ফাইল চিত্র।
দল এখনও পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার ধারে-কাছেও নেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় শাসক দল হওয়ার সুবাদে গত বছর মে মাসে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল বঙ্গ বিজেপি-র বিরুদ্ধে। এ বছর জুন মাসে তারা ফের বিদ্ধ লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) কেলেঙ্কারির অভিযোগে। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও স্বীকার করে নিয়েছেন, এই অভিযোগ তাঁর অজানা নয়।
বিজেপি সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদে দলের এক মণ্ডল সভাপতি-সহ আট কর্মী এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর চার স্বয়ংসেবক গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটর হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। অভিযোগ, জেলায় দলের এক শীর্ষ নেতা তাঁদের জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা দিল্লিতে কথা বলেছেন। মাথাপিছু দুই বা তিন লক্ষ টাকা করে দিলে গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটরশিপ অবশ্যই মিলবে। আবেদনকারীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, বিজেপি কর্মী হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের টাকা দিতে হবে কেন? আরও অভিযোগ, তখন তাঁদের বলা হয়, গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটরশিপ পেতে গেলে ১৭/১৮ লক্ষ টাকা ঘুষ দেওয়াই দস্তুর। সেখানে তাঁদের অনেক কম টাকায় কাজ হয়ে যাবে শুধু তাঁরা দলীয় কর্মী বলে। আশ্বাস পেয়ে আবেদনকারীরা টাকা দেন। কিন্তু লটারির পর দেখা যায়, ডিস্ট্রিবিউটরশিপ তাঁরা পাননি। টাকা দিয়েও কাজ না হওয়ায় দলের অন্দরে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তাঁরা। রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন।
বিজেপি-র একটি সূত্রের অভিযোগ, মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ এই আর্থিক কেলেঙ্কারিতে যুক্ত। গত নভেম্বর মাসে দলের গাড়িতে ওই টাকার একাংশের লেনদেন হয়। বিজেপি-র ওই সূত্রের আরও অভিযোগ, এখন কর্মীদের চাপে তিনি দলের অন্দরে দাবি করছেন, আবেদনকারীদের থেকে নেওয়া টাকা কলকাতায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আবেদনকারীরা যাতে নিশ্চিত ভাবেই গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটরশিপ পান, তার জন্য রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু এবং আরএসএস-এর দক্ষিণবঙ্গের প্রান্ত প্রচারক বিদ্যুৎ মুখোপাধ্যায় আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করে সুপারিশ করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছর বসিরহাটে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি-র বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ এখনও সিআই়়ডি-র তদন্তাধীন।
গৌরীশঙ্করবাবুকে গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরশিপ সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে দলের একাংশ এ সব মিথ্যে কথা রটাচ্ছে।’’
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু অবশ্য সাফ বলেছেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে কয়েক জন আমার কাছে এসেছিলেন। আমি অভিযোগ শুনেছি। তাঁদের বলেছি, টাকা যাঁরা দিয়েছেন, প্রথম দোষী তাঁরাই। টাকা দিয়েছেন কেন? টাকা দিয়ে কোনও কাজ হবে না। দল এ সব কাজ করে না।’’ যাঁরা টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁদের বিরুদ্ধে কি দলীয় তদন্ত হবে? দিলীপবাবু বলেন, ‘‘হ্যাঁ। তদন্তে দোষ প্রমাণ হলে দল ব্যবস্থা নেবে।’’ ওই আবেদনকারীদের গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটরশিপ পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি সুপারিশ করেছিলেন বলে এক জেলা নেতা কর্মীদের কাছে দাবি করেছেন। দিলীপবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘তাই নাকি! আমার সই করা কাগজটা আমাকে দেখাক দেখি!’’ আর গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটরশিপ সংক্রান্ত অভিযোগের আদ্যোপান্ত জানিয়ে বিদ্যুৎবাবুকে ফোনে মেসেজ করা হলে তিনি এক শব্দে জবাব দিয়েছেন, ‘‘ভুয়ো।’’