এক দিকে খরচে রাশ টানতে কড়াকড়ির অন্ত নেই। অন্য দিকে ফস্কা গেরো হয়ে দাঁড়িয়েছে ভুল উড়ান-নীতি। যার ফাঁক গলে জলের মতো টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে লোকসানে ন্যূব্জ সরকারি বিমানসংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া-র অন্দরমহলে।
সংস্থা-সূত্রের খবর: কর্তৃপক্ষ কঠোর ভাবে ব্যয়সঙ্কোচ শুরু করেছেন। নানা বিধি-নিষেধের শৃঙ্খলে বাঁধা হয়েছে কর্মী-অফিসারদের। পান থেকে চুন খসলে শাস্তির হুঁশিয়ারি! বহু জায়গায় অফিস পর্যন্ত তুলে দেওয়া হয়েছে। অথচ যাত্রীর অভাবে যে সব রুটে বেসরকারি সংস্থা বিমান চালাতে গররাজি, ক্ষতি পুইয়েই সেখানে দিনের পর দিন উড়ান চালাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। অভিযোগ, উপরমহলের চাপেই এ হেন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
উদাহরণ হিসেবে উঠে আসছে কলকাতা-অন্ডাল উড়ানের কথা। সংস্থা সূত্রের খবর: ওই রুটে এয়ার ইন্ডিয়া-র ৪২ আসনের ছোট এটিআর বিমান কোনও দিন সাত জন, কোনও দিন বা সাকুল্যে তিন জন যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করছে। এতে এয়ার ইন্ডিয়া’র যা লোকসান হবে, অন্ডাল বিমানবন্দরের তরফে তা পুষিয়ে দেওয়ার কথা। ‘‘কিন্তু এটিআরকে অন্য লাভজনক রুটে চালালে বেশি মুনাফা হতো। যেমন, কলকাতা থেকে রাঁচি বা পটনায়, যেখানে আমাদের উড়ান নেই।’’— পর্যবেক্ষণ এক এয়ার ইন্ডিয়া অফিসারের। তাঁদের অভিযোগ, উপরমহলই ইচ্ছেতেই এটা হয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়া-কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি: অন্ডাল রুটে অন্তত লোকসান হবে না। তাই সেখানে উড়ান চালানো যেতেই পারে। যেখানে মুনাফা হতে পারত, এটিআর-উড়ান সেখানে চালানো হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষের জবাব, দেশের স্বার্থে কিছু জিনিস মেনে নিতেই হয়।
প্রসঙ্গত, কলকাতায় এখন শুধু একটা এটিআর রয়েছে। তা-ও বহু পুরনো। ঠিক হয়েছিল, নতুন এটিআর কিনে কলকাতায় পাঠানো হবে। কিন্তু প্রথমে কেনা দু’টো এটিআর দিল্লিকে দেওয়া হয়। পরেরটি পাড়ি দিয়েছে হায়দরাবাদে, যা কিনা খোদ বিমানমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজু-র নিজের শহর। এয়ার ইন্ডিয়া’র এক অফিসারের আক্ষেপ, ‘‘উত্তর-পূর্বে এটিআর পরিবহণের ক্ষেত্রে কলকাতা অন্যতম প্রধান ঘাঁটি। তবু কলকাতা নতুন বিমান তো পেলই না, উল্টে এটিআর চালানোর জন্য এই শহর থেকেই বেশ কিছু বিমানকর্মী ও ইঞ্জিনিয়ারকে হায়দরাবাদে নিয়ে যাওয়া হল! এতে কোম্পানির খরচ আরও বাড়ছে!’’
এ দিকে বছরখানেক আগে ভুবনেশ্বরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তকমা দেওয়া হয়েছে। কোনও বেসরকারি সংস্থা সেখান থেকে আন্তর্জাতিক উড়ান চালু করতে রাজি হয়নি। অগত্যা ভরসা সেই এয়ার ইন্ডিয়া। যার সুবাদে লোকসানের বহরও চড়ছে বলে অভিযোগ।
কী রকম? ভুবনেশ্বরে এয়ার ইন্ডিয়া’র ‘আন্তর্জাতিক উড়ান’ চালু হয়েছে গত শুক্রবার। বিমানটি ভুবনেশ্বর থেকে দিল্লি যাবে, সেখান থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার-ই অন্য বিমানে যাত্রীরা পাড়ি দিতে পারবেন দুবাই-সিঙ্গাপুর-লন্ডন। কিন্তু এক বার দিল্লি পৌঁছতে পারলে তো বিদেশ যাওয়ার অন্য অনেক সংস্থার উড়ান রয়েছে! উপরন্তু ভুবনেশ্বর-দিল্লি রুটে এখন দু’টি উড়ান চালু। ‘আন্তর্জাতিক’ ছাপ্পা লাগিয়ে আর একটা বিমান ছাড়ার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে কর্মী-অফিসারদের একাংশে। ওঁদের মতে, এ-ও অপব্যয় ছাড়া কিছু নয়।
এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, এ ক্ষেত্রে ভুবনেশ্বর থেকেই অভিবাসন ও শুল্কের কাজকর্ম সেরে ফেলা যাবে। কাজেই অনেক বিদেশযাত্রী এয়ার ইন্ডিয়ায় সওয়ার হতে আগ্রহী হবেন বলে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী। যদিও কর্মীদের একাংশের অভিমত, ভুবনেশ্বরের পরিবর্তে বিমানটি কলকাতা-ব্যাঙ্কক পুরনো রুটে চালালে লাভ বেশি হতো।
এ প্রসঙ্গে অবশ্য কর্তৃপক্ষের কোনও মতামত পাওয়া যায়নি।