পুলিশ কাজ করল কেন, থানায় বিক্ষোভ দীপালির

ভারী চটেছেন দীপালি সাহা। কেন চটেছেন? বিরোধীদের কটাক্ষ, পুরভোটের দিন দীপালিদেবীর খাসতালুক সোনামুখীতে পুলিশ পুলিশের কাজ করেছে! কাউকে ট্যাঁ-ফুঁ করতে দেয়নি। আর তাতেই গোসা হয়েছে সোনামুখীর ওই দাপুটে তৃণমূল বিধায়কের। গত বছর লোকসভা ভোটের সময় বুথে ঢুকে প্রিসাইডিং অফিসারকে পেটানো এবং ছাপ্পা ভোট দেওয়ায় অভিযুক্ত যিনি, সেই দীপালিদেবীকে শনিবার ভোটের দিন যথেষ্ট নিষ্প্রভ লেগেছে বলে জানিয়েছেন এলাকার মানুষও।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

সোনামুখী শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৬
Share:

সোনামুখী থানার সামনে অনুগামীদের সঙ্গে দীপালি সাহা। ছবি: শুভ্র মিত্র।

ভারী চটেছেন দীপালি সাহা। কেন চটেছেন? বিরোধীদের কটাক্ষ, পুরভোটের দিন দীপালিদেবীর খাসতালুক সোনামুখীতে পুলিশ পুলিশের কাজ করেছে! কাউকে ট্যাঁ-ফুঁ করতে দেয়নি। আর তাতেই গোসা হয়েছে সোনামুখীর ওই দাপুটে তৃণমূল বিধায়কের। গত বছর লোকসভা ভোটের সময় বুথে ঢুকে প্রিসাইডিং অফিসারকে পেটানো এবং ছাপ্পা ভোট দেওয়ায় অভিযুক্ত যিনি, সেই দীপালিদেবীকে শনিবার ভোটের দিন যথেষ্ট নিষ্প্রভ লেগেছে বলে জানিয়েছেন এলাকার মানুষও।

Advertisement

সব মিলিয়ে বিধায়কের গোসা এতটাই যে, ভোটের পর দিনই দল বেঁধে থানায় গিয়ে দীপালিদেবীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের কর্মীরা। এখানেই শেষ নয়। থানার ভিতরে ঢুকে তৃণমূল বিধায়ক পুলিশকর্মীদের আঙুল উঁচিয়ে রীতিমতো শাসানি দেন বলেও অভিযোগ। পুলিশ অবশ্য আগের মতোই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা এখনও নিচ্ছে না। উল্টে সোনামুখী থানার এক এএসআইয়ের বিরুদ্ধে দীপালি-অনুগামী এক তৃণমূল কর্মীকে লাঠিপেটা করার অভিযোগ দায়ের হয়েছে! ওই তৃণমূল কর্মী সোনামুখীর যে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, সেই ওয়ার্ডেই এ বার পুরভোটে প্রার্থী দীপালি। বিরোধীদের বক্তব্য, যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই থানায় গিয়ে অভিযুক্তদের ছাড়িয়ে আনেন, তাঁর দলের বিধায়ক তো এমন করবেনই!

গোটা রাঢ়বঙ্গে একমাত্র বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী পুরসভাই বামেদের দখলে ছিল। এ বার ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে তৃণমূল। প্রথম থেকেই বহিরাগত দুষ্কৃতীদের এলাকায় এনে ভোটের দিন সন্ত্রাস চালানোর ছক তৃণমূল কষছে বলে অভিযোগ তুলছিল বামেরা। ভোটের আগের দিনই ৮ নম্বর এলাকায় এক তৃণমূল কর্মীর বাড়ি থেকে ৩৭ জন বহিরাগতকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। ভোটের দিন সকালেও ওই ওয়ার্ডে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জড়ো হয় বহিরাগতরা। স্থানীয় লোকজন তাদের তাড়া করে দু’জনকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনায় মূল ভূমিকা নিয়েছিলেন এই ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা তথা সিপিএমের সোনামুখী জোনাল কমিটির সদস্য সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

