অসুস্থ মেয়ের জন্য সাহায্য চেয়ে মন্ত্রী গৌতম দেবের কাছে সুকুমার দাস। রবিবার। ছবি: সন্দীপ পাল।
সময়টা ভাল যাচ্ছে না উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের। শিলিগুড়ি পুরসভা দখল করতে না পেরে শনিবারই দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ধমক খেয়েছেন গৌতমবাবু। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফের বিতর্কে তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি!
এ বার অসুস্থ শিশুকন্যার চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাইতে যাওয়া এক দিনমজুর দম্পতির সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। গৌতমবাবুর বিধানসভা এলাকার (ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি) মধ্য শান্তিনগরের দম্পতি সুকুমার দাস ও সান্ত্বনা দেবীর দু’বছরের মেয়ের ব্রেন টিউমার। সব সরকারি হাসপাতাল ফিরিয়ে দিয়েছে। তাঁরা ভিন রাজ্যে অস্ত্রোপচারের জন্য যাবেন। তাই সাহায্য তুলছেন। সে জন্য মেয়েকে নিয়ে ওই দম্পতি রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ মন্ত্রীর বাড়িতে যান।
সুকুমারবাবুর অভিযোগ, ‘‘মন্ত্রী জানান, ব্যস্ত রয়েছেন। কথা বলতে পারবেন না। আমরা অনুরোধ করলে চেঁচামেচি শুরু করে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। রক্ষীরা ছুটে এলে আমরা কোনও মতে ছুটে বেরিয়ে যাই।’’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এর পরেই রাস্তার মোড়ে সান্ত্বনাদেবী ও তাঁদের সঙ্গে থাকা লোকজন ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে মন্ত্রী লোক পাঠিয়ে গাড়ি করে তাঁদের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে নিয়ে টাকা দেন। কিন্তু, গোড়ায় কেন ওই রকম আচরণ মন্ত্রী করেছিলেন সেটাই বুঝে পাচ্ছেন না ওই দম্পতি। ওই ঘটনা জানাজানি হতেই হইচই শুরু হয় শহরের নানা মহলে। বিভিন্ন মহলে নিন্দার ঝড় ওঠে। দুপুরেই মন্ত্রী ওই দম্পতিকে দফতরে ডেকে ১০ হাজার টাকা দেন। মন্ত্রীর দাবি, ‘‘ওঁরা সকালে বাড়িতে গিয়েছিলেন। কোথাও আবেদন করেছিলেন কি না সে কথাই জানতে চেয়েছি। অথচ আমি দুর্ব্যবহার করেছি, তাড়িয়ে দিয়েছি বলে ভিত্তিহীন অভিযোগ রটানো হচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না। চিকিৎসার জন্য আমি কাউকেই সাধারণত ফেরাই না। যাই হোক ওদের ডেকে আর্থিক সাহায্য করেছি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও সাহায্যের জন্য আবেদন করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’’
গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার, উদ্ধত আচরণের অভিযোগ আগেও উঠেছে। দলের বৈঠকে স্থানীয় পত্রিকার এক সাংবাদিকে মারধরের অভিযোগে পুলিশে অভিযোগ হয়। পরে রামঘাটে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কাজের বিরোধিতা করায় এক ব্যক্তিকে চড় মারার অভিযোগেও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সদ্যসমাপ্ত পুরভোটের প্রাক্কালে দলের এক জন মহিলা নেত্রী মন্ত্রীর প্রকাশ্য ভর্ৎসনায় কেঁদেই ফেলেন। বিরোধীরাও সরব হয়েছেন। শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘জনপ্রতিনিধিদের অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়। আচরণে যাতে কেউ দুঃখ না পান তা খেয়াল রাখা জরুরি।’’ দার্জিলিং জেলার (সমতল) কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকারের মন্তব্য, ‘‘পুরভোটের ফল থেকেও মন্ত্রীর বোঝা উচিত, তাঁর আচরণ আরও সংযত হোক চায় শিলিগুড়ি।’’ বিজেপি-র জেলা সভাপতি রথীন বসু বলেন, ‘‘এটা বলতে পারি, মানুষ ক্ষমতায় বসান, তাঁরাই কিন্তু টেনে নামাতে পারেন!’’