ডিএসপি-র ধোঁয়ায় ঢাকল শহর

শহরবাসী জানান, শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট থেকে লালচে ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ ছড়ায় এলাকায়। প্রায় চার ঘণ্টা এমন বিপত্তি চলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৮ ০১:৪৩
Share:

আঁধার: ধোঁয়ায় এমনই ছিল দুর্গাপুরের হাল। ২ নম্বর জাতীয় সড়কে, মেনগেট এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

আকাশ প্রায় আঁধার। ২ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়া এক গাড়ির চালক বললেন, ‘ভেবেছিলাম, সামনে বৃষ্টি হচ্ছে বোধহয়।’ শহরের অন্য এলাকায় দেখা গেল, বাসিন্দাদের একাংশ নাকে রুমাল চেপে দ্রুত রওনা দিচ্ছেন বাড়ির দিকে।

Advertisement

ঘটনাস্থল, দুর্গাপুর। শহরবাসী জানান, শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট থেকে লালচে ধোঁয়া ও দুর্গন্ধ ছড়ায় এলাকায়। প্রায় চার ঘণ্টা এমন বিপত্তি চলে। তবে এই বিপত্তির কারণ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠন সিটুর মধ্যে। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান, বেসিক অক্সিজেন ফার্নেস (বিওএফ) বিভাগে গোলমালের কারণে লোহার গুঁড়ো মিশ্রিত কণা বেরোতে শুরু করে। যদিও সিটুর দাবি, সংশ্লিষ্ট বিভাগের গ্যাস লাইন ‘ইমার্জেন্সি পদ্ধতি’-তে সাফ করতে গিয়েই সমস্যা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আচমকা কারখানা লাগোয়া এলাকা ধোঁয়ায় ঢাকে। দুর্গাপুর পুরসভার ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকায় ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী জানান, শ্বাস নিতে সমস্যায় পড়েন অনেকে। কারও কারও বমি-বমি ভাব শুরু হয়। দেখা যায়, ধোঁয়া, ধুলো ও ঝাঁঝালো গন্ধ থেকে বাঁচতে দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়েন অনেকে। ইদের নমাজ পড়তে গিয়েও দু-একজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। সমস্যা হয় কারখানা লাগোয়া জাতীয় সড়কের বেশ কিছু এলাকাতেও।

Advertisement

মেনগেট, কাদা রোড, আমরাই, কাণ্ডেশ্বর প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দারা জানান, ডিএসপি থেকে গ্যাস ‘লিক’ হচ্ছে, এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এমনকী বেনাচিতি বাজারের বহু দোকানও বন্ধ ছিল। ক্রেতা-বিক্রেতা, দু’পক্ষেরই অনুপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যদিও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। দুপুর ১২টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় বলে জানান বাসিন্দারা।

ডিএসপি-র দাবি, এ দিন এক নম্বর বিওএফ বিভাগের সংশ্লিষ্ট ‘গ্যাস ক্লিনিং প্ল্যান্টে’র ‘স্ক্র্যাবার’ কোনও কারণে কাজ করেনি। সেই সঙ্গে জোরালো হাওয়া ছিল। ফলে এই বিপত্তি ঘটে। ডিএসপি কর্তৃপক্ষ জানান, সংশ্লিষ্ট বিভাগটি দ্রুত বন্ধ করে মেরামতির কাজ শুরু করা হয়। আতঙ্কের কিছু নেই।

তবে ডিএসপি-র সিটু নেতা বিশ্বরূপ বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘কারখানা-সহ প্রায় সারা শহরে ভয়াবহ দূষণ ছড়িয়েছে। হিন্দুস্থান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে ও ফের যাতে এমনটা না হয়, তার জন্য আর্জি জানিয়েছে।’’

যদিও ডিএসপি বা অন্য কারখানায় বিপত্তির অভিযোগ দুর্গাপুরে নতুন নয়। চলতি বছরেই ডিএসপি-তে গ্যাস লিক করে দু’জন ঠিকাকর্মীর মৃত্যু হয়। তা ছাড়া পানাগড় শিল্পতালুকের একটি বেসরকারি সার কারখানা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোয় বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্যও দেখা গিয়েছিল। পানাগড়ের একটি অন্য বেসরকারি কারখানা থেকেও অতীতে একাধিকবার গ্যাস ছড়ানোয় বিপত্তির অভিযোগ করেছিলেন বাসিন্দারা।

যদিও এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে ডিএসপি-র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক চিন্ময় সমাজদার বলেন, ‘‘গ্যাস লিক হয়নি। বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে কেন এমনটা হল, সে বিষয়ে তদন্ত
করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন