অভিযোগ কারচুপির

প্রধান শিক্ষক নিয়োগে ফের তালিকা-বিভ্রাট

কারও নাম প্রথমে ছিল ৮০৪ নম্বরে। পরের দিন দ্বিতীয় বার ওয়েবসাইট খুলে তিনি দেখলেন, তাঁর নাম ৮০৫ নম্বরে চলে গিয়েছে! একই ভাবে যিনি ছিলেন ৯৫৮-য়, সেই প্রার্থী নেমে গিয়েছেন তালিকার ৯৫৯ নম্বরে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৭
Share:

কারও নাম প্রথমে ছিল ৮০৪ নম্বরে। পরের দিন দ্বিতীয় বার ওয়েবসাইট খুলে তিনি দেখলেন, তাঁর নাম ৮০৫ নম্বরে চলে গিয়েছে! একই ভাবে যিনি ছিলেন ৯৫৮-য়, সেই প্রার্থী নেমে গিয়েছেন তালিকার ৯৫৯ নম্বরে।

Advertisement

প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকা নিয়োগের জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র ওয়েবসাইটে ঘোষিত প্রার্থী-তালিকায় এই ধরনের ভূরি ভূরি গরমিলের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, এই তালিকা-বিভ্রাটের পিছনে আছে সুপরিকল্পিত কারচুপি। কিছু প্রার্থীকে ভাল স্কুল পাইয়ে দেওয়ার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এটা করা হচ্ছে বলে সন্দেহ করছে শিক্ষা শিবিরের একটি অংশ।

প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকার পদে আবেদনকারীদের ‘পার্সোনালিটি টেস্ট’ বা ব্যক্তিত্ব পরীক্ষার পরে যাঁরা পরের ধাপ অর্থাৎ কাউন্সেলিংয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, তাঁদের ফল প্রকাশিত হয় গত বুধবার। অভিযোগ, ফল বেরোনোর দিনে বেশ কয়েক জন প্রার্থী কমিশনের ওয়েবসাইটে নির্বাচিত আবেদনকারী হিসেবে নির্দিষ্ট নম্বরে তাঁদের নাম দেখেছিলেন। কিন্তু পরের বার তালিকা খুললে দেখা যায়, কিছু নাম এক বা একাধিক ধাপ নীচে নেমে গিয়েছে।

Advertisement

এই অহেতুক অবনমনের ফলে পছন্দমতো স্কুল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করছেন অনেক প্রার্থী।

পার্সোনালিটি টেস্টে পাশ করা প্রার্থীদের কাউন্সেলিং হওয়ার কথা আগামী ২২, ২৪, ২৫ জানুয়ারি। কাউন্সেলিংয়ে প্রধান শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষিকা পদের প্রার্থীরা নিজেদের পছন্দের স্কুল বেছে নেন। নদিয়া জেলার ভীমপুর স্বামীজি বিদ্যাপীঠের সহকারী প্রধান শিক্ষক নির্মল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ফল বেরোনোর পরে আমি ওয়েবসাইট খুলে দেখি, তালিকায় আমার নাম ৮০৪ নম্বরে আছে। পরের দিন কয়েক জন সহকর্মীর কাছে শুনলাম, পার্সোনালিটি টেস্টে পাশ করা বহু প্রার্থীর নাম তালিকার নীচের দিকে চলে গিয়েছে। আমি তখন ফের ওই তালিকা খুলে দেখি, আমার নাম ৮০৪ থেকে চলে গিয়েছে ৮০৫ নম্বর স্থানে।’’ তাঁর প্রশ্ন, তা হলে কি অন্য কোনও প্রার্থীকে মাঝখানে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে? অভিযোগ, এ ভাবেই এক প্রার্থীর নাম ১৫৮৪ থেকে ১৫৮৫, অন্য এক প্রার্থীর নাম ৯৫৮ থেকে ৯৫৯ নম্বরে নেমে গিয়েছে।

শিক্ষক শিবিরের একাংশের অভিযোগ, প্রথমে ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেখা যাচ্ছিল না। কোনও প্রার্থী নিজের নাম দিয়ে সাইট খুললে তাঁর নাম কত নম্বরে আছে, সেটাই শুধু দেখতে পাচ্ছিলেন। কোনও ভাবেই এটা হওয়ার কথা নয়। তালিকা খুললে পুরোটাই বেরিয়ে আসার কথা। যে-কোনও সফল প্রার্থী দেখে নিতে পারেন, তাঁর আগে-পরে কারা আছে। কারচুপির জন্যই এ বার পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেওয়া হয়নি। কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেসের সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘এসএসসি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করছে না কেন? এর আগে নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সহ-শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও তালিকায় বিভ্রাট ধরা পড়েছিল। এর পিছনে নিশ্চয়ই কারচুপি আছে।’’

এসএসসি-র চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার অবশ্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘এত বড় বিষয়ের মধ্যে এটাকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। প্রধান শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষিকাদের পছন্দের স্কুল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হবে না।’’ তবে কমিশন সূত্রের খবর, বিভ্রাটের প্রচুর অভিযোগ আসার পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেওয়া

হয়েছে ওয়েবসাইটে। শিক্ষা মহলের অনেকের অভিযোগ, কারচুপি যা করার, তা করে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে এসএসসি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন