আলিম, ফাজিল পাশ করেও কেন্দ্রীয় চাকরিতে ব্রাত্য প্রার্থীরা

রাজ্য সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় স্তরের চাকরিতে আলিম এবং ফাজিল পাঠ্যক্রমকে আমলই দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ওই দুই পাঠ্যক্রম পাশ করা কর্মপ্রার্থীরা সমস্যায় পড়ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৬ ০৯:৫২
Share:

রাজ্য সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় স্তরের চাকরিতে আলিম এবং ফাজিল পাঠ্যক্রমকে আমলই দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ওই দুই পাঠ্যক্রম পাশ করা কর্মপ্রার্থীরা সমস্যায় পড়ছেন। কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই জট কাটানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

Advertisement

রাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের অভিযোগ, আলিম বা ফাজিল পাশ করা প্রার্থীদের সেনাবাহিনী, আধা-সামরিক বাহিনী বা কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীতে চাকরি দেওয়া হচ্ছে না। রাজ্য সরকার আলিমকে মাধ্যমিক এবং ফাজিলকে উচ্চ মাধ্যমিকের সমতুল বলে মান্যতা দিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তাদের সেই স্বীকৃতি মানতে রাজি নয়। এই পরিস্থিতিতেই নবান্নের হস্তক্ষেপ চাইছে মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ।

রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরে সম্প্রতি পাঠানো চিঠিতে মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সচিব লিখেছেন, ‘সেনাবাহিনী, আধা-সামরিক বাহিনী বা কেন্দ্রীয় পুলিশের চাকরির জন্য আলিম এবং ফাজিল পাশ করা আবেদনকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে মান্যতা দেওয়া হচ্ছে না। জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ওই দু’টি পাঠ্যক্রমকে তারা মানে না। দিল্লির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাতে এর বিহিত করা যায়, সরকার সেটা দেখুক।’ পর্ষদের অভিযোগ পেয়ে দিল্লিতে ইতিমধ্যেই দরবার শুরু করেছে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এই ব্যাপারে এখনও তাদের অভিমত জানায়নি বলে দফতরের এক কর্তা জানান।

Advertisement

দেশের একটি রাজ্য যে-সব পাঠ্যক্রমকে স্বীকৃতি দিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাগুলি সেগুলোকে মান্যতা দিচ্ছে না কোন যুক্তিতে?

মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ সূত্রের খবর, পর্ষদ স্বীকৃত ৬১৪টি মাদ্রাসা চলে পশ্চিমবঙ্গে। তার মধ্যে ৫১২টি হাইমাদ্রাসা এবং ১০২টি সিনিয়র মাদ্রাসা। হাইমাদ্রাসা থেকে যে-সব ছাত্রছাত্রী পাশ করেন, পরের ধাপে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বা চাকরি পেতে তাঁদের কোনও সমস্যা হয় না। ১৯৯৪ সালের মাদ্রাসা আইনে হাইমাদ্রাসাকে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার সমতুল বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে। সিনিয়র মাদ্রাসাতেই আলিম এবং ফাজিল পড়ানো হয়। সেখানে অন্যান্য বিষয় পড়ানো হলেও বাড়তি গুরুত্ব পায় ইসলামি ধর্মশিক্ষা। আর সেই জন্যই অনেক সংস্থা একে মান্যতা দেয় না।

রাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মহম্মদ ফজলে রাবি জানান, সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যক্রমে ধর্মশিক্ষা রয়েছে ২৫০ নম্বরের। যদিও অঙ্ক-বিজ্ঞানও তারা পড়ে। ভৌতবিজ্ঞান, জীবনবিজ্ঞান এবং ভূগোল রয়েছে ৫০ নম্বর করে। তবে জোর দেওয়া হয় ধর্মতত্ত্ব এবং ইসলামি ইতিহাসের উপরে। ‘‘রাজ্য সরকার আলিম এবং ফাজিলকে যথাক্রমে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের সমতুল হিসেবে মেনে নিয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রের কোনও কোনও সংস্থা সেটা মানছে না,’’ বলছেন পর্ষদের সভাপতি। পর্ষদের সচিব সৈয়দ নুরুস সালাম জানান, ফি-বছর আট হাজার পড়ুয়া আলিম ও তিন হাজার পড়ুয়া ফাজিল পরীক্ষা দেন। তাঁরা সরকারি চাকরিতে আবেদন করলে কখনও কখনও সমস্যা হয়। আশা করা হচ্ছে, এই দুই পাঠ্যক্রমকে মান্যতা দেওয়ার জন্য সেনা ও আধা-সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেবে কেন্দ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন