West Bengal Panchayat Election 2023

অসুরের মুখে গান্ধীজির আদল বানিয়ে প্রচারে আসা হিন্দু মহাসভা পঞ্চায়েতে লড়তে চায়, তৎপরতা শুরু

বাংলা দিয়েই নতুন করে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে চাইছে হিন্দু মহাসভা। নিজেদের তেমন শক্তি না থাকায় বিভিন্ন দলের ‘প্রকৃত হিন্দু’ কর্মীদের নিয়েই লড়াই চায় দল। শুরু হয়েছে প্রার্থী খোঁজা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৩ ১৭:১৮
Share:

দুর্গামূর্তি নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিল হিন্দু মহাসভা। — ফাইল চিত্র।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়তে চায় ‘অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা’। এই দলের ইতিহাস পুরনো। কিন্তু রাজ্যে সাম্প্রতিক কালে তারা পরিচিত হয়েছিল একটি বিতর্কের কারণে। গত বছর কলকাতার কসবা এলাকায় হিন্দু মহাসভা একটি দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছিল। দেখা যায় সেই মণ্ডপে অসুরের মুখটি মহাত্মা গান্ধীর আদলে তৈরি। তা নিয়ে বিতর্ক হয়। অবশেষে স্থানীয় পুলিশ গিয়ে চুল আর গোঁফ লাগিয়ে অসুরের রূপ বদলে দেয়।

Advertisement

সেই ‘বিতর্কিত’ হিন্দু মহাসভা এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে। সংগঠনের তরফে একটি ফোন নম্বর দিয়ে আগ্রহী প্রার্থীদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। তবে একটি শর্ত রয়েছে— প্রার্থীদের ‘প্রকৃত হিন্দু’ হতে হবে।

নিজেকে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি হিসাবে দাবি করে বেশ কিছু দিন ধরেই হিন্দু মহাসভার নামে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছেন চন্দ্রচূড় গোস্বামী। এ বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারেও তিনিই অগ্রণী। চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘আমরা প্রকৃত হিন্দুত্ববাদী দল। বিজেপি তা নয়। তাই হিন্দুত্বের সমর্থকেরা আমাদেরই ভোট দেবেন। কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপি যে কোনও দলের কর্মীও ‘প্রকৃত হিন্দু’ হলে আমাদের প্রার্থী হতে পারেন।’’ ইতিমধ্যেই অনেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন বলেও দাবি করেছেন চন্দ্রচূড়।

Advertisement

পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন শুরু হয়ে গিয়েছে। সময় খুব কম। এর মধ্যে কত আসনে প্রার্থী দিতে পারবে হিন্দু মহাসভা? চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘কত আসনে প্রার্থী দিতে পারছি, সেটা আমাদের কাছে বড় কথা নয়। আমরা চাই যেখানে কোনও ‘প্রকৃত হিন্দু’ প্রার্থী হতে চাইবেন, তিনি যেন সুযোগ পান। আর যাঁরা ‘প্রকৃত হিন্দু’দের নির্বাচিত করতে চান, তাঁরাও যেন সেই সুযোগ পান।’’

রাজ্যে এর আগে কোনও নির্বাচনে হিন্দু মহাসভা লড়াই না করলেও ২০২১ সালে ভোটের ময়দানে নেমেছিলেন চন্দ্রচূড়। ভবানীপুরের উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ৮১টি। তার আগে বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপির ‘এলিট’ কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। নবান্ন দখলের উদ্দেশ্যে ‘লক্ষ্য সোনার বাংলা’ নামে একটি কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি। অমিত শাহের পরিকল্পনা মতো তার জন্য বিশিষ্টদের নিয়ে একটি ‘এলিট কমিটি’ গড়া হয়। সেই কমিটির বক্তাদের তালিকায় ছিলেন চন্দ্রচূড়। রাজ্য বিজেপির বিদ্বজ্জন কমিটিরও তিনি সহ-আহ্বায়ক ছিলেন। গান্ধীজি-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার পরে এই সব দাবি করেছিলেন চন্দ্রচূড়ই। এখন তিনি পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী খুঁজতে নেমেছেন।

হিন্দু মহাসভার প্রার্থীরা কোন প্রতীকে লড়বেন? চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘একটা সময় আমাদের প্রতীক ছিল স্বস্তিক চিহ্ন। চক্রান্ত করে জওহরলাল নেহরু সেটিকেই জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতীক করে দেন! এখন আমাদের রাজনৈতিক দল হিসাবে স্বীকৃতি না থাকায় নির্দল হিসাবেই লড়াই করতে হবে। আমরা তাই হিন্দুত্বের সঙ্গে মিল রয়েছে, প্রার্থীদের এমন প্রতীক বাছার জন্য বলব।’’

অতীতে হিন্দু মহাসভার থেকে সমদূরত্ব রাখতে দেখা গিয়েছে বিজেপি এবং তৃণমূলকে। দু’দলেরই অভিযোগ ছিল, অপর দলকে সুবিধা করে দিচ্ছে হিন্দু মহাসভা। এ বারেও সেই প্রশ্ন উঠলে কী জবাব দেবেন? চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘আমরাই প্রকৃত সনাতনী জাতীয়তাবাদী এবং হিন্দুত্ববাদী মুখ। পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াই হবে হিন্দুত্বের পক্ষে। তৃণমূল বলছে আমরা বিজেপির সঙ্গে। বিজেপি বলছে আমরা তৃণমূলের সঙ্গে। কিন্তু আমরা ‘প্রকৃত হিন্দু’দের সঙ্গে। গোহত্যা নিষিদ্ধ করা, ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করা, ভারতীয় মুদ্রা থেকে গান্ধীর মুখ সরিয়ে নেতাজির মুখ আনার দাবি নিয়েই আমরা ভোটে লড়ব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন