Nursing

বেআইনি জেনেও নার্স তৈরির কারবার 

বিএসসি নার্সিং কোর্সের এমন শ’তিনেক কলেজ এ রাজ্যে চলছে বলে অভিযোগ। সেখানে পড়তে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন এমন নজিরও ভুরিভুরি।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

কলেজ কর্নাটকে। কিন্তু ক্লাস চলছে কাকদ্বীপে। পরীক্ষা হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে। পরীক্ষা শেষে কেউ কেউ শংসাপত্রও পেয়ে যাচ্ছেন। তা দেখিয়ে চাকরিতে ঢুকে পড়েছেন অনেকেই। এ দিকে কর্তৃপক্ষ বলছেন, পুরো ব্যবস্থাটাই বেআইনি।

Advertisement

বিএসসি নার্সিং কোর্সের এমন শ’তিনেক কলেজ এ রাজ্যে চলছে বলে অভিযোগ। সেখানে পড়তে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন এমন নজিরও ভুরিভুরি। তার পরেও রমরমিয়ে বছরের পর বছর চলছে কলেজগুলি। কেউ কেউ ফি বছর কলেজের নাম বদলাচ্ছে। নতুন কলেজও খুলছে অবাধে। অভিযোগ, প্রতারিত হয়েছেন জানতে পেরে প্রতিবাদ করতে গেলে জুটছে হুমকি।

পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ায় কংসাবতী নদীর কাছে একটি বড় বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানেই নার্সিং কোর্সের ক্লাস হচ্ছে। জনা পঞ্চাশেক ছাত্রী সেখানে নিয়মিত ক্লাসও করছেন। বাগদেবী কলেজ নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি এখনও পর্যন্ত কোনও আইনি নথি অভিভাবকদের দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ। কলেজের মালিক অরুণ বেরা এমন অভিযোগ শুনে অবাক! তিনি বলেন, “কই, নার্সিং কলেজ কোথায়? আমরা তো বৃত্তিমূলক কোর্স করাই।” অরুণবাবুর সঙ্গে ফোনে কথা বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই পড়ুয়াদের হস্টেল ছাড়তে বলা হয় বলে অভিযোগ। আপাতত সেখানে বন্ধ ক্লাস।

Advertisement

ওই কলেজে মেয়েকে ভর্তি করিয়েছিলেন দমকল বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মী গৌরহরি খাটুয়া। তিনি বলেন, “আমাদের বলা হয়েছিল রাজ্যের নার্সিং কাউন্সিলের অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু পরে ওরা কর্নাটক কাউন্সিলের কথা বলে।

কাগজপত্র দেখতে চাইলে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলে, 'সব পেয়ে যাবেন। আমার হাত খুব লম্বা। কেউ আমার কিছু করতে পারবে না।' ভর্তির সময় ৮০ হাজার টাকা দিয়েছি। ফের ৭০ হাজার টাকা চাইছে।

অভিযোগ, রাজ্য জুড়ে এমন অন্তত ৩০০ ভুয়ো নার্সিং স্কুল বা কলেজ চলছে। পড়ুয়াদের ভর্তি করা হচ্ছে কর্নাটক বা অন্ধ্রপ্রদেশের কোনও নার্সিং কলেজে। কিন্তু তাঁরা এ রাজ্যেই ক্লাস করে ভিন্ রাজ্যের কলেজে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে ডিগ্রি পেয়ে যাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠছে, শংসাপত্র কীভাবে পাচ্ছেন তাঁরা?

বেশিরভাগ নার্সিং স্কুল-কলেজ কর্নাটক-কেরল এবং অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু কলেজের সঙ্গে যোগসাজশে এই কারবার ফেঁদেছে। ফলে ক্লাস না করেও তাদের কলেজের হয়ে পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার বিনিময়ে মোটা টাকা পাচ্ছে তারাও। তার মধ্যে কিছু ভুয়ো কলেজও রয়েছে। ফলে পড়ুয়ারা যে শংসাপত্র পাচ্ছেন, তাও ভুয়ো। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির একটি নার্সিং কলেজে ক্লাস করে কর্নাটকের কলেজের শংসাপত্র পেয়েছেন নদিয়ার সমীরণ সর্দার। পরে জানতে পারেন কর্নাটকের সেই কলেজও ভুয়ো। কুলপির কলেজে প্রতারিতেরা গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তখন কলেজ তাঁদের জানায়, তারাও ঠকে গিয়েছে। প্রতারিতদের ৪৫-৫০ হাজার টাকা ফেরতও দেওয়া হয়। অথচ, তাঁরা কোর্স ফি হিসেবে দিয়েছিলেন প্রায় চার লক্ষ টাকা।
হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় কলেজে কোর্স করে বেঙ্গালুরুর কলেজের শংসাপত্র পেয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির বাসিন্দা শ্যামলী জানা (নাম পরিবর্তিত)। তমলুকের একটি কলেজ থেকে একই কোর্স করেছেন রমেন বিশ্বাস। বছর দুয়েক আগে কোর্স শেষ হলেও এখনও চাকরি পাননি তাঁরা। রমেন বলছেন, “বেঙ্গালুরুর কলেজে পরীক্ষা দিলেও, আমাদের ক্লাস হয়েছিল এখানে। পরে জানতে পারি বিষয়টি অবৈধ এবং এই ধরনের কোর্স ভুয়ো। ফলে ওই সার্টিফিকেট আর কোথাও দেখাইনি। সাড়ে চার লক্ষ টাকা জলে গিয়েছে। নতুন করে টাকা খরচ ফের বেঙ্গালুরুর কলেজে একই কোর্স করছি। মাঝখানে তিন বছর নষ্ট হল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন