এক দিকে কৃষক সমবায়। অন্য দিকে বেসরকারি সংস্থা। সরকারের উপস্থিতিতে চুক্তি হবে দু’পক্ষের মধ্যে। সেই চুক্তির ভিত্তিতেই চলবে চাষ-আবাদ। সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থা অবশ্য চাষের জমির মালিকানা পাবে না। তারা শুধু নির্দিষ্ট দামে ফসল কিনতে বাধ্য থাকবে।
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার দু’-এক জায়গায় ইতিমধ্যেই পরীক্ষামূলক ভাবে এই ‘কর্পোরেট ফার্মিং’ বা বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। কৃষক সমবায়গুলির কাছ থেকে সব্জি কিনে স্থানীয় বাজারে তা বিক্রি তো করা হচ্ছেই। সেই সঙ্গে বিদেশে রফতানিও চলছে। পশ্চিমাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জেলাগুলিতেও এ বার এই মডেলে চাষ শুরু করতে চাইছে রাজ্য সরকার।
চুক্তি-চাষ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিস্তর টানাপড়েন চলেছে। সরকার অবশ্য এখন এই চাষকে ‘চুক্তি-চাষ’ না বলে ‘অংশগ্রহণ-ভিত্তিক চাষ’ বলার পক্ষপাতী। এতে কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, উদ্যান পালন, সেচ ও কৃষি বিপণন দফতর একসঙ্গে কাজ করবে। নবান্ন সূত্রের খবর, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বর্ধমানের কিছু অঞ্চলে কৃষকদের নিয়ে ‘ফার্মার্স প্রডিউসার কোম্পানি’ গড়া হবে। আসলে সেগুলো হবে ছোট বা মাঝারি মাপের সমবায়। বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে চাষ শুরু করবে তারা।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কৃষক সমবায় বা সংগঠনের সঙ্গে দেশি বা বিদেশি সংস্থার চুক্তি হবে। ওই সংস্থাই সার, বীজ, কীটনাশক জোগাবে এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেবে। বিনিময়ে ফসল পাবে সংস্থাটি। দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে ফসলের দাম ধার্য করা হবে আগে থেকেই। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি ইতিমধ্যেই অনুমোদন পেয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ফল ও সব্জি চাষের উপরে বিশেষ গুরুত্ব দিতে সম্প্রতি রাজ্য স্তরে কমিটি গড়েছে নবান্ন। জেলাশাসক এবং জেলা সভাধিপতিদের নিয়ে জেলা স্তরেও একটি করে নজরদার কমিটি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা জানান, রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে এই মডেলেই ভাল চাষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, ওই অঞ্চলের কৃষকদের আর্থিক সঙ্গতি কম। দেশি-বিদেশি সংস্থা এগিয়ে এলে কৃষিকাজে অর্থের এভাব হবে না। ‘‘ইতিমধ্যেই কিছু সংস্থা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূমে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে চাষের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে,’’ বললেন রেজ্জাক।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী জানান, কোথায় কী কী ধরনের সব্জি এবং কোথায় কোন কোন ফল চাষ করলে দু’পক্ষই লাভবান হবে, জমি খতিয়ে দেখে সরকারি বিশেষজ্ঞেরা সেই বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। কৃষি বিশেষজ্ঞেরা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় জলের টানাটানি। তাই সেখানে কম জলের শস্য বা ফল চাষে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে নবান্নের খবর। কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর দাবি, পরীক্ষামূলক ভাবে বাঁকুড়ার দু’-এক জায়গায় ‘অংশগ্রহণ-ভিত্তিক’ সব্জি চাষে ভাল ফল মিলেছে। সেখানকার সব্জি রফতানি হচ্ছে দুবাই, সিঙ্গাপুরে।
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২০১৭ সালে প্রকল্পের জন্য জমি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হবে। বাছাই করা হবে কৃষক পরিবারগুলিকেও। প্রথম ধাপে প্রকল্পের কাজ চলবে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলি এই খাতে ৭০ কোটি টাকা খরচ করবে। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির ১৮ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিকে ফল ও সব্জি চাষের আওতায় আনা হবে।
উদ্যান পালন দফতর সূত্রের খবর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় ইতিমধ্যে কৃষকদের নিয়ে গোটা দশেক সংস্থা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কথা চলছে বিভিন্ন পেশাদার বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেও। গ্রামের মহিলাদের নিয়ে গঠিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকেও এই কাজে যুক্ত করা হতে পারে।