নির্বিঘ্নে ভোট করতে পুলিশও যথেষ্ট সক্রিয় ছিল শনিবার। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথের ইভিএমে দীপালিদেবীর নামের পাশে কালির দাগ দেওয়া ছিল। যা দেখে শনিবার প্রতিবাদ জানান বিরোধী প্রার্থীদের এজেন্টরা। নামের পাশের কালি মুছে ফের শুরু হয় ভোট গ্রহণ। তবে কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মীরা জমায়েত করতে থাকে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে। যাদের হটাতে লাটি উঁচিয়ে তেড়ে যায় পুলিশ। তাতেই নাকি জখম হন শোভনলাল দাস নামের ওই তৃণমূল কর্মী। এরই প্রতিবাদে এ দিন সরব হন দীপালিদেবী। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে থানায় চলে বিক্ষোভ। আবার বহিগতদের ধরতে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া সিপিএম নেতা সঞ্জয়বাবুকেও ‘আধ ঘণ্টা’র মধ্যে গ্রেফতারের দাবি তোলে তৃণমূল। তাদের অভিযোগ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীর স্বামীকে ভোটের আগের দিন মারধর করেন সঞ্জয়বাবু।

বিধায়কের চাপে ওই সিপিএম নেতার খোঁজে এলাকায় যায় পুলিশ। কিন্তু, এলাকার ছেলেকে ফাঁসানো হচ্ছে অভিযোগ তুলে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকশো বাসিন্দা এবং বাম কর্মী প্রতিবাদ মিছিল করে থানায় যান। থানায় ঢুকে পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে দেখা করে মিথ্যা মামলায় সঞ্জয়বাবুকে না ধরার দাবি তোলেন।

আর এ সব দেখেই বিস্তর খেপেছেন এলাকার বিধায়ক। এর আগে ভোটকর্মীদের মারধর ও ছাপ্পা ভোটের মতো গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ দীপালিদেবীকে ধরার সাহস দেখায়নি। শাসক দলের নেত্রী বলেই তিনি ছাড় পেয়েছেন, এমনই অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। এ বার পুরভোটে বাঁকুড়া জেলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে বিরোধী দলগুলি। অন্য দিকে, যারপরনাই ক্ষুব্ধ দীপালিদেবী। তাঁর অভিযোগ, “ভোটের দিন পুলিশের ভূমিকা ঠিক ছিল না। এক শ্রেণির পুলিশ অফিসার ও কর্মী বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করেছে। বহু বুথে আমাদের এজেন্টদের ঢুকতে দেয়নি। কর্মীদের মেরেছে।’’

যা শুনে অমিয় পাত্রের কটাক্ষ, “ছাপ্পা ভোট দিয়েও পুলিশ না ধরায় উনি খুশি হয়েছিলেন। এ বার পুলিশ কাজের কাজ করেছে। ভোট শান্তিপূর্ণ করতে পদক্ষেপ করেছে। আর তাই এত রাগ দীপালিদেবীর। আসলে উনি বুঝেছেন, সোনামুখীর ভোটে হার নিশ্চিত।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বহিরাগতদের তো বামকর্মী ও এলাকাবাসীরাই ধরিয়ে দিয়েছেন! পুলিশ তো স্রেফ থানায় নিয়ে গেছে। এর জন্য পুলিশের উপরে উনি কেন রাগছেন বুঝতে পারছি না।’’ সুভাষ সরকারের মন্তব্য, ‘‘লোকসভা ভোটে যা করতে পেরেছিলেন, পুরভোটে তা করতে না পেরেই দীপালিদেবী চটে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।’’

দীপালিদেবীর দাবি, “কয়েক’টি ওয়ার্ডে ওরা (বাম) সন্ত্রাস চালিয়ে ভোট লুঠ করেছে। তাই নিরঙ্কুশ পুরসভা হবে এখনই হলফ করে বলতে পারছি না। তবে সোনামুখীতে বোর্ড আমরাই গড়ব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন