বাংলায় তৎপরতা দেখিয়েছিল আপ। সে কথা মনে করিয়েই সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘আপ মাঝে শুরু হয়েছিল, তার পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে তারা এখন দু’রাজ্যে সরকারে। নিজেদের তারা ‘মুখ’ ভাবতেই পারে, যে কোনও রাজ্যে যেতেই পারে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের আবার কটাক্ষ, ‘‘গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ কর্মসূচি করতেই পারে। কিন্তু অন্য রাজ্যে ভোটে জিতে এসে এখানে দল তৈরি হয়ে যাবে, এ ভাবে বাংলায় রাজনীতি হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন