পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বর্ধমান জেলা ভাগ হয়ে তৈরি হবে যথাক্রমে ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে জেলা পরিষদও আলাদা হয়ে যাবে কি না — সেই প্রশ্নে ধন্ধে পড়েছে পঞ্চায়েত দফতর। নবান্নের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নববর্ষের আগেই জেলা ভাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু এত অল্প সময়ে জেলা পরিষদ আলাদা করা যাবে না। তাই জেলা পরিষদ অভিন্ন রাখার নিদান এসেছে নবান্নের শীর্ষ মহল থেকে। অর্থাৎ, জেলা ভাগের পরেও অবিভক্ত জেলা পরিষদই কাজ করবে। যদিও রাজ্যের পঞ্চায়েত কর্তারা মনে করছেন, সাংবিধানিক ভাবে এটা করা যায় না।
পঞ্চায়েত দফতর চাইছে, অভিন্ন জেলা পরিষদ থাকলেও আগামী বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগেই পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান ও ঝাড়গ্রাম নামে তিনটি পৃথক জেলা পরিষদ বানাতে হবে। নবান্ন তাতে সিলমোহর না দিলে রাজ্যে সাংবিধানিক সঙ্কট দেখা দেবে।
নতুন জেলা পরিষদ গঠনের পাশাপাশি রাজ্যের পঞ্চায়েত আইনে আরও দু’টি সংশোধনী আসতে চলেছে। এক, পরের বার থেকে পঞ্চায়েত সদস্যরা বিধানসভা বা লোকসভার ভোটেও প্রার্থী হতে পারবেন। দুই, এখন জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি, কর্মাধ্যক্ষ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতি, গ্রাম প্রধান ও উপ-প্রধানের মতো ১৪ জন পদাধিকারী পূর্ণ সময়ের জন্য নিযুক্ত হন। অন্য কোনও পেশায় যুক্ত থাকতে পারেন না। সরকার চাইছে, পুরসভার মতো পঞ্চায়েতেও পূর্ণ সময়ের পদাধিকারী ব্যবস্থা তুলে দিতে। বরং পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরের প্রতিনিধিরা চাকরি বা স্বাধীন পেশায় যুক্ত থেকেই কাজ করতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নতুন জেলা পরিষদ গঠনের বিষয়টি দেখা হচ্ছে। প্রশাসনিক সুবিধা এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই সংশোধনী আনা হবে।’’ দফতরের খবর, এই আমলে বছর দুয়েক আগে জলপাইগুড়ি ভেঙে আলিপুরদুয়ার জেলা গঠন হয়েছিল। সে সময় জেলা পরিষদও ভাগ হয়। যদিও নতুন জেলা পরিষদ ভবন ও অন্য পরিকাঠামো তৈরি শেষ হয়নি। এ বার বর্ধমান ভেঙে পূর্ব বর্ধমান (গ্রামীণ এলাকা) ও পশ্চিম বর্ধমান (শিল্প এলাকা) জেলা হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুর ভেঙে হচ্ছে ঝাড়গ্রাম। এক কর্তার কথায়, ‘‘জেলা পরিষদ এক থাকলে ক্ষতি নেই। কিন্তু ভোটের আগে নয়া জেলা পরিষদ গঠন করতেই হবে। সংবিধানের ২৪৩-বি ধারা সেই কথাই বলছে।’’ প্রাক্তন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘যা শুনছি, তা সত্যি হলে বলব, এটা সংবিধান বিরোধী কাজ। এমন করা যায় না’